পবিত্র কোরআনের আলো-হাদিসও অহি, এতে সন্দেহের অবকাশ নেই

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। ০১. আলিফ লা-ম মী-ম রা-, তিলকা আয়া-তুল কিতা-বি, ওয়াল্লাযী- উনযিলা ইলাইকা মিঁর রাব্বিকাল হাক্কু ওয়া লা-কিন্না আকছারান না-সি লা- য়ু'মিনূন। সুরা : রা'আদ।
অনুবাদ : পরম করুণাময় অতিশয় দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু। ১. আলিফ লাম মীম রা- এগুলো (আল্লাহর কিতাবের) আয়াত। (হে নবী!) তোমার রবের পক্ষ থেকে যা কিছু নাজিল করা হয়েছে, তা সত্য। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তাতে ইমান আনছে না।
তাফসির : আলিফ লাম মীম রা- এগুলো খণ্ডবর্ণ। এসবের প্রকৃত অর্থ ও রহস্য একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন। উম্মতকে এসবের অর্থ বলা হয়নি। সাধারণ মানুষের পক্ষে এসব বিষয়ে অনুসন্ধানী হওয়াও উচিত নয়। বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয়, প্রিয় রাসুল মুহাম্মদ (সা.) মিরাজের রাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে ৯০ হাজার কালাম পেয়েছিলেন। যার একটি অংশ অর্থাৎ ৩০ পারার কোরআন শরিফ আলেম-ওলামাদের সংরক্ষণে আছে। সেগুলোর পড়াশোনা-গবেষণায় তাঁরা মগ্ন আছেন। বাকি ৬০ হাজার কালাম তাঁদের জ্ঞানের বাইরে। তাঁদের এমন উদ্ভট দাবির সমর্থনে কেউ কেউ পবিত্র কোরআন শরিফের এসব খণ্ডবর্ণকেও পেশ করেন। এগুলো নিঃসন্দেহে তাঁদের গোমরাহির আলামত। কারণ এত গোপন বিষয় যদি তাঁরা বুঝে থাকেন, তাহলে প্রকাশ্যে যে ৩০ পারার কোরআন শরিফ আমাদের সামনে মজুদ রয়েছে, এর আলোকে সংশ্লিষ্ট লোকেরা কেন নিজেদের জীবন পরিচালনা করে না? কেন তাদের বাহ্যিক জীবনযাত্রায়ও কোরআন শরিফের স্পষ্ট নির্দেশনার লঙ্ঘনও ভুরি ভুরি নজরে পড়ে? সাধারণ মুসলমানের উচিত, ওই সব মানুষের মনগড়া গোমরাহির বক্তব্যে বিভ্রান্ত না হয়ে কোরআন শরিফ অধ্যয়ন করা। এর আলোয় নিজেদের জীবন সাফল্যমণ্ডিত করে তোলা। তাহলেই দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানের শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ নিশ্চিত হবে। খণ্ডবর্ণগুলোর পেছনে অযথা সময় নষ্ট করার প্রয়োজন নেই। এগুলোর ভেতরে আমাদের জন্য বিশেষ কিছু লুকানো থাকলে অবশ্যই প্রিয় রাসুল (সা.) তা আমাদের শিক্ষা দিতেন। নিশ্চয়ই তা আমরা মহান সাহাবায়ে কেরামের সূত্রে অবগত হতাম।
* এখানে 'তিলকা আয়াতুল কিতাবি' বলে কোরআন শরিফ বোঝানো হয়েছে। 'ওয়াল্লাযী উনযিলা ইলাইকা মিঁর রাব্বিকা' বলে কারো কারো মতে, কোরআনকেই বোঝানো হয়েছে। তবে বেশির ভাগ মুফাসসিরে কোরআনের অভিমত হলো, এর দ্বারা এমন সব অহি বোঝানো হয়েছে, যা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কোরআন ছাড়া অবতীর্ণ হয়েছে। কোরআনের বাইরেও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে অহি অবতীর্ণ হয়েছে- এ বিষয়ে কারো কোনো দ্বিমত নেই। খোদ কোরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে, 'অহির মাধ্যম ছাড়া নিজের খেয়াল-খুশি মোতাবেক রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো কিছু বলেননি।' কোরআনের বাইরেও রাসুলুল্লাহ (সা.) যেসব বিধিবিধান জারি করেছেন, সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত অহির ভিত্তিতেই করেছেন। পার্থক্য হলো, কোরআনের যুক্ত হওয়া অহি নামাজে তিলাওয়াত করা হয়, বাকিগুলো তাতে তিলাওয়াত করা হয় না। কোরআনের শব্দ ও অর্থ উভয়টি আল্লাহর পক্ষ থেকে হুবহু অবতীর্ণ হয়েছে, হাদিসের বিধি-বিধানগুলোর মর্ম আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। হুবহু শব্দগুলো অবতীর্ণ হয়নি। এ কারণেই হাদিস নামাজে তিলাওয়াত করা হয় না। তাই এখানে বলা হয়েছে, হজরত মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর ওপর অবতীর্ণ অহির ওপর সন্দেহ করার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। বেশির ভাগ মানুষ এসব বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা না করার ফলে ইমান আনে না।
তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন অবলম্বনে হাসানুল কাদির

No comments

Powered by Blogger.