সীমান্তে উত্তেজনা ও রোহিঙ্গা সমস্যা by এম সাখাওয়াত হোসেন

প্রায় ১৫ বছর পর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পুনরায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে৷ এর আগে ১৯৯১ সালের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নাইক্ষ্যংছড়ির রেঙ্গুপাড়া বিওপিতে রাতের অন্ধকারে মিয়ানমারের নাসাকা আধা সামরিক বাহিনী তৎকালীন বিডিআরের বিওপিতে অতর্কিতে হামলা চালিয়েছিল৷ ওই হামলায় বিডিআরের একজন সদস্য নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিলেন৷ লুট হয়েছিল বিওপির বেশ কিছু অস্ত্র, যা পরে বাংলাদেশের চাপে মিয়ানমার সরকার ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছিল এবং ওই ঘটনা ভুল–বোঝাবুঝির কারণে হয়েছিল বলে দুঃখ প্রকাশ করেছিল৷
ওই সময়ে ওই ঘটনার পরপরই বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল৷ সেনাবাহিনীকে সমর্থন জোগাতে প্রস্তুত ছিল বাংলাদেশ বিমানবাহিনী এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কয়েকটি রণতরি৷ স্বাধীন বাংলাদেশে সেটাই ছিল কোনো আন্তর্জাতিক সীমান্তে বাংলাদেশের সেনাসমাবেশ৷ ওই ঘটনার মূলে ছিল মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলের সংখ্যালঘু মুসলমান জনগোষ্ঠী, যারা রোহিঙ্গা নামে পরিচিত৷ প্রায় তিন মাস পর বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের নির্দেশে সামরিক বাহিনী অপসারিত হওয়ার পরপরই মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চল, বিশেষ করে সীমান্ত নিকটবর্তী বুথিডং ও মঙ্গডোও এলাকা থেকে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল, যার প্রায় সিংহভাগ এখনো বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় উদ্বাস্তু শিবিরে আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে অবস্থান করছে৷

১৯৯১ সালের ওই ঘটনার পেছনেও, মিয়ানমারের ভাষ্য মোতাবেক, ছিল রোহিঙ্গা ইনসারজেন্ট বা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় দল রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)৷ রেঙ্গুপাড়া বিওপিতে হামলার নেপথ্য কারণ হিসেবে মিয়ানমার থেকে বলা হয়েছিল, ১৯৯১ সালের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আরএসওর একটি দল রেঙ্গুপাড়ার দক্ষিণ-পূর্ব মিয়ানমারের একটি সীমান্তচৌকিতে হামলা করে ক্ষয়ক্ষতির প্রত্যুত্তরে৷ আরএসও ক্যাম্পের বদলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিওপিতে হামলা চালিয়েছিল৷ যা-ই হোক, ওই সময়ে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে সামরিক উত্তেজনা প্রশমিত হলেও ‘রোহিঙ্গা’ ইস্যু এখনো তেমনই রয়ে গেছে৷
ওপরের প্রেক্ষাপট এ কারণে বর্ণনা করা হলো, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের প্রায় ২০০ মাইল সীমান্তে থেকে থেকে যে কারণে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, তার কিছু সম্যক ধারণা পেতে৷ বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সময় সময়ের উত্তেজনার মূলে রয়েছে উত্তর রাখাইন অঞ্চলের মিয়ানমার মুসলমান-রোহিঙ্গাদের অবস্থান নিয়ে৷ উল্লেখ্য, বিগত ৬০ বছরেরও অধিক সময় এ অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের প্রথমে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির দাবি, পরে স্বাধিকার ও নাগরিকত্ব নিয়ে একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে কথিত সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে থেকে থেকে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে৷ মিয়ানমার সরকারের তরফ থেকে বর্তমানে প্রতিবারই বাংলাদেশকে এই বিদ্রোহীদের সহযোগিতা ও আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উত্থাপিত হয়ে আসছে৷ বর্তমানে উত্তর আরাকানে রোহিঙ্গা নিধনের এবং বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের পুনর্বাসনের যে চেষ্টা চলছে, তার বিরোধিতায় সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছে প্রায় সাতটি পরিচিত-অপরিচিত গোষ্ঠী৷ এদের মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ গোষ্ঠী বলে বিবেচিত আরএসও৷
