শিক্ষকের শূন্যপদ

গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছেন, সারা দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে এক হাজার ২৬৮টি পদ খালি রয়েছে। আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমিনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনটি পার্বত্য জেলা বাদে সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে মোট আট হাজার ৬৩৫টি। আমাদের মনে হয়, শিক্ষাক্ষেত্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ দুটি স্তরে, বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ে বিপুলসংখ্যক শিক্ষকের পদ শূন্য থাকা শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে মোট প্রায় ১০ হাজার শিক্ষকের পদে কোনো শিক্ষক নেই—এ বাস্তবতার তাৎপর্য কী? এক. শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের জন্য এই শিক্ষকদের প্রয়োজন, পদগুলো সৃষ্টি করা হয়েছে সে কারণেই। দুই. শ্রেণীকক্ষে শিক্ষাদান, পরীক্ষা নেওয়া, খাতা দেখা থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে প্রয়োজনীয় লোকবলের ঘাটতি রয়েছে এবং সেই ঘাটতি নিয়েই বিদ্যালয়গুলো যখন চলছে, তখন শিক্ষার গুণগত মান বাড়ার কথা নয়। তিন. বিপুলসংখ্যক শিক্ষকের শূন্যপদ নিয়েই যখন বিদ্যালয়গুলো চলতে পারছে, তখন সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের মনে হতে পারে চলছেই যখন, তখন নতুন শিক্ষক নিয়োগে তাড়াহুড়োর কী আছে?
শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, বিষয়ভিত্তিক পদশূন্যতায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রতিবছর দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকে। তাহলে দেখা যাচ্ছে সেই অব্যাহত নিয়োগপ্রক্রিয়ার মধ্যেই বিপুলসংখ্যক শিক্ষকের পদ শূন্য থেকে যাচ্ছে, অনেকটা যেন ধ্রুবকের মতো। শিক্ষাকে জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করে এ খাতে জাতীয় বাজেটের সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়েও যদি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকশূন্যতাই পূরণ করা না যায়, তবে তা দুর্ভাগ্যজনক। পুরোনো শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়া বা অন্যান্য কারণে তাঁদের পদগুলো শূন্য হয় সারা বছরই। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ করা হয় বছরে একবার, একটি নির্দিষ্ট সময়ে। এখানে একটা পরিবর্তন আনা উচিত বলে মনে হয়; বছরে দুবার, সম্ভব হলে তিনবার শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হলে শূন্যপদগুলোর সব পূরণ না হলেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যকই পূরণ হবে। বিদ্যালয়ে কম্পিউটার দেওয়াসহ নানামুখী উন্নয়ন-তৎপরতার চেয়ে প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে শূন্যপদগুলো পূরণের আশু উদ্যোগ নেওয়া হোক।

No comments

Powered by Blogger.