থাইল্যান্ডের জঙ্গলে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের গণকবর!

দক্ষিণ থাইল্যান্ডের সাদাও এলাকার জঙ্গলে গণকবর থেকে
দেহাবশেষ উদ্ধার করেন উদ্ধারকর্মী ও ফরেনসিক কর্মকর্তারা
থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের একটি গভীর জঙ্গলে অভিবাসীদের গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আটটি কঙ্কাল। এগুলো বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অভিবাসীদের বলে ধারণা করা হচ্ছে। এলাকাটি থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় দুজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের একজন বাংলাদেশি অথবা মিয়ানমারের নাগরিক। খবর এএফপির।
মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী শংখলা প্রদেশের সাদাও এলাকার জঙ্গলে ওই গণকবর থেকে গতকাল শনিবার উদ্ধার করা হয় তিনটি কঙ্কাল। এর আগের দিন আরও পাঁচজনের দেহাবশেষ উদ্ধার করেন ফরেনসিক বিভাগের কর্মীরা।
এ বিষয়ে থাই পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে, প্রত্যন্ত ওই এলাকায় পাচারকারীদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। কয়েক দিন আগে হয়তো পাচারকারীরা এলাকাটি ছেড়ে চলে যায়। নৌকায় করে আসা মিয়ানমার ও বাংলাদেশি নাগরিকদের ‘এই জঙ্গলের কারাগারে’ আটকে রাখা হতো। পরে তাঁদের স্বজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা হতো। মুক্তিপণ দিতে না পারা অনেকে বিন্দদশায় অনাহারে ও রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
থাইল্যান্ডের পুলিশপ্রধান সোমাইয়ুত পুমপানমাউং বলেন, স্থানীয় এক ব্যক্তি জঙ্গল থেকে মাশরুম সংগ্রহ করতে গিয়ে কবরগুলোর সন্ধান পান। পরে তিনি পুলিশকে খবর দিলে শুক্রবার থেকে উদ্ধারকাজ শুরু হয়। স্থানটি প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় উদ্ধারকাজ বিলম্বিত হচ্ছে। একই এলাকায় কবরের মতো দেখতে অন্তত ৩২টি জায়গা রয়েছে। সেখানে একজন নাকি একসঙ্গে বহু মানুষকে কবর দেওয়া হয়েছে, তা এসব স্থান খুঁড়ে দেখতে হবে। সেই চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া এই এলাকায় আরও অন্তত ২০টি কবর থাকতে পারে। সেগুলোর অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা দুজনের পুরো পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাঁদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালটির এক চিকিৎসক বলেছেন, একজনের বয়স ২৫ ও অন্যজনের ৩৫ বছর। দুজনেই ওই ঘাঁটিতে কয়েক মাস বন্দী ছিলেন। এ সময় জ্বরে ভুগেছেন। তাঁদের প্রায় দিনই না খেয়ে থাকতে হতো। ৩৫ বছরের ব্যক্তিটিকে উদ্ধারের আগে দুই দিন কোনো কিছুই খাননি। তিনি এতটা দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন যে হাঁটতে পারতেন না।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিকটতম সড়ক থেকে মাত্র ৪০ মিনিট হাঁটলেই পাচারকারীদের ওই ঘাঁটি ছিল। সেখানে পাচারকারীদের গোপন আরও অনেক আস্তানা থাকতে পারে। পাচারকারীদের হাতে আটক বন্দীরা অনাহারে ও রোগে মারা যায় বলে মনে করা হচ্ছে। সংগঠনটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, গণকবরের সন্ধান পাওয়ার এ ঘটনায় জাতিসংঘের সংশ্লিষ্টতায় স্বাধীন তদন্ত হওয়া দরকার।
মিয়ানমারের সংখ্যালঘু হাজারো রোহিঙ্গা মুসলিম অভিবাসী প্রায়ই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে সাগর পাড়ি দেন। এই দলে অনেক বাংলাদেশিও থাকেন।

No comments

Powered by Blogger.