৫ হাজার কোটি টাকার ম্যাচ

ক্যামেরা ইতিউতি করে খুঁজল। কিন্তু দুজনের কারোরই হদিস নেই। ম্যানচেস্টার সিটির ভিআইপি গ্যালারির অভিজাত জনারণ্যে নেই শেখ মনসুর বিন জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান। চেলসির আমন্ত্রিত অতিথিবর্গের মধ্যে ছিলেন না রোমান আব্রামোভিচও। অথচ পরশু ম্যাচে এই দুজনের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে জরুরি। তাহলেই যেন পূর্ণ হয়ে যেত ছবিটা।
কিসের ছবি? ফুটবলের সর্বকালের সবচেয়ে ‘দামি’ ম্যাচটির। ‘দামি’ শব্দটা আক্ষরিক অর্থেই। এই ম্যাচে দুই দলের প্রথম একাদশের ২২ খেলোয়াড়ের মোট ট্রান্সফার ফির পরিমাণ যে ৩০ কোটি ৩৫ লাখ পাউন্ড (৩৩৩৯ কোটি টাকা), মোট সাপ্তাহিক বেতন ২১ লাখ ৫ হাজার পাউন্ড (২৩ কোটি টাকা)।
ইংলিশ ফুটবলে টাকার বস্তা নিয়ে আরও বছর সাতেক আগেই হাজির হয়েছিলেন রুশ ধনকুবের আব্রামোভিচ। আরব ধনকুবের আল নাহিয়ানের আগমনের এখনো দুই বছর হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে আব্রামোভিচকে মল্লযুদ্ধের আমন্ত্রণ দিয়ে রেখেছেন আবুধাবির রাজপরিবারের এই শেখ।
নামের মতোই বড় টাকার অঙ্ক নিয়ে হাজির নাহিয়ান ক্লাবের মালিকানা কেনার ১৩ মাসের মধ্যেই বিনিয়োগ করেছেন ১০০ কোটি পাউন্ড! তাঁর টাকার এতটাই তেজ, ‘বার্সা-পরিত্যক্ত’ ইয়াইয়া তোরেকেও তিনি সপ্তাহে বেতন দেন ২ লাখ ২০ হাজার পাউন্ড! ইংলিশ ফুটবলে অনেক রথী-মহারথীর পদধূলি পড়েছে। কিন্তু সপ্তাহে ২ লাখের বেশি বেতন জোটেনি কারও কপালেই।
দুই দলে দুই ধনকুবেরের বিনিয়োগ, খেলোয়াড়দের ট্রান্সফার ফি আর বেতনের অঙ্ক মিলিয়ে এটাকেই বলা হচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে ‘দামি’ ম্যাচ। অবশ্য গোলের দিক দিয়ে পরশু ম্যাচটা হলো নেহাতই গরিবি। কার্লোস তেভেজের একমাত্র গোলে উড়তে থাকা চেলসি ভূপাতিত হয়েছে। প্রথম ৫ ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে ২১ গোল দিয়ে আসা কার্লো আনচেলত্তির দল ভাঙতে পারেনি সিটির রক্ষণ। ট্যাকটিকাল লড়াইয়ে ইতালিয়ান আনচেলত্তি হেরে গেছেন তাঁরই স্বদেশি রবার্তো মানচিনির কাছে। মাঝমাঠ থেকে একাই বল টেনে চেলসির জালে জড়িয়ে দিয়েছেন সিটি অধিনায়ক তেভেজ।
পরশু ম্যাচে দলে থাকা সিটি খেলোয়াড়দের মোট দাম ছিল প্রায় ২৫ কোটি পাউন্ড। তাঁদের মোট সাপ্তাহিক বেতনের পরিমাণ ১৭ লাখ ৫০ হাজার। অন্যদিকে চেলসির খেলোয়াড়দের মোট দাম আর বেতন ছিল যথাক্রমে প্রায় ১৯ কোটি ও সোয়া ১১ লাখ। ফলে চেলসির বিপক্ষে সিটির এই জয়টাকে আপনি এভাবেও দেখতে পারে—টাকায় কি না হয়!
কিন্তু না, আসলে শেষ পর্যন্ত লড়াইটা টাকায় দিতে হয় না, হয় ফুটবলীয় কৌশল আর প্রতিভায়। এই লড়াইয়ে সিটি জেতায় তাদের অভিনন্দিত করলেন আনচেলত্তি। এ নিয়ে লিগে টানা তৃতীয়বার সিটির কাছে হেরে যাওয়ার পর চেলসি কোচ সিটিকে লিগ শিরোপার অন্যতম দাবিদার বলে স্বীকৃতিও দিলেন।
মানচিনি অবশ্য শিরোপা-সংক্রান্ত আলোচনা এড়িয়ে চলেন। ম্যাচের আগে চেলসিকে এবারেরও চ্যাম্পিয়ন বলে রায় দিয়েছিলেন। ম্যাচের পরও অটল থেকেছেন সেই সিদ্ধান্তে। ভোলেননি তাঁর অধিনায়কের পিঠ চাপড়ে দিতেও, ‘কার্লোস সত্যিই দুর্দান্ত। শুধু গোল করেছে বলেই বলছি না। খেয়াল করে দেখবেন, প্রতিটি বলের জন্যও ও কী লড়াইটাই না করে। তা ছাড়া আক্রমণভাগে ওকে একাই খেলতে হচ্ছে। এটাও সহজ কাজ নয়।’ তেভেজকে অধিনায়ক বানিয়ে কী দারুণ কাজই না করেছেন—এই ভেবে নিজেই নিজের পিঠও চাপড়ে দিয়েছেন মানচিনি।
চুলটুল ছেঁটে ফেলায় মাঠে ইদানীং তেভেজকে চিনতে কষ্টই হচ্ছে। সেই মস্তানসুলভ হাবভাবও নেই। তবে আর্জেন্টাইন আবেগ এখনো অটুট। পরশু গোলের পর সেটি উৎসর্গ করেছেন তাঁর মাকে। মায়ের জন্মদিনের উপহার। বদলিসহ এই ম্যাচের ৩৪ খেলোয়াড়ের মোট মূল্য ৪৪ কোটি পাউন্ড (৪৮৪১ কোটি টাকা)। এমন দামি ম্যাচের একমাত্র গোল—মায়ের জন্মদিনে তেভেজের উপহারটাও কী দামি!

No comments

Powered by Blogger.