যুক্তরাষ্ট্রে রাজস্ব ব্যয় নিয়ে সাময়িক সমঝোতা

যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা রাজস্ব ব্যয় নিয়ে সাময়িক সমঝোতায় পৌঁছেছেন। গত শুক্রবার মধ্যরাতে এ সমঝোতা হয়। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজস্ব ব্যয় অনুমোদন নিয়ে একমত হয়েছেন তাঁরা। রাজস্ব ব্যয় নিয়ে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের মতপার্থক্যে কেন্দ্রীয় সরকারের বহু কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
শুক্রবার মধ্যরাতে হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছে, সরকারের সব কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলবে। আগামী এক সপ্তাহ কংগ্রেসে উভয় দল তাদের মতপার্থক্য কমিয়ে আনার চেষ্টা করবে। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব ব্যয় চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের জন্য আগামী শুক্রবার কংগ্রেসে পেশ করা হবে।
মধ্যরাতে হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ‘আইনপ্রণেতারা আবার প্রমাণ করেছেন, মতভেদ থাকা সত্ত্বেও দেশের স্বার্থে আমরা ঐক্যবদ্ধ।’ তিনি বলেন, সমঝোতায় পৌঁছাতে উভয় দলের আইনপ্রণেতাদেরই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
গত মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর রাজস্ব ব্যয় হ্রাসের চাপ বাড়তে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় রাজস্ব ঘাটতি কমিয়ে আনার জন্য চরম ব্যয় সংকোচননীতি প্রণয়নে উৎসাহী রিপাবলিকানেরা। ডেমোক্রেটিক পার্টি ও বারাক ওবামার বহু উদারনৈতিক কর্মসূচি ব্যয়বহুল এবং উচ্চাভিলাষী বলে অভিযোগ উঠতে থাকে। হঠাৎ করেই ব্যয় সংকোচনের পদক্ষেপ ডেমোক্রেটিক পার্টি ও ওবামার জন্য রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। বিভিন্ন কল্যাণ খাতে কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্ব অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য চিকিৎসাসেবা, পরিবার পরিকল্পনা, শিক্ষাসহ পরীক্ষামূলক উন্নয়ন কর্মসূচিতে হঠাৎ ব্যয় সংকোচনের পরিণাম নেতিবাচক হবে বলে ডেমোক্রেটদের অভিমত। রাজস্ব ব্যয়ের বড় খাত ইরাক-আফগানিস্তানের যুদ্ধ ব্যয় থেকে এখনই সরে দাঁড়ানোর কোনো অবকাশ নেই ওবামা প্রশাসনের।
গত কর্মসপ্তাহের টানা বিতর্কে কেন্দ্রীয় সরকারে অচলাবস্থা দেখা দেওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রায় আট লাখ কর্মচারী সাময়িকভাবে কর্মহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। রাজস্ব ব্যয় নিয়ে সমঝোতা না হলে কোন দপ্তর কীভাবে খোলা থাকবে—বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছিল। পাসপোর্ট প্রদানসহ ভিসা সার্ভিস থেকে বিভিন্ন কার্যক্রমে সীমিত কর্মকাণ্ড চালু রাখার আগাম পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।
দুই বিলিয়ন ডলার ব্যয় হ্রাসের সমঝোতার মাধ্যমে এক সপ্তাহের জন্য দুই দলের আইনপ্রণেতারা সমঝোতা করেছেন। চলতি অর্থবছরের অবশিষ্ট সময় ৪০ বিলিয়ন ডলারের ব্যয় হ্রাস করা হবে বলে উভয় দলের মধ্যে আপাতত সমঝোতা হয়েছে। কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা রিপাবলিকান স্পিকার জন বয়েনার বলেন, ‘আমরা সরকারি ব্যয় হ্রাসে সংগ্রাম করেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, জাতীয় রাজস্ব ঘাটতি হ্রাস করার পরিণাম দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক হবে এবং কর্মসংস্থানের পরিধি বাড়বে।’ কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা ডেমোক্রেট সিনেটর হ্যারি রিড বলেন, সমঝোতার বিষয়টি জটিল হলেও দেশের জন্য জরুরি হয়ে উঠেছিল।
কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে—এমন আতঙ্ক ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র। শুক্রবার দিনভর ওয়াশিংটনসহ দেশজুড়ে এ নিয়ে উদ্বেগ ও রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছিল। মার্কিন সংবাদমাধ্যমে প্রতি মিনিটে সমঝোতা ও আইনপ্রণেতাদের মতপার্থক্য নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেছে।

No comments

Powered by Blogger.