দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুশীল সমাজ ও সরকারের অবস্থান অস্পষ্ট

ভারতের যোগগুরু বাবা রামদেব নিজের অনুসারীদের নিয়ে নয়াদিল্লির রামলীলা ময়দানে অনশন কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা ও কালো টাকার মালিকদের মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির দাবিতে ওই কর্মসূচি দেন তিনি। কিন্তু পুলিশের বাধায় কর্মসূচি পণ্ড হলে ওই ময়দান ছেড়ে উত্তরাখন্ডের আশ্রমে চলে যান রামদেব। তাঁর এ কর্মসূচির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে বাস্তবতা হলো, সরকার বেশ বেকায়দায় আছে। কারণ, চার দশক ধরে হিমঘরে থাকা দুর্নীতিবিরোধী লোকপাল বিল পাস করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। ব্যর্থ হয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত ভারতীয়দের কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে। সরকার আসলে এটা করতেও চায় না। রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন রোধেও সরকারের তেমন সদিচ্ছা আছে বলে মনে হয় না। তাই তো চারজন লোকসভার সদস্যের মধ্যে একজনের নামে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
তার পরও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই বা আমরণ অনশনের মতো কর্মসূচি দেওয়া থেকে দূরে ছিলেন। তবে গণমাধ্যমে সমর্থনের ফলে কারও কারও কর্মসূচি তাঁকে তারকা বানিয়ে দিচ্ছে।
সুশীল সমাজের একটি দাবি ছিল, লোকপাল বিল নিয়ে যৌথ কমিটির বৈঠকের ভিডিও চিত্র ধারণ করে তা জনগণকে দেখানো। সুশীল সমাজ জনগণকে দেখাতে চায়, সরকার কীভাবে একটার পর একটা অজুহাতে লোকসভায় এই বিল পাস করতে বাধা দিচ্ছে।
এই বিল পাস করে দুর্নীতি দমন করে দেশকে বাঁচাতে সরকার এখন কিছু আপসহীন মানুষের আন্দোলনের মুখে পড়ছে। এমন একজন সমাজকর্মী আন্না হাজারে। ১৬ আগস্টের মধ্যে লোকপাল বিল পাস না হলে ওই দিন থেকে অনশন শুরু করবেন তিনি। আন্নার এটা তৃতীয় অনশন কর্মসূচি। তবে বিষয়টি হলো, বারবার অনশন কর্মসূচি পালন করা হলে এর গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়।
রামদেবের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) তাঁর পুরো আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছে। এর ফলে সরকার এ আন্দোলনকে সাম্প্রদায়িক শক্তির পক্ষের আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ পাচ্ছে।
আরএসএস ও ভিএইচপি এসব আন্দোলনের মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে সরকারকে অজনপ্রিয় প্রমাণ করতে চায়। এর মধ্য দিয়ে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ উন্মুক্ত করতে চায়।

No comments

Powered by Blogger.