ইতিহাস- 'বাংলা ভাষার স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ' by রফিকুল ইসলাম

বিগত হাজার বছরের ওপর বাংলাদেশ বহিরাগত বিজয়ী এবং ভাষা দ্বারা শাসিত হয়ে এসেছে। বাংলার প্রথম রাজশাসক শশাংকের ভাষা কী ছিল তা স্পষ্ট নয়, কিন্তু তাঁর আর্যবর্তমুখী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মনে হয়, তিনি উত্তর ভারতের ভাষা ব্যবহার করতেন।

বৌদ্ধ পাল রাজারা স্থানীয় প্রাকৃত বা অপভ্রংশ ভাষাই কেবল ব্যবহার করতেন কি না সন্দেহ; কারণ তখন আর্যদের ভাষা স্থানীয় অনার্যদের ভাষাকে গ্রাস করে ফেলেছে এবং উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলের অনার্য ভাষাগুলোর ওপর আর্য ভাষা আরোপিত হয়েছে। বাংলা ভাষা একটি আর্য ভাষা, সপ্তম থেকে দশম শতকের মধ্যে বাংলা ভাষা প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষার খোলস ছেড়ে স্বাধীন ভাষারূপে আত্দপ্রকাশ করলেও তা উচ্চবর্ণের বা শাসকদের ভাষারূপে প্রতিষ্ঠা পায়নি।
উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলে আর্যপূর্ব ভাষাগুলো ছিল অস্ট্রিক বা মুণ্ডা, দ্রাবিড় বা ওঁরাও এবং ভোটবর্মী বা তিব্বতিবর্মী ভাষাগুলোর বংশোদ্ভূত। বাঙালি জাতি যেমন অনার্য, আর্য, সেমেটিক প্রভৃতি জাতিসত্তার মিশ্রণে গঠিত সংকরজাতি, বাংলার সংস্কৃতি এবং ভাষাও তেমনি মিশ্র ঐতিহ্যের ফসল। এ অঞ্চলের হাজার বছরের ইতিহাসে অবিমিশ্র বলে কিছু নেই।
বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, অসমের শিলচর, করিমগঞ্জ এবং বিহার, উড়িষ্যা ও ঝাড়খণ্ডের পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তবর্তী অঞ্চল বাংলাভাষী এলাকা। বিগত হাজার বছর যাবৎ ওইসব অঞ্চলে বাংলা ভাষা বিকশিত হয়েছে এবং একটি স্বতন্ত্র ও বিশিষ্ট ভাষারূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক থেকে আসা সেন রাজাদের সংস্কৃত ভাষার পৃষ্ঠপোষকতার ফলে বাংলা ভাষা তার সূচনাপর্ব থেকেই বাধাগ্রস্ত হয়েছে। হয়তো বৌদ্ধ পাল রাজত্ব অক্ষুণ্ন থাকলে তা হতো না। সেন রাজাদের রাজত্বকালে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের এবং সংস্কৃত ভাষার আধিপত্য বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতি ও ভাষার বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছিল।
তেরো শতকে তুর্কি বিজয়ের ফলে সেন রাজত্বের অবসান বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য সহায়ক হয়েছিল। তুর্কি বিজয়ের সময় থেকে প্রায় ৬০০ বছর বাংলায় বহিরাগত মুসলমান যেমন পাঠান, মোগলরা রাজত্ব করে, সে সময় বাংলায় ইসলাম ধর্ম প্রসারিত হয়। ওই পুরো সময়টায় দরবারি ভাষা ছিল ফারসি; কিন্তু এ সময়টাতেই বাঙালি হিন্দু-মুসলমানরা তাদের মাতৃভাষা অর্থাৎ বাংলা ভাষায় সাহিত্যচর্চা করেছিল। স্বাধীন সুলতানি আমলে বাংলা ভাষা তেমন প্রতিকূল পরিবেশে ছিল না, এ কারণেই হয়তো পনেরো শতক থেকে বাংলা ভাষা নিজস্ব বর্ণমালায় লিখিত হতে পেরেছিল। উপমহাদেশের অধিকাংশ ভাষা যখন দেবনাগরি কিংবা আরবি-ফারসি হরফে লিখিত হতো, বাংলা ভাষা তখন নিজস্ব লিপিতে লিখিত হয়েছিল, যদিও ওই দুই ভাষার সংস্পর্শে প্রচুর সংস্কৃত ও আরবি-ফারসি শব্দ বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারে কৃতঋণ শব্দরূপে গৃহীত হয়েছিল।
