‘অনেক আম্পায়ারই মুরালির অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহপ্রবণ’

আজ থেকে পনেরো বছর আগে ১৯৯৫ সালে অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার মেলবোর্ন টেস্টটি আলোচনা ও বিতর্কের ঝড় তুলেছিল বিশ্বময়। সেই টেস্টে অস্ট্রেলীয় আম্পায়ার ড্যারেল হেয়ার শ্রীলঙ্কান ‘স্পিন যাদুকর’ মুত্তিয়া মুরালিধরনকে সাতবার ‘নো’ ডেকেছিলেন কেবলমাত্র তাঁর বোলিং অ্যাকশনের কারণে। হেয়ারের ভাষ্যমতে, মুত্তিয়া মুরালিধরন সেই ম্যাচে এমন কিছু অ্যাকশনে বল করছিলেন, যার স্বীকৃতি ক্রিকেটের কোনো আইনে নেই। সেই ঘটনাটি ক্রিকেট বিশ্বকে আক্ষরিত অর্থেই দুই ভাগে ভাগ করে দিয়েছিল। অনেকেতো হেয়ারকে একজন বর্ণবাদী আম্পায়ার হিসেবেই অভিহিত করে ফেলেছিলেন।
সেই ড্যারেল হেয়ার এরপরেও অনেকবার বিতর্কিত হয়েছেন। আইসিসিতো ১৯৯৫ সালের পর আর কোনোদিনই শ্রীলঙ্কার কোনো ম্যাচে হেয়ারকে আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্ব দেয়নি। ২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে তাঁর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে দল নিয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তত্কালীন পাকিস্তানি অধিনায়ক ইনজামাম-উল-হক। সেই বিতর্কের রেশ ধরে আইসিসি তাঁকে কিছুদিনের জন্য আম্পায়ারিং থেকেও দূরে সরিয়ে রেখেছিল। ২০০৮ সালে হেয়ার আম্পয়ারিং থেকে সরে দাঁড়ান। ততদিনে তাঁর ভাণ্ডারে জমা হয়েছে ৭৮টি টেস্ট ম্যাচ পরিচালনার অভিজ্ঞতা।
আজ ২০১১ সালে দাঁড়িয়েও মুত্তিয়া মুরালিধরন সম্পর্কে তাঁর দর্শনের এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক এই অফস্পিনার যে বোলিংটা সবসময় আইন মেনে করেন না, তা এখনো মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন তিনি। শুধু তাই নয়, অস্ট্রেলিয়ার হেরাল্ড সান পত্রিকায় আজ শনিবার লেখা এক কলামে তিনি বলেছেন, ‘বর্তমানের অনেক আম্পায়ারই ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে বলেছেন যে মুরালির অ্যাকশন নিয়ে তাঁদের মধ্যেও সন্দেহ রয়েছে।
অন্য আম্পায়ারদের মুরালির অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহের কথা বলে তিনি লিখেছেন, ‘অন্যরা আসল ব্যাপারটি বিশ্বাস করলেও এটা নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ কিছু করার সাহস তাঁদের নেই।’ তাঁদের ব্যাপারটি অনেকটা ‘আম্পায়ারিং করছি, নাম কামাচ্ছি, টাকা কামাচ্ছি, আমার কি ঠেকা’ টাইপের।
তবে, নিজের মনোভাব কখনোই বর্তমান আম্পায়ারদের মতো ছিল না বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন,‘আমি সেই পথে হাঁটিনি বলেইতো আমি বিতর্কিত আম্পায়ার।’ নিজের পেশা নিয়ে মনের গহিনে গুমড়ে ওঠা ক্ষোভটা যেন প্রকাশ করেই দিলেন ড্যারেল হেয়ার।
মুরালিধরনের অ্যাকশন নিয়ে অনেকবার বিতর্ক উঠলেও বারবারই তিনি আইসিসির কাছ থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। মুরালির সম্পর্কে আইসিসির বক্তব্য হচ্ছে, ‘সে যখন বোলিং করে, তখন তাঁর অ্যাকশন নিয়ে একটি চোখের ধাঁধাঁ তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক, কারণ জন্মগত কারণেই তাঁর বাহু বেঁকে থাকে। অথচ ডেলিভারির সময় বোলারের বাহু অবশ্যই সোজা হতে হবে।’ আইসিসি এটাকে মুরালির জন্মগত শারিরীক ত্রুটি হিসেবে অভিহিত করে, চাকিংয়ের অভিযোগ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দিয়েছে অনেক আগেই। ব্যাপারটি আইসিসি কখনোই সঠিক করেনি বলে ধারণা হেয়ারের।
মুরালিধরন সবসময়ই অবৈধ অ্যাকশনে বল করে। শুধু তাই নয়, এবারের বিশ্বকাপেও সে একইভাবে বল করে যাচ্ছে বলেই নিজের কলামে মন্তব্য করেছেন হেয়ার। তিনি বলেছেন, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিতেও দেখলাম মুরালি যেসব বলগুলোতে বেশি টার্ন পায়, সেই বলগুলো সে সন্দেহজনক অ্যাকশনে করে থাকে। ব্যাপারটি নিয়ে আইসিসির অবশ্যই ভেবে দেখা উচিত।’
তিনি তাঁর কলামে দুঃখ করেই লিখেছেন, একজন আম্পায়ারের দায়িত্ব ক্রিকেটের আইন-কানুনকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা। আম্পায়ারের দায়িত্ব, ক্রিকেটের মাঠে সব দলের জন্যই সমান সুযোগ সৃষ্টি করা।

No comments

Powered by Blogger.