রাজনৈতিক সংকট বিপজ্জনক মোড় নিয়েছে

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ওপর হামলার ঘটনায় বাংলাদেশে ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট এক বিপজ্জনক নতুন মোড় নিয়েছে। সোমবার ঢাকায় এক মেয়র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় খালেদার গাড়িবহরে হামলা ও গুলি চালানো হয়েছে। তাকে হত্যার উদ্দেশে গুলি চালানো হয়। এ সময় তার এক দেহরক্ষী সহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। লোহার রড, লাঠি ও ইটপাটকেল দিয়ে আক্রমণ চালায় দুর্বৃত্তরা। দ্রুত তার গাড়িবহর স্থান ত্যাগ করার সময় গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। গতকাল বিশ্বের প্রায় সব মিডিয়ায় প্রচারিত খবরে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, এ হামলার ঘটনায় দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে, যেখানে পরস্পর বিদ্বেষী রাজনীতি চলছে কয়েক দশক ধরে। বার্তা সংস্থা এএফপি’র রিপোর্টের শিরোনামে বলা হয়- ‘বাংলাদেশে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার গাড়িতে গুলি’। এতে বলা হয়, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সচিব শিমুল বিশ্বাস বলেছেন, খালেদা জিয়া সোমবার কাওরানবাজারে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় তাকে বহনকারী গাড়িতে গুলি করা হয়েছে। টেলিভিশন ফুটেজে দেখা গেছে, বেশকিছু লোক তার গাড়িবহরে হামলা চালাচ্ছে। এ মাসের শেষের দিকে হতে যাচ্ছে সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচনে খালেদার ওপর যে হামলা হয়েছে তা গভীর রাজনৈতিক সঙ্কট ভয়াবহ এক নতুন মোড় নিয়েছে। শিমুল বিশ্বাস বলেন, খালেদা জিয়া প্রাণে বেঁচেছেন। কারণ, তার গাড়িটি বুলেটপ্রুফ। তবে তার গাড়িতে রয়েছে সেই বুলেটের চিহ্ন। পুলিশের মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, তারা গুলির অভিযোগ তদন্ত  করে দেখছেন। কিছু লোক বলেছেন যে, ঘটনার সময় তারা গুলির শব্দ শুনেছেন। মিডিয়ার রিপোর্টে বলা হচ্ছে, হামলাকারীরা সরকারপন্থি স্লোগান দিয়ে হামলা করেছে।  তবে এ জন্য জাহাঙ্গীর আলম দায়ী করেছেন খালেদা জিয়ার সমর্থকদের। তিনি বলেন, কালো পতাকা বহন করে প্রতিবাদ জানানোর সময় তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ওদিকে শিমুল বিশ্বাস বলেছেন, ওই হামলায় খালেদা জিয়ার কমপক্ষে ৬ জন নিরাপত্তা রক্ষী ও কয়েকজন সমর্থক আহত হয়েছেন। পরে তাদেরকে দেখতে হাসপাতালে যান খালেদা। এ ঘটনার প্রতিবাদে তার দল বিএনপি আজ ঢাকা ও চট্টগ্রাম বাদে সারা দেশে হরতাল আহ্বান করেছে। বাংলাদেশে যে ভয়াবহ রাজনৈতিক সঙ্কট বিরাজ করছে তার এক নতুন মাত্রা এটি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের শিরোনাম- নির্বাচনী প্রচারণাকালে বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেত্রীর ওপর হামলা। তবে তিনি আহত হন নি। এতে বলা হয়, লোহার রড হাতে নিয়ে দুর্বৃত্তরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রচারণার গাড়িবহরে হামলা করেছে। পরে গুলি করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটি রাজনৈতিক উত্তেজনায় অস্থিতিশীল। সেই অবস্থাকে আবার নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে এই হামলা। এতে বলা হয়, গত বছর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন জালিয়াতির অভিযোগে বর্জন করে বিএনপি। তারপর বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচনের দাবি জানায়। এ দাবি প্রধানমন্ত্রী প্রত্যাখ্যান করেন। উল্টো তিনি বিরোধী দলীয় মূল নেতাদের গ্রেপ্তার করে ও সরকারের সমালোচনা করা মিডিয়ার ওপর দমনপীড়ন চালানোর মাধ্যমে তিনি ক্ষমতাকে আরও শক্তভাবে আঁকড়ে ধরেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার মধ্যে বিরোধ বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরাজ করছে বছরের পর বছর। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মাসের শুরুর দিকে দুটি দুর্নীতির মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন। কোন অন্যায় করেন নি বলে দাবি করেছেন তিনি। বলেছেন, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বৃটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের শিরোনাম- নির্বাচনী প্রচারণাকালে বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেত্রীর ওপর দুর্বৃত্তরা হামলা করেছে। এতে বলা হয়, খালেদা জিয়ার ওপর হামলার ঘটনা তদন্ত করছে বাংলাদেশ পুলিশ। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সচিব শিমুল বিশ্বাস বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িতেও গুলি করা হয়েছে। তবে এটি বুলেটপ্রুফ হওয়ায় কোন ক্ষতি হয় নি। হামলায় আহত হয়েছেন খালেদা জিয়ার এক দেহরক্ষী ও অন্য ৫ জন। পুলিশ মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, কিছু লোক গুলির শব্দ শুনেছে। এ বিষয়টি তারা তদন্ত করছে না। তবে সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, খালেদা জিয়ার বিএনপি দেশে যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে তাতে যারা ক্ষুব্ধ তারাই তার ওপর হামলা করেছে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতায় বাংলাদেশে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এসব সহিংসতা পুলিশ সরাসরি গুলি করে দমন করার চেষ্টা করেছে। তবে বিচারহীন অবস্থায় নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা অনেক মানুষকে আটক করে রেখেছে বলেও খবর পাওয়া যায়। অনলাইন আল জাজিরার রিপোর্টের শিরোনাম- নেত্রীর ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশের বিরোধী দল। এতে বলা হয়, বিরোধী দল বিএনপি সরকার সমর্থিতদের ওই হামলার জন্য দায়ী করেছে। তারা বলেছে, খালেদা জিয়াকে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই ওই হামলা চালানো হয়েছিল। গতকাল তার সমর্থকরা তার সরকারি নিরাপত্তা প্রত্যাহার করায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার ওপর ওই হামলাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপ্রয়োজনীয় একটি নাটক হিসেবে মন্তব্য করেছেন। এতে আগামী ২৮শে এপ্রিল অনুষ্ঠেয় সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিএনপি প্রধানের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দলের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ফজলে এলাহি আকবর বলেছেন, খালেদা জিয়া যখন তার গাড়ির ভেতর তখন তার গাড়িতে গুলি করা হয়েছে। তার গাড়ি ছিল বুলেটপ্রুফ। তাই তার কোন ক্ষতি হয় নি। তিনি এ ঘটনাকে হত্যাচেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন। ফজলে এলাহি আকবর বলেন, খুব কাছ থেকে খালেদা জিয়ার বুলেটপ্রুফ গাড়িতে গুলি করা হয়। ওই গাড়িতে এখনও বুলেটের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। টেলিভিশন ফুটেজে দেখা গেছে, বেশকিছু লোক কাওরানবাজারে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করে। তারা ইটপাথর, রড ও লাঠি দিয়ে ভাঙচুর করে।

No comments

Powered by Blogger.