বাংলা ভাষায় হাজার বছর ধরে সাহিত্যসৃষ্টি এবং গত ৬০০ বছর নিজস্ব লিপিতে লেখা হলেও বাঙালি হিন্দু ও মুসলমান সাহিত্যিকরা তাঁদের সম্প্রদায়ের গোঁড়া মানুষের কাছ থেকে মাতৃভাষায় সাহিত্যচর্চার জন্য প্রবল প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়। বাঙালি হিন্দু কবিরা দেবদেবীর কথা দেব বা সংস্কৃত ভাষায় না লিখে বাংলা ভাষায় লেখায় ব্রাহ্মণ পণ্ডিতরা তাঁদের স্থান নির্দেশ করেছিলেন 'রৌরব নরকে'। অন্যদিকে বাঙালি মুসলমান কবিরা আল্লাহ-রাসুলের কথা আরবি বা ফারসি ভাষায় না লিখে বাংলা ভাষায় লেখায় ধর্মান্ধ মোল্লারা তাঁদের স্থান নির্দেশ করেছিলেন 'হাবিয়া দোজখে'। ফলে মধ্যযুগে বাঙালি হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লেখকরা নিজ নিজ সম্প্রদায়ের কাছে একটা অপরাধবোধে ভুগতেন। এমনকি বিশ শতকের প্রথম দুই-তিন দশকজুড়ে বাঙালি মুসলমান সমাজের পত্রপত্রিকায় বিতর্ক চলেছে, বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা বাংলা, না উর্দু? নবাব আবদুল লতিফ মতপ্রকাশ করেছিলেন, 'আশরাফ' বা উচ্চ শ্রেণীর বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা হচ্ছে উর্দু আর 'আতরাফ' বা নিম্ন শ্রেণীর বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা হচ্ছে বাংলা। বলা বাহুল্য, পরবর্তী সময়ে বাংলা ভাষার আন্দোলন করেছিল 'আতরাফ'রা আর উর্দুর পক্ষে ছিল 'আশরাফ'রা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল 'আতরাফ'রা আর পাকিস্তানের দালালি করেছিল 'আশরাফ'রা। স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হলেও একুশ শতকে আশরাফদের দাপটে বাংলা ভাষা কোণঠাসা এবং বিশ্বায়নের ফলে ইংরেজি ভাষার প্রভুত্ব কায়েম হচ্ছে।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর আমাদের ক্রমাগত বাংলা ভাষা, সাহিত্য, বর্ণমালা ও সংস্কৃতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছিল। আমাদের ভাষা আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ছিল জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রচলন এবং বাংলা ভাষার দ্বারা আমাদের জীবন ও সমাজ নিয়ন্ত্রণ, প্রয়োজনে বিদেশি ভাষা শিক্ষা ও ব্যবহার। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে বাংলা একমাত্র রাষ্ট্রভাষারূপে নির্দেশিত হলেও স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনে বাংলা ভাষা তার উপযুক্ত স্থান বা মর্যাদা পাচ্ছে না। একুশ শতকে এসে বিশ্বায়ন, মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং আকাশ সংস্কৃতির দৌরাত্দ্যে বাংলা ভাষার কাঙ্ক্ষিত ব্যবহার ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছে না; কারণ আইনগুলো এখনো ইংরেজি ভাষায় সংকলিত। শিক্ষাব্যবস্থা ত্রিধাবিভক্ত। বাংলা মাধ্যম ছাড়াও সমান্তরাল ইংরেজি এবং আরবি ভাষার মাধ্যম ক্রমবর্ধমান। বাংলার মাধ্যমে পরিচালিত বিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি ভাষা বাধ্যতামূলক, কিন্তু সব ইংরেজি ও আরবি ভাষার মাধ্যমে পরিচালিত শিক্ষাব্যবস্থায় বাংলা ভাষা বাধ্যতামূলক নয়।
