শেয়ারবাজারে বড় দরপতন

তিন মাসের ব্যবধানে গতকাল রোববার দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে। এ দিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক কমেছে প্রায় ৩১৪ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক কমেছে ৭৬৫ পয়েন্ট। দুই বাজারেই লেনদেন হওয়া অধিকাংশ শেয়ারের দাম কমেছে।
জানা গেছে, এর আগে সর্বশেষ গত ১৩ মার্চ ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক কমেছিল ৪৫৯ পয়েন্ট।
নির্ধারিত সময়ের আগে ব্রোকারেজ হাউসের কোরাম পূর্ণ হওয়ায় হরতাল সত্ত্বেও গতকাল সকাল ১১টায় লেনদেন শুরু হয়। বাজেট ঘোষণার পর গতকালই ছিল শেয়ারবাজারের প্রথম কার্যদিবস। তাই দিনটিকে ঘিরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ছিল ব্যাপক কৌতূহল। শুরু থেকে বাজার পড়তে থাকায় অনেক বিনিয়োগকারী টেলিফোনে শেয়ার বিক্রির আদেশ দিতে থাকেন।
ব্যাপক দরপতনের জন্য বাজেট ঘিরে প্রত্যাশার অপূর্ণতাকে দায়ী করেছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, নতুন অর্থবছরের বাজেটকে ঘিরে বিনিয়োগকারীদের অনেক বেশি প্রত্যাশা ছিল।
তবে নতুন বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য নতুন কোনো ঘোষণা আসেনি। বরং দুই স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের লেনদেনের কমিশনের ওপর উৎসে আয়কর বাড়ানো হয়েছে। করারোপ করা হয়েছে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ওপর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক সালাহউদ্দিন আহমেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজেটে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর কমিশনের ওপর করহার বাড়ানো হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের ওপর গিয়েই বর্তাবে। তারল্য-সংকট দূর করতেও বাজেটে কিছু বলা হয়নি। এসব কারণে গতকাল বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়াটা অস্বাভাবিক ছিল না।’
বাজেট ঘোষণার আগের কার্যদিবসে ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ছিল পাঁচ হাজার ৯৯০ পয়েন্ট। আর বাজেট ঘোষণার পরবর্তী কার্যদিবসেই সেটি কমে হয়েছে পাঁচ হাজার ৬৭৬ পয়েন্ট।
গতকাল দিনশেষে ডিএসইতে ২৫৯ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে ২৫২টিরই দাম কমেছে। বেড়েছে কেবল পাঁচটির আর অপরিবর্তিত ছিল দুটি কোম্পানির শেয়ারের দাম। তাই ডিএসইতে দাম বাড়ার শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকাটিও পূর্ণ হয়নি। দিনশেষে ঢাকার বাজারে প্রায় ৫৯৭ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, যা আগের দিনের চেয়ে ৭১ কোটি টাকা কম।
শেয়ারের দরপতনের কারণে সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক গতকাল নেমে আসে ১৫ হাজার ৮০৮ পয়েন্টে। দিনশেষে সিএসইতে ১৯৩টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে ১৮৬টিরই দাম কমেছে। বেড়েছে মাত্র ছয়টির আর অপরিবর্তিত ছিল একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম। গতকাল চট্টগ্রামের বাজারে লেনদেন হয়েছে ৮৯ কোটি টাকার শেয়ার।
এমজেএল তালিকাভুক্তির নির্দেশনা: মবিল-যমুনা লুব্রিকেন্টসকে (এমজেএল) তালিকাভুক্তির ব্যাপারে নির্দেশনা জারি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)।
গতকাল রোববার কমিশনের এক জরুরি সভা শেষে এই নির্দেশনা জারি করা হয়। তাতে ১৫ দিনের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বাবদ নেওয়া আগের দাম থেকে ৩৭ টাকা ৪০ পয়সা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। ওই টাকা ফেরত দেওয়ার কাজ সম্পন্ন হলে কোম্পানিটির তালিকাভুক্তিতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
এর আগে শেয়ারের প্রস্তাবিত মূল্য কমানোর শর্তে কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই। এমজেএলের শেয়ারের প্রস্তাবিত মূল্য ছিল ১৫২ টাকা ৪০ পয়সা। মৌলভিত্তির তুলনায় এ মূল্য বেশি হওয়ায় কোম্পানিটি ৩৭ টাকা ৪০ পয়সা প্রাথমিক বিনিয়োগকারীদের ফেরত দেওয়ার (রিফান্ড ওয়ারেন্ট) সিদ্ধান্ত হয়। এতে কোম্পানির শেয়ারের পুনর্নির্ধারিত মূল্য দাঁড়ায় ১১৫ টাকা।
যোগাযোগ করা হলে এসইসির সদস্য হেলালউদ্দিন নিজামী বলেন, ‘আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েই নির্দেশনাটি দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী এমজেএলকে ১৫ দিনের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে হবে। টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারবে কোম্পানিটি।’
এমজেএলের তালিকাভুক্তির বিষয়ে এসইসির জারি করা আগের নির্দেশনাও প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

No comments

Powered by Blogger.