অবশেষে জয়ের দেখা

জিম্বাবুয়ে: ৪৮.২ ওভারে ১৯৯
বাংলাদেশ: ৩৬.৪ ওভারে ২০৩/৪
ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী
ভবিষ্যতে জিম্বাবুয়ে সফরের সূচি ঠিক করার সময় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের উচিত হবে বুলাওয়েতে বেশি ম্যাচ রাখার অনুরোধ করা। দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট ম্যাচের ভেন্যু বলেই কিনা কুইন্স ক্লাব মাঠটি বাংলাদেশের জন্য বড় পয়া। হারারেতে হারতে হারতে বিপর্যস্ত দল বুলাওয়েতে এসে তাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পেল।
ওয়ানডে সিরিজ ‘শেষ’ হয়ে গেছে হারারেতেই। বৃহত্তর ছবিতে এই জয়ের তাই কোনো প্রভাব নেই। তাতেও কি আর এর মহিমা কমে? গলায় পরাজয়ের পর পরাজয়ের মালা জড়ানো একটা দলকে প্রায় ভুলে যাওয়া আনন্দ উপহার দিল এই জয়। আসল মহিমাটা আপনিও জানেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার যে আশঙ্কা মুখ ব্যাদান করে তাকিয়ে ছিল, সেটিকে তো উড়িয়ে দেওয়া গেছে। এই জয়ে তাই যত না আনন্দ, তার চেয়ে বেশি স্বস্তি।
দুই বছর আগে এই বুলাওয়েতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজের চার ম্যাচই জিতেছিল বাংলাদেশ। সাকিব-আশরাফুলরা তখন ‘উই লাভ বুলাওয়ে’ জাতীয় কিছু হয়তো বলেছিলেন, স্থানীয় সাংবাদিকেরা এখনো তা মনে রেখেছেন। ৪০ রানে জিম্বাবুয়ের প্রথম উইকেট পড়ার আগ পর্যন্ত প্রেসবক্সে ‘এবার দেখব, বুলাওয়েকে কেমন ভালোবাসো’ শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
সিবান্দা-টেলর যেভাবে খেলছিলেন, তাতে কথাটা হেসে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না। অস্বস্তির একটা কাণ্ড যে ঘটে গেছে ম্যাচ শুরুর আধঘণ্টা আগেই—টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছেন সাকিব। কুইন্স ক্লাবের উইকেট চিরদিনই ব্যাটসম্যানদের দিকে তাকিয়ে ‘চিরসখা হে’ গেয়ে ওঠে। এখানে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করাই নিয়ম। সাকিবের ওই সিদ্ধান্তের একটাই ব্যাখ্যা—হারতে হারতে তলানিতে চলে যাওয়া আত্মবিশ্বাসের একটা দলের প্রথমে ব্যাটিং করার সাহস থাকে না। এমনকি ব্রায়ান ভিটরিকে বিশ্রাম দেওয়া হলেও।
হারারের উইকেট স্পিনারদের জন্য কিছুই ছিল না। এখানে বড় টার্ন না থাকলেও হাতে ফ্লাইট আর লেংথের বৈচিত্র্য থাকলে ব্যাটসম্যানদের একটু ভোগানো সম্ভব। বাংলাদেশের স্পিনাররা ভোগালেনও। যদিও সাকিব আল হাসানের বোলিং এই ম্যাচেও দুশ্চিন্তা বাড়ানোর কাজটাই করল। টানা দুই ম্যাচে মাত্র ৬ ওভার করে করলেন। কাল একটি উইকেট পেলেও সাকিবকে কখনোই সাকিবের মতো লাগেনি। একটা কারণ অবশ্য অনুমান করাই যায়। বলের সিমে ঘষা খেতে খেতে স্পিনিং ফিঙ্গারে একটা ক্ষত হয়ে গেছে। বল ধরতেই সমস্যা হচ্ছে তাঁর।