আমাদের সমাজজীবনে প্রয়োজন ছাড়া ইংরেজি ভাষার ব্যবহার এক সংক্রামক ব্যাধি। বিয়ে, গায়ে হলুদ, জন্মদিন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও বাণিজ্যিক অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র অপরিহার্যভাবে ইংরেজি ভাষায় রচিত। রাজপথে বিপণি বিতানগুলোর নামফলক ইংরেজিতে। আমাদের আবাসের নাম ইংরেজিতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ইংরেজিতে, এমনকি কয়েক শ টিভি চ্যানেলের নামও ইংরেজিতে।
হাজার বছর সাধনার ফলে বাংলা ভাষা একটি নির্দিষ্ট মানে পেঁৗছাতে পেরেছিল, টেলিভিশন মাধ্যমের কল্যাণে, বিশেষত সিরিয়ালের বদৌলতে সে ভাষা আজ বিকৃতির শিকার। পৃথিবীর সব দেশে সব ভাষার একাধিক রূপ প্রচলিত, আঞ্চলিক বা ভৌগোলিক, প্রমিত বা আধুনিক এবং সাহিত্যিক বা সাংস্কৃতিক। বাংলাদেশেও ব্যতিক্রম নয়। আমরা ঘরে আঞ্চলিক ভাষা, বাজারে বাজারের ভাষা আর আনুষ্ঠানিক পরিবেশে প্রমিত ভাষার ব্যবহার করে আসছি ঐতিহ্যগতভাবে। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশে অর্থাৎ একুশ শতকে এসে স্থানকালপাত্র-ভেদে ভাষার রূপ যে ভিন্ন, তা আমরা বিস্মৃত হয়েছি। বর্তমানে আমরা ঘরে-বাইরে, হাটে-বাজারে, বিদ্যালয় বা শিক্ষাঙ্গনে বিভিন্ন উপভাষা, প্রমিত ভাষা এবং ইংরেজি ভাষার মিশ্রণে এক কিম্ভূতকিমাকার ভাষার ব্যবহার করছি, যা কর্কশ, অমার্জিত এবং শ্লীল-অশ্লীলের সীমা লঙ্ঘনকারী। বাংলাদেশের যারা তথাকথিত শিক্ষিত, তাদের মুখের ভাষায় এ বিচিত্র সংকর ভাষার ব্যবহার আমাদের মাতৃভাষার হাজার বছরের ঐতিহ্যকে নষ্ট করে দিচ্ছে। পৃথিবীর সব দেশে বিদ্যালয়ে পাঠ দেওয়া হয় প্রমিত ভাষায়। কিন্তু বাংলাদেশে আঞ্চলিক মিশ্রিত এক বিচিত্র ভাষায়। ফলে বাংলা ভাষা তার মাধুর্য, ঐশ্বর্য ও শক্তি হারাচ্ছে। বাংলাদেশের তথাকথিত শিক্ষিত সম্প্রদায় বর্তমানে প্রকাশ্যে আনুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে যে ভাষা ব্যবহার করে থাকে, তা প্রায়ই বোধগম্য নয়। মানুষ ভাষার সাহায্যে মনোভাব প্রকাশ করে থাকে, ভাষা সামাজিক যোগাযোগের বাহন; কিন্তু ভাষা যদি মানুষের বোধগম্য না হয়, তাহলে ভাষা ব্যবহার করা কেন? বাংলাদেশে বাংলা ভাষা সমাজজীবনে যেভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তাতে মনে হয় না এ দেশে শিক্ষার কোনো মান আছে; বরং যাঁরা শিক্ষিত নন তাঁরাই নির্ভেজাল মাতৃভাষা বা উপভাষা ব্যবহার করে থাকেন, যা স্বাভাবিক।
পাকিস্তান আমলের প্রায় পুরো সময় আমরা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আন্দোলনের সমান্তরাল সাংস্কৃতিক আন্দোলন করেছিলাম শুধু আমাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যবাহী ভাষা, সাহিত্য, বর্ণমালা, সংগীতকে রক্ষা করার জন্যই নয়, সঙ্গে সঙ্গে একটি জাতিরাষ্ট্রে এক সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক জীবনযাপনের জন্য। কিন্তু স্বাধীন দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রচারমাধ্যমে