২০১৪ সালের ২৮ মে সীমান্ত পিলার ৫১-৫২ সন্নিকটে বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা ও বিজিবির তথ্যমতে, নিয়মিত টহল দলের ওপর মিয়ানমারের নাসাকা অন্তর্ভুক্ত বর্ডার গার্ড পুলিশ বা বিজিপি বিনা উসকানিতে অতর্কিতে হামলা করেছে৷ এ হামলায় শহীদ হয়েছেন নায়েক মিজানুর রহমান, যিনি একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান৷ তাঁর বাবা নায়েক আবদুল হাফিজ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন৷ শহীদ নায়েক মিজানুর রহমানের মৃতদেহ প্রায় দুই দিন জোর কূটনৈতিক তৎপরতার পর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ফেরত দিয়েছিল৷ পরে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়৷
যদিও কেন এই অতর্কিতে হামলা, তার বিশদ ব্যাখ্যা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ এখনো খোলাসা করেনি বা তেমন তথ্য প্রকাশিত হয়নি; তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে বলে তথ্যে প্রকাশ৷ অপর দিকে, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে৷ কী নিয়ে বা কী কারণে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে, তার ব্যাখ্যা তিনি দেননি৷ কাজেই মিয়ানমারের এ ধরনের আচরণের কারণ পরিষ্কার নয়৷ অপর দিকে, সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র পাওয়া যায় মিয়ানমারের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য থেকে৷
মিয়ানমার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের, নেপিডোর ভাষ্যমতে, গত ১৭ মে মঙ্গডোও অঞ্চলের মাইওমা পুলিশ ফাঁড়ির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সীমান্ত পিলার ৫২, ২৮ মের ঘটনাস্থলসংলগ্ন বানডোলা চৌকির দিকে যাওয়ার পথে সন্দেহভাজন আরএসওর ৪০ জন রোহিঙ্গা বিদ্রোহীর আক্রমণে টহল দলের চারজন পুলিশ সদস্য নিহত ও দুজন নিখোঁজ হন এবং দলের প্রধান ক্যাপ্টেন নওয়ে উ মুয়াঙ্গ গুরুতরভাবে আহত হন৷ পরে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা বাংলাদেশের দিকে পালিয়ে যায়৷ এ ঘটনার পর থেকে ওই অঞ্চলে বিজিপির শক্তি বৃদ্ধি করা হয় এবং রাখাইন অঞ্চলের পার্লামেন্ট সদস্য মি. ক্লিন স ওয়েই মিয়ানমার পার্লামেন্টে ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানান৷ তাঁর এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গডোও অঞ্চলের সেনাবাহিনীকেও সতর্ক করে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়৷
মিয়ানমার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে, এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার দিন কয়েকজন কথিত বিদ্রোহী ভিন্ন রঙের ইউনিফর্মে সীমান্ত অতিক্রম করলে বিজিপি গুলি ছুড়লে একজনের মৃত্যু হয়, অপর একজন পালিয়ে যায়৷ তারা (মিয়ানমার মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে) কোনোভাবেই বিজিবির সদস্য বলে শনাক্ত হয়নি৷ কারণ, তাদের পরিধেয় ইউনিফর্ম বিজেবির অনুরূপ ছিল না, এমনকি কাঁধে চিহ্নও ছিল না৷ এ বিষয় নিয়ে ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কাছে কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানায় মিয়ানমার সরকার৷ অপর দিকে, বাংলাদেশের প্রতিবাদকে অগ্রহণযোগ্য ও বাস্তব ঘটনাবিবর্জিত বলে মতামত ব্যক্ত করে৷ এ বক্তব্য বাংলাদেশের অনলাইন পত্রিকা ‘বিডি নিউজ ২৪ ডট কম’-এর ২ জুন দুপুরের সংস্করণেও প্রকাশিত হয়েছে, তবে বাংলাদেশ সরকারের কোনো মন্তব্য প্রকাশিত হয়নি৷
