ঋণ নয়, প্রয়োজন বাণিজ্যসুবিধা

ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির বাংলাদেশ সফরের সময় মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স (এমসিসিআই) বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য বিষয়ে একটি সেমিনার করেছে। সেমিনারে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, বাণিজ্যসুবিধা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নানাভাবে বাধার মুখে পড়ছে।
সেমিনারে অনেক উদাহরণ দেওয়া হয়। যেমন, ভারতীয় একাধিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় রপ্তানি বাধা পায়। কেননা, পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাঅধিদপ্তর (ডিজিএফটি) এককভাবে ক্ষমতাবান নয়। আইনিভাবেই ভারতের একাধিক সরকারি সংস্থা ও কর্তৃপক্ষ সে দেশে বিদেশি বাণিজ্যের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের ক্ষমতা রাখে। তাই বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানিতে বিভিন্ন সময়ে তারা যে বাধার মুখে পড়ে, তা নিরসনে জটিলতা দেখা দেয়। সেমিনারে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে শুল্ক বাধার তুলনায় অশুল্ক বাধার কথাই বেশি বলা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেমিনারের প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান বলেছিলেন, প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফরে এলে বাণিজ্যবিষয়ক অসুবিধার কথা জানানো হবে।
যদিও প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশে এসেছিলেন ১০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করতে। গত জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এই ঋণ প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
যদিও ব্যবসায়ী এবং অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, ঋণ নয়, ভারতের কাছ থেকে বাণিজ্যসুবিধা পাওয়াই বেশি জরুরি। বিশেষ করে ভারত ও চীনে কত বেশি পণ্য রপ্তানি করা যায়, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যঘাটতি দুই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে। নিকটতম প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে, চীনের সঙ্গে ২৫০ কোটি ডলারের বেশি। বাণিজ্যঘাটতি কমাতে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের সংখ্যা যেমন বাড়াতে হবে, তেমনই পণ্য রপ্তানির বিদ্যমান অশুল্ক বাধা দূর করাও জরুরি।
সুতরাং, ভারত থেকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ নয়, বরং বাণিজ্যসুবিধা পাওয়াই হবে বেশি লাভজনক এবং কার্যকর। বাজারসুবিধা পাওয়াই উচিত যেকোনো আলোচনার মূলনীতি। বাংলাদেশ বহুদিন ধরে ভারতের কাছ থেকে শূন্য শুল্কসুবিধা চেয়ে আসছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে অর্থাৎ ১৯৯৬ সাল থেকেই এই আলোচনা চলে আসছে। ভারত ৪৬০টি স্পর্শকাতর পণ্যের একটি তালিকা তৈরি করেছে। এ থেকে ৪৭টি পণ্যে শুল্কসুবিধা দেবে বলে অনেক আগেই ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এই ৪৭টি কী ধরনের পণ্য, বাংলাদেশ এসব পণ্য তৈরি করে কি না, বাংলাদেশ কতটুকু লাভবান হলো, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ঋণ নিয়ে স্বাক্ষর হলেও বাণিজ্যসুবিধা ভবিষ্যতে কতখানি পাওয়া যাবে, সেই আলোচনা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

No comments

Powered by Blogger.