আমরা কি দেখতে বা শুনতে পাচ্ছি? ধারাবাহিক নাটকের নামে এক অদ্ভুত খিচুড়ি ভাষার ব্যবহার, সংগীতের নামে ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীতের ফিউশন বা বিকৃতি। বিজ্ঞাপনের নামে আমাদের ঐতিহ্যবাহী রাগসংগীত নিয়ে খিস্তিখেউড়। টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে টেলিভিশন সিরিয়ালের মতোই বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিকৃতির মহোৎসব চলছে। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে এ খিস্তিখেউড় অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত; অন্যথা নতুন করে ভাষা আন্দোলন শুরু হবে। আমাদের মাতৃভাষা নিয়ে এ যথেচ্ছাচার আমরা মেনে নিতে পারি না।
বাংলা ভাষা নিয়ে আমাদের স্বপ্ন ও সাধনা একুশ শতকে এসে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা মানুষকে মার্জিত ও পরিশীলিত করে; কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে শিক্ষা মানুষকে অমার্জিত এবং শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করছে। মাতৃভাষাবিহীন ইংরেজি ও আরবি ভাষার মাধ্যমে পরিচালিত যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে, সেগুলো এক উৎকেন্দ্রিক প্রজন্ম সৃষ্টি করছে, যার সঙ্গে এ দেশের ইতিহাস, ভূগোল, ঐতিহ্য বা পরিবেশের বিশেষ সম্পর্ক নেই। আমরা আমাদের সমাজজীবন থেকে মাতৃভাষা ও সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিতে বসেছি। ফলে একুশ শতকে বিশ্বের উষ্ণায়নের জন্য যেমন বাংলাদেশের উপকূলভাগ সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তেমনি বাংলা ভাষার অবক্ষয়ের আশঙ্কাও ক্রমে প্রকট হয়ে উঠছে। বাংলা ভাষা বর্তমানে জনসংখ্যার ভিত্তিতে পৃথিবীর চতুর্থ ভাষা হলেও বাংলাভাষীদের হীনমন্যতার ফলে তা আজ আশঙ্কাজনক ভাষাগুলোর মধ্যে প্রথমে অবস্থান করছে।
ইউনেস্কো আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, একুশ শতক শেষ হওয়ার আগেই পৃথিবীতে প্রচলিত মোট ভাষার প্রায় ৪০ শতাংশ বিলীন হয়ে যাবে। ইউনেস্কোর এ আশঙ্কা পৃথিবীর ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাষা নিয়ে হলেও বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এটা বলা যায়, যেসব জাতি তাদের মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, মাতৃভাষার ব্যবহারে যত্নশীল বা ভাষার যথার্থ ব্যবহারে রক্ষণশীল নয়, সেসব ভাষার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। বাংলা ভাষা দশম থেকে বিশ শতক পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও অস্তিত্ব বজায় রেখে উন্নত এবং সমৃদ্ধ হয়ে উঠলেও একুশ শতকে এসে বাংলাভাষীদের মাতৃভাষার প্রতি অনীহা এবং অবজ্ঞার কারণে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে 'কেবল' টিভির দৌলতে ইংরেজি ও হিন্দি চ্যানেলগুলোর অনুপ্রবেশ আমাদের শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিজগৎকে সম্পূর্ণ অস্থিতিশীল করে তুলেছে। বাংলাদেশে একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই ঘরের মধ্যে টিভি সেটে যা দেখছে বা শুনছে, তা তার মানস এবং চেতনাকে প্রভাবিত করছে। ফলে তার মাতৃভাষা শিক্ষণে প্রচণ্ড প্রতিকূলতা সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশে নবজাতক জন্ম থেকেই অপসংস্কৃতির শিকার। