বদলাতে চান না কেভিতোভা

শুক্রবারের কেভিতোভা আর শনিবারের কেভিতোভার মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। অষ্টম বাছাই হিসেবে উইম্বলডনে এসেছিলেন। গতবার এখানে সেমিফাইনালেও খেলেছেন। কিন্তু তার পরও যাকে বলে তারকাখ্যাতি, সেটি একদমই ছিল না। আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতোই ছিলেন সোনালি চুলের নীলনয়না। কিন্তু পেত্রা কেভিতোভা এখন যেখানেই যাবেন, কৌতূহলী চোখ ঘিরে ধরবে। মুহুর্মুহু জ্বলবে আলোকচিত্রীর ক্যামেরা। ভিড় লেগে যাবে সইশিকারিদের। বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ডে ছেয়ে যাবে রাস্তা। তারকাখ্যাতির জ্বলজ্বলে পৃথিবীতে পা দিয়েই দিলেন এই চেক। রয়টার্স, এএফপি।
কিন্তু কেভিতোভা বলছেন অন্য কথা, ‘আমি যেমন আছি তেমনই থাকতে চাই। আশা করি, আমার জীবনটা বদলে যাবে না।’ এখনো আগের মতো অনুশীলনে ফাঁকি দিতে চাইবেন। রোজ রাতে তাঁর জন্য বরাদ্দ আনারসটি চেয়ে নেবেন ট্রেনারের কাছ থেকে। সমবয়সী খেলোয়াড়দের সঙ্গে করবেন খুনসুটি। মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার মতো কিংবদন্তির সান্নিধ্য পেলে আবেগে গলে যাবেন। কিন্তু চাইলেও আর তাঁর কক্ষপথ থাকবে না আগের মতন।
এমনিতেই ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম জিতে মধ্যে ঢুকে পড়েছেন ইতিহাসে। উন্মুক্ত যুগে এর আগে মাত্র তিন বাঁহাতি নারী খেলোয়াড় জিতেছেন গ্র্যান্ড স্লাম। এঁদের মধ্যে আছেন নাভ্রাতিলোভাও, যাঁর খেলা দেখে দেখে নিজেকে গড়ে নিয়েছেন এই ২১ বছরের তরুণী।
মেয়েদের কোর্টে বাঁহাতি খেলোয়াড় এমনিতেই বিরল। বাঁহাতি হিসেবে বাড়তি সুবিধা তো পানই, তা ছাড়া সার্ভের গতিও দুর্দান্ত। তা ছাড়া ৬ ফুট উচ্চতাও দেয় বাড়তি সুবিধা। এ বছর ধারাবাহিক খেলে র‌্যাঙ্কিংয়ের সাতে উঠে আসা কেভিতোভার মধ্যে আগামীর বড় তারকার ছবিই দেখছে অনেকেই।
কথাবার্তায় একেবারেই সহজ-সরল। বলছেন, উইম্বলডনের মতো একটা টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতা দূরের কথা, টেনিসে বেশি দূর এগোনোর স্বপ্নই আগে দেখেননি, ‘আমি তো ভাবিইনি পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করতে পারব। আমি অনুশীলন করতাম স্কুল থেকে ফিরে, সেটাও মাত্র এক কি দেড় ঘণ্টা।’ প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের অনুভূতি কী রকম হওয়া উচিত, সেটাও নাকি এখনো ঠাওর করে উঠতে পারেননি, ‘এখনো বুঝতে পারছি না। অবিশ্বাস্য এক অনুভূতি। হয়তো আরও কয়েক দিন সময় লাগবে পুরোটা বুঝে উঠতে।’
অবলীলায় স্বীকার করছেন, লকার রুমে নাভ্রাতিলোভা আর ইয়ানা নভোতনার মতো সাবেক চেক তারকার দেখা পাওয়ার অনুভূতি তাঁর জন্য ছিল অন্য রকম, ‘ওদের কাছে পেয়ে এতটাই ভালো লাগছিল, আনন্দে আমি কেঁদেই ফেলেছিলাম।’
ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনাল বলে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, স্নায়ুচাপে ভুগবেন। আর ওখানেই এগিয়ে যাবেন মারিয়া শারাপোভা। উল্টো তাঁকেই দেখাল পরিণত। মনেই হয়নি জীবনের সবচেয়ে বড় ম্যাচটি খেলছেন। কেভিতোভাও জানালেন, ম্যাচের আগে দারুণ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, ‘গতবার আমি খুব একটা সুযোগ পাইনি। সেরেনা (সেমিফাইনালে) এত দুর্দান্ত খেলছিল। তা ছাড়া আমার বয়সও ছিল কম, এই বিশ্বাসও ছিল না আমি জিততে পারব। কিন্তু আজ আমি জানতাম, আমি পারব। আমার রিটার্ন খুব ভালো। ওর (শারাপোভা) সার্ভিসও আমাকে ঝামেলায় ফেলে দেওয়ার মতো ভয়ংকর ছিল না।’

No comments

Powered by Blogger.