সাত দিনে আসছে ৮০ হাজার টন ভোজ্যতেল, তবু দাম ঊর্ধ্বমুখী

চট্টগ্রাম বন্দরে মাত্র এক সপ্তাহে নয়টি জাহাজে আসছে প্রায় ৮০ হাজার টন ভোজ্যতেল। এই ভোজ্যতেলের ৩০ হাজার টনই পরিশোধিত পামতেল। অথচ পাইকারি বাজারে গত তিন দিনে ভোজ্যতেল পামের দাম বেড়েছে মণপ্রতি ৫০ টাকা।
চট্টগ্রাম বন্দর বেতার নিয়ন্ত্রণকক্ষ সূত্রে জানা যায়, গত রোববার এমটি ইস্টার্ন গ্লোরি ও গতকাল সোমবার গ্লোবাল সি জাহাজ দুটি প্রায় ১১ হাজার টন ভোজ্যতেল খালাস করে বন্দর ত্যাগ করেছে। আর মোট ১৫ হাজার টন ভোজ্যতেলবাহী এমটি স্টার এশিয়া ও এশিয়ান গ্লোরি জাহাজ দুটি থেকে এখন ভোজ্যতেল খালাস হচ্ছে।
আরও পাঁচটি জাহাজে খালাসের অপেক্ষায় আছে প্রায় ৫৪ হাজার টন ভোজ্যতেল। এই পাঁচটি জাহাজ আগামী বুধবারের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বন্দরে আসছে বলে জানা গেছে।
এসব ভোজ্যতেলের মধ্যে রয়েছে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পামতেল এবং পরিশোধিত পামতেল।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব সৈয়দ ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে জানান, এ সপ্তাহে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ভোজ্যতেলের জাহাজ বন্দরে এসেছে। জাহাজ থেকে ভোজ্যতেল দ্রুত খালাস হচ্ছে।
পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার পাইকারি বাজারে পামতেলের সরবরাহ আদেশ (ডিও) বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি দুই হাজার ৫২০ টাকায় আর কেজিপ্রতি ৬৭ টাকা ৫২ পয়সায়। শনিবার দাম ছিল মণপ্রতি দুই হাজার ৪৭৫ টাকা আর কেজিপ্রতি ৬৬ টাকা ৩১ পয়সা। অর্থাৎ মণপ্রতি দাম বেড়েছে ৪৫ টাকা।
একইভাবে দুই দিন আগে সয়াবিনের সরবরাহ আদেশ বিক্রি হয়েছিল মণপ্রতি দুই হাজার ৬৮০ টাকা আর কেজিপ্রতি ৭১ টাকা ৮১ পয়সা। গতকাল সয়াবিনের সরবরাহ আদেশ বিক্রি হয় মণপ্রতি দুই হাজার ৭৪০ টাকা আর কেজিপ্রতি ৭৩ টাকা ৪১ পয়সায়। দাম বেড়েছে প্রতি মণে ৬০ টাকা।
এই সরবরাহ আদেশ নিয়ে কারখানা থেকে ভোজ্যতেল খালাস করে আনতে প্রতিমণে ২০ থেকে ৩০ টাকা খরচ হয়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা পণ্যের ক্রয়মূল্যের সঙ্গে এই খরচ যোগ করে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন।
চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক ও খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ভোজ্যতেলের সরবরাহ ভালো। তাই সংকট নেই। পরিশোধন কারখানা থেকে সরবরাহ স্বাভাবিক হলে দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। পাহাড়তলী বাজারের ব্যবসায়ী নেতা মো. মোজাহের আলম প্রথম আলোকে বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার প্রভাবে খুচরায় কেজিপ্রতি এক-দুই টাকা বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। বাজারে কেজিপ্রতি খোলা পামতেল ৭০ টাকা এবং সয়াবিন ৭৬ থেকে ৭৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ভোজ্যতেল আমদানি হয় তিন লাখ ৬৮ হাজার ১৯৬ টন। দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা ১২ লাখ টনের বেশি ধরা হলেও বছরের প্রথমার্ধে চাহিদার চেয়ে কম আমদানি হয়েছে।
তবে রমজানকে সামনে রেখে গত মে মাস থেকে ভোজ্যতেল আমদানি বাড়তে থাকে। মে ও জুন এই দুই মাসে ভোজ্যতেল আমদানি হয় প্রায় দুই লাখ টন। চলতি মাসে আমদানির পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ টনের কাছাকাছি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কাস্টম হাউসের তথ্যে দেখা যায়, গত মে মাসে যেসব পামতেল আমদানি হয়, সেগুলো শুল্কায়ন হয় অর্থাৎ আন্তর্জাতিক দর দেখানো হয় ৫৪ টাকা ১৫ পয়সা। জুন মাসে পামতেলের দর দেখানো হয় ৫১ টাকা ৩১ পয়সা থেকে ৫৩ টাকা ৮১ পয়সা পর্যন্ত। অর্থাৎ কাস্টম হাউসের তথ্য অনুসারে আগের চেয়ে কম দামে ভোজ্যতেল খালাস হয়েছে। একইভাবে মে মাসের চেয়ে জুন মাসে কম দামে সয়াবিন তেল খালাস হয়েছে। একদিকে আমদানি বেড়েছে অন্যদিকে দাম কমেছে। তাই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার কথা নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ রতন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, পরিশোধন কারখানার মালিকেরা ভোজ্যতেলে লোকসান দিয়ে আসছে। এরপরও সরবরাহ বাড়ায় বাজার সহনীয় আছে।

No comments

Powered by Blogger.