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে বাংলাদেশে শিক্ষা ও সংবাদ চ্যানেলগুলো ছাড়া তথাকথিত বিনোদনমূলক সব বিদেশি-বিভাষী চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া উচিত। স্বদেশি চ্যানেলগুলোকে শুদ্ধ স্বদেশি সংস্কৃতির বাহন হতে বাধ্য করা জরুরি। কারণ আমরা বাংলা ভাষা নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, সংগ্রাম করেছিলাম, বাংলা ভাষা থেকে বাংলাদেশ গড়েছিলাম, সেই দেশে আমরাই আবার আমাদের স্বপ্নসাধকে ভেঙে ফেলছি। সতেরো শতকে কবি আবদুল হাকিম লিখেছিলেন, 'যেসব বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাসী, সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি। দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়, নিজ দেশ ত্যাজি কেন বিদেশ ন যায়?' বস্তুত অনেক বাংলাদেশি এখন বিদেশ যাচ্ছে; কিন্তু তারা বিদেশিদের মাতৃভাষাপ্রীতি থেকে কিছুই শিখছে না, আর বাংলাদেশে আমরা বাংলা, ইংরেজি বা আরবি কোনো ভাষাই যথার্থভাবে শিখছি না বা ব্যবহার করতে পারছি না। বলা যেতে পারে, বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ এক ভাষাহীন অবস্থায় ভাসমান।
==========================
গল্পালোচনা- 'অরণ্যে যুদ্ধ' by অরুন্ধতী রায়  রাজনৈতিক আলোচনা- 'বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা আর ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ  নিবন্ধ- 'আইলা, কৃষি এবং কোপেনহেগেন প্রাপ্তি'  গল্পিতিহাস- 'এত যে সফলতা, তবুও বিফলতা' by সনৎ কুমার সাহা  আলোচনা- 'মুনাফার মালা গলায় ঝুলিয়ে পুঁজিবাদীরা মানবজাতি ধবংসের ব্যবস্থা করছে by বদরুদ্দীন উমর  গল্পালোচনা- 'স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি' by লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান  আলোচনা- 'টেলিভিশন কি পত্রিকার প্রতিদ্বন্দ্বী'  ফিচার- ‘অতল জলের আহ্বান' by রুবাইয়াত মনসুর  ভ্রমণ- 'গৌড়ের পথে পথে' by মৃত্যুঞ্জয় রায়  রাজনৈতিক আলোচনা- 'সেদিন বঙ্গভবনে কী ঘটেছিল  রাজনৈতিক আলোচনা- 'রাজনীতি পুরনো পথেই' by আবদুল্লাহ আল ফারুক  খবর- ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের মহাসড়ক  আলোচনা- 'বাংলাদেশে মিডিয়া ও তার ভবিষ্যৎ' by সাইফুল বারী  প্রবন্ধ- রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেনের 'অবরোধবাসিনী'  ফিচার- ‘হিমশীতল শহরগুলোর দিনরাত' by তামান্না মিনহাজ  গল্পালোচনা- ''সে কহে বিস্তর মিছা যে কহে বিস্তর'  সাক্ষাৎকার- হুমায়ূন আহমেদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইমদাদুল হক মিলন

কালের কণ্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ রফিকুল ইসলাম
শিক্ষাবিদ ও নজরুল গমবষক


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.