এ তথ্য যদি মিয়ানমার সরকারের ভাষ্য হয়, তবে প্রশ্ন থাকে, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের ৫২ নম্বর পিলার সন্নিকটে আরএসওর কথিত আক্রমণ এবং হতাহত হওয়ার ঘটনার কোনো গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিজিবি অথবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ছিল কি না? এ ধরনের প্রতিবেদন থাকলে অবশ্য বিজিবির সতর্কতাসহ অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে ওই অঞ্চলে শক্তি বৃদ্ধি করা যেত এবং উচিত হতো৷ ওই ঘটনার পরপর মিয়ানমারের মঙ্গডোও অঞ্চলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় সামরিক শক্তি বৃদ্ধির সংবাদেও বাংলাদেশের তরফ থেকে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা যেত৷ এসব তথ্য প্রকাশিত না হওয়ায় ২৮ মে বিজিবির টহল দলের ওপর মিয়ানমার বিজিপির অতর্কিত হামলার কারণ জনগণের কাছে স্পষ্ট নয়৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বিশদ তদন্ত এবং এর বিবরণ সংসদের মাধ্যমে জনগণের জ্ঞাতার্থে প্রকাশ করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে সরকারের ভূমিকা জনসমর্থন অর্জন করবে৷

বাংলাদেশের আলোচিত অঞ্চলে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তকে খুব স্বাভাবিক বলে আখ্যায়িত করা যায় না৷ প্রায় সময়ই উত্তেজনা বিরাজমান, যার কেন্দ্রে রয়েছে উত্তর আরাকানের সীমান্তবর্তী মিয়ানমার অঞ্চলে রোহিঙ্গা সমস্যা৷ হালের জনশুমারি বর্জন করছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী৷ কারণ, ওই জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গা নয়, বরং বাঙালি হিসেবে শুমার করতে চায় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ৷ আর এ বিষয় নিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারের জাতিগত ও ধর্মগত উত্তেজনা বিরাজমান৷
তথ্যে প্রকাশ, মিয়ানমার ২৮ মের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শুধু সেনাসংখ্যাই বৃদ্ধি করেনি, বরং বাংলাদেশসংলগ্ন অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজের চলাচলও বৃদ্ধি করেছে৷ অপর দিকে, বেশ কয়েক বছর আগেই সিতওয়ে, পুরোনো আকিয়াব বন্দর শহরের বিমানঘাঁটি সংস্কার করে মিয়ানমার বিমানবাহিনী ১২টি মিগ-২৯বি জঙ্গি বিমান মোতায়েন করেছে৷ প্রতিরক্ষা জোরদার করার পাশাপাশি সীমান্তের প্রায় ৭০ মাইল কাঁটাতারের বেষ্টনী সম্পন্ন করেছে৷ বাকি অংশেও বেষ্টনী গড়ে তোলার পথে রয়েছে৷ তৈরি করেছে সীমান্ত এলাকায় সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের পথ৷ টহলের এবং ত্বরিতগতিতে শক্তি বাড়ানোর জন্য সীমান্ত যোগাযোগব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি করেছে৷ টহল ও পর্যবেক্ষণ চৌকিগুলোর মধ্যে যোগাযোগের জন্য কাঁটাতারের বেষ্টনীসহ উত্তর-পূর্বে চওড়া পাকা রাস্তার ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়েছে৷ এক কথায়, বর্তমানে মিয়ানমার বাংলাদেশের সীমান্তে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাব্যবস্থা তিন স্তরে উন্নীত করেছে৷ পেছনে রয়েছে সেনাচৌকি, বিশেষ করে বুথিডংয়ের মঙ্গডোও অঞ্চলে আঞ্চলিক সেনাছাউনি গড়ে তোলা হয়েছে৷
