নির্বাচনী আচরণবিধি-সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে

আগামী সংসদ নির্বাচন কোন ধরনের সরকার পদ্ধতির অধীনে অনুষ্ঠিত হবে- তা এখনো নিশ্চিত নয়। বিগত কয়েকটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়ায় মন্ত্রী থাকাকালে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নির্বাচনী প্রচারকাজে অংশ নেওয়ার প্রশ্নটি ছিল না।
আগামী নির্বাচন যদি সে রকম কোনো সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়, তাহলেও এ প্রশ্নটি গৌণই থেকে যাবে। কিন্তু যদি দলীয় সরকারের অধীনে হয়, তখনই ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী বা তাঁদের সমমর্যাদার সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের নির্বাচনী প্রচারকাজে অংশ নেওয়ার বিষয়টি এসে যাবে। সম্ভবত সেই চিন্তা থেকেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) আচরণবিধি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। তাতে প্রস্তাব করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মনোনীত ২০ জন মন্ত্রী নির্বাচনী প্রচারকাজে অংশ নিতে পারবেন। আর তখনই প্রশ্ন এসে যায়, তাঁরা সরকারে থাকা অবস্থায় সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রচারকাজে অংশ নিলে এবং বিরোধী দল এসব সুবিধাবঞ্চিত থাকলে নির্বাচনপূর্ব লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে কিভাবে? আর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকলে নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা কি প্রশ্নবিদ্ধ হবে না?
আগামী সংসদ নির্বাচন এখনো বেশ কিছু যদি-কিন্তুর ওপর দাঁড়িয়ে আছে। একই কারণে নির্বাচন কমিশনও কিছুটা বেকায়দা অবস্থায় রয়েছে। আগের আচরণবিধিতে ছিল মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী কিংবা তাঁদের সমান পদমর্যাদার ব্যক্তিরা নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাঁদের অনেকেরই নিজে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া কিংবা দলের নির্বাচনী প্রচারেও অংশ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে। আর এটি না করা হলে অর্থাৎ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা নির্বাচনী প্রচারে অংশ না নিতে পারলে এবং বিরোধীদলীয় নেতারা সবাই নির্বাচনে অংশ নিলে সেটিও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট করবে। তাই ক্ষমতাসীন দলের নেতাদেরও এ সুযোগ দিতে হবে। প্রায় সব গণতান্ত্রিক দেশেই এ নিয়ম বিদ্যমান। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও একই নিয়ম রয়েছে। তবে সেখানে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বাধা-নিষেধ রয়েছে। আমাদেরও আচরণবিধিতে সে বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করতে হবে। তা না হলে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা প্রচারকাজে অংশ নেবেন এবং তা বিরোধী দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট করবে। কিন্তু সবার আগে আমাদের নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন, কোন ধরনের সরকার পদ্ধতির অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর সেভাবেই নির্বাচন কমিশনকে পরবর্তী প্রস্তুতি নিতে হবে।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী অক্টোবরেই যদি বর্তমান সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়, তাহলে হাতে সময় খুবই কম। দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে আগামী নির্বাচন ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। সে অবস্থায় দেশ সংঘাত-সংঘর্ষের দিকে এগিয়ে যেতে পারে- যা আমাদের কারোই কাম্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.