কাল সেটি বড় কোনো সমস্যা হয়নি অন্য স্পিনাররা কাজ চালিয়ে দেওয়ায়। আসল কাজটা অবশ্য করেছেন এক পেসার। স্কোর বোর্ডে ৪ উইকেটে ১৮০ রান নিয়ে ৪৪তম ওভারে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে নিল জিম্বাবুয়ে। প্রথম তিন ম্যাচে মাত্র ১৭ রান করা টেলরের সেঞ্চুরি হয়ে গেছে ততক্ষণে। সঙ্গে আছেন পাওয়ার প্লের আদর্শ ব্যাটসম্যান চিগুম্বুরা। ২৬০-৭০ খুবই সম্ভব বলে মনে হচ্ছিল। হয়নি রুবেলের কারণেই। পরপর দুই ওভারে দুটি করে উইকেট নিয়ে পাওয়ার প্লেকে রানপ্রসবিনীর বদলে জিম্বাবুয়ের দুঃস্বপ্ন বানিয়ে দিয়েছেন রুবেল। মাত্র ১৬ রানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ে তাই ১৯৯ রানে অলআউট!
ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচ যেমন প্রথম ইনিংসের পরই শেষ হয়ে গিয়েছিল, এটিও একরকম তাই-ই। এই উইকেটে ২০০ রান কোনো ব্যাপার হতে পারত শুধু বিধ্বংসী বোলিং বা জঘন্য ব্যাটিং হলেই। ভিটরি নেই বলে প্রথম সম্ভাবনাটা শুরুতেই প্রায় শূন্যের কোঠায়। দ্বিতীয় সম্ভাবনাটাও উড়ে গেল তামিম ইকবালের ব্যাটের ঝলকানিতে। ৫৩ বলে ৬১ রানের ইনিংসটি একটা মাইলফলকেও পৌঁছে দিয়েছে তাঁকে। মোহাম্মদ আশরাফুল ও সাকিব আল হাসানের পর বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে তিন হাজার রান হয়ে গেল তামিমের। তিনজনের মধ্যে তিনিই দ্রুততম তিন হাজারি। সাকিবের তিন হাজার হয়েছিল ১০৫ ইনিংসে। তামিমের লাগল ১০২ ইনিংস।
বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুতে অবশ্য ইমরুল কায়েসকে তামিম মনে হচ্ছিল, তামিমকে ইমরুল। আগের তিন ম্যাচে ব্যর্থতা থেকে বেরোতে চালিয়ে খেলাটাকেই উপায় মানলেন ইমরুল। ঘটনাবহুল ২০ মিনিটেই অবশ্য তাঁর ইনিংসের সমাপ্তি। ওটুকু সময়ের মধ্যেই দুবার ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গেলেন, তিনটি চার ও দুটি ছক্কাও মারলেন।
জুনায়েদও বেশ মারমুখী মেজাজে আছেন বলে মনে হলো। তবে ১৪ রানেই শেষ তাঁর অ্যাডভেঞ্চার। তামিম ও মুশফিকুরকেও হারিয়ে রান যখন ৪ উইকেটে ১২৯, ম্যাচে একটু অনিশ্চয়তার দোলাচল। ধীরে ধীরে সেটি মুছে গেছে শুভাগতর সঙ্গে সাকিবের অপরাজিত ৭৪ রানের জুটিতে।
তৃতীয় ওয়ানডেতে হারার পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অন্ধকারেও আলোর রেখা খুঁজছিলেন স্টুয়ার্ট ল। ভেবে ভেবে পেয়েছিলেন নাসির হোসেন ও শুভাগত হোম চৌধুরীকে, ‘নতুন দুজনকে দেখে মনে হচ্ছে, ওরা এই পর্যায়ে খেলার জন্য তৈরি।’ কাল শুভাগতর ইনিংসটি ছোট্ট হলেও তা ল-র উপলব্ধিটাকে সঠিক বলে প্রমাণ করার মতোই।

No comments

Powered by Blogger.