মিয়ানমার ১৯৯২ সালের পর থেকে সার্বিকভাবে শুধু সামরিক শক্তি বৃদ্ধিই নয়, বাংলাদেশ সীমান্তে প্রতিরক্ষার যে ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, সে তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ হালে বর্তমান সরকার ওই অঞ্চলে একটি নতুন সেনাছাউনি গড়ে তোলার কাজ হতে নিয়েছে৷ তবে সীমান্তরক্ষী বিজিবির বিওপিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির কোনো পরিকল্পনা নিয়েছে কি না, জানা যায়নি৷ এক্ষুনি যা প্রয়োজন, অতিরিক্ত সেনাছাউনি, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে শুধু বিজিবির শক্তি বৃদ্ধিই নয়, প্রতিটি বিওপির সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন৷ যদিও কাজটি ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য কিন্তু দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় দেশের প্রতিরক্ষা ও জনগণের নিরাপত্তা জন্য সরকারের প্রাথমিক দায়িত্বের মধ্যে এ কাজ বর্তায়৷ শুধু পশ্চিম থেকে পূর্ব সীমান্তচৌকি বা বিওপিগুলোর পার্শ্বাভিমুখী যোগাযোগব্যবস্থাই নয়, এসব বিওপিকে সব সময় ও সব মৌসুমে সরবরাহের জন্য চট্টগ্রাম-টেকনাফ মহাসড়কের সমান্তরাল বান্দরবান অঞ্চল থেকে দক্ষিণমুখী সড়কযোগে নাইক্ষ্যংছড়িসহ প্রস্তাবিত সীমান্তসড়কের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনার জন্য সড়কের পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন৷ এসবই সীমান্ত ব্যবস্থাপনা জোরদার করার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ৷
গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের উন্নতি অবশ্যই প্রয়োজন৷ তবে সম্পর্কের উন্নতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা যেমন প্রয়োজন, তেমনি সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনা জোরদার করার বিকল্প নেই৷ ১৯৯২ সালের মিয়ানমার আর ২০১৪ সালের মিয়ানমারের মধ্যে প্রচুর তফাত রয়েছে৷ মিয়ানমার এখন আরও মারমুখী বলে মনে হয়৷ সমুদ্রসীমা সমস্যার নিষ্পত্তি হলেও সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, যা মিয়ানমারের ভাষায় উনদ্বীপ, হাতছাড়া হওয়ার বিষয়টি মিয়ানমারের কট্টরপন্থী সামরিক নেতারা সহজে মেনে নেয়নি বলে বিভিন্ন তথ্যে প্রকাশ৷ তার পরও বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিজয় উৎসব ইয়াঙ্গুনের আঁতে ঘা লেগেছে বলে মনে হয়৷ মিয়ানমার বিগত দুই দশকে সামরিক শক্তিতে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে গিয়েছে, তা সীমান্ত তৎপরতা থেকে অনুমেয়৷ বিষয়টি সরকার ও জাতীয় নিরাপত্তা বিশারদদের মনে রাখা উচিত৷
বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন দুটি দেশের সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির জন্য অত্যাবশ্যক, তবে তা কোনোভাবে জাতীয় নিরাপত্তার বিনিময়ে নয়৷ মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক উন্নয়নের অন্যান্য খাতে কোনো সমস্যা না থাকলেও যত দিন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সমস্যা মিয়ানমার শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান না করবে, তত দিন মিয়ানমার-বাংলাদেশ সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার নয়৷ আর এ সমস্যা আজকের নয়৷ মিয়ানমার স্বাধীন হওয়ার আগ থেকেই ওই অঞ্চলে বিদ্রোহীদের তৎপরতা শুরু হয়েছিল, যা আজও অব্যাহত রয়েছে৷ রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও সীমান্ত নিরাপত্তার অন্তরায়৷ প্রয়োজনে এ সমস্যার সমাধানকল্পে দ্বিপক্ষীয় ব্যবস্থার বিকল্প নিয়ে ভাবতে হবে৷ আন্তর্জাতিক সাহায্যের প্রয়োজন হলে সেই পথও অবলম্বন করতে হবে৷ এ সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা অব্যাহত থাকবে৷
এম সাখাওয়াত হোসেন: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও কলাম লেখক৷
hhintlbd@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.