সুন্দরের পাশে অসুন্দরও

কখনো চোখ জুড়াল, কখনো চোখ কচলাতে হলো। পরশু রাতের স্পেন দিয়ে গেল দুরকম অনুভূতিই।
সুন্দর ফুটবলের পূজারি হয়ে ওঠা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নদের চেনা গেল দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে। তখনই তাদের অন্যরকম লাগছিল। ছন্দ পেয়ে টগবগ করেছে গোটা দল। ‘স্পেন সুন্দর ফুটবল খেলে’—সার্টিফিকেট পাওয়ার যোগ্যতাটা এই অর্ধেই তারা প্রমাণ করল।
বল পজেশন, দ্রুত প্রান্ত বদল করা, প্রতিপক্ষ রক্ষণ এলোমেলো করে দেওয়া, এগুলো সবই ছিল। ওয়ান টু ওয়ান টু করে একবার ডানে, আবার বাঁয়ে—দেখতে অসম্ভব ভালো লেগেছে। বলের ওপর স্প্যানিয়ার্ডদের নিয়ন্ত্রণ কত সুন্দর, বোঝা গেল তখনই।
কিন্তু গোলে শট ছিল খুবই কম। একটা কারণ হতে পারে, একশ ভাগ নিশ্চিত না হয়ে মারতে চায়নি তারা। সে কারণে বল চালাচালি করে কোনো ফল আসেনি। এটা বিরক্তিকর লেগেছে। কিন্তু যতই ভালো খেলুক, গোলে তো শট নেওয়া চাই। ইনিয়েস্তা-জাভিরা শট নেয়নি কেন, বোধগম্য নয়। ভিয়া আবারও ব্যতিক্রম। সে-ই দেখলাম গোলে শট নেওয়ার চেষ্টা করছে। গোলও পেল ওই ভিয়াই।
পর্তুগালের রক্ষণ অসাধারণ। টানা অনেক ম্যাচে গোল না খাওয়া, দারুণ গোলকিপিং, গোলরক্ষকের সঙ্গে ডিফেন্ডারদের বোঝাপড়া, ব্লকিং মিলে দলটির রক্ষণ দুর্ভেদ্য এক দেয়ালে পরিণত হয়েছিল। রক্ষণে ফাঁক বের হলেও প্রস্তুত ছিল গোলকিপার। স্পেনের গোটা তিনেক নিশ্চিত সুযোগ নস্যাৎ করেছে সে। রক্ষণ আর গোলরক্ষকের বদৌলতেই পর্তুগাল এত দূর এসেছে—এটা বললে বোধহয় ভুল হবে না।
তাহলে রোনালদো? তার কথা না বলাই ভালো। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ফুটবলারটি কোনো অবদানই রাখতে পারল না দলের জন্য। নিষ্প্রভ এক রোনালদো ছিল মাঠে, যে শুধু ফ্রি-কিক নিচ্ছে। এ ছাড়া আর করবেই-বা কী! জোনাল মার্কিংয়ে পড়ে রোনালদো যে বোতলবন্দী। জায়গা পরিবর্তনের চেষ্টা করেছে সে, কিন্তু আগাগোড়া কড়া মার্কিংয়ে থেকে সেই চেষ্টা বিফল।
প্রথম ১০-১৫ মিনিট স্পেন স্পেনের মতো খেলল না, যা অবাক করেছে আমাকে এবং খুবই ‘অসুন্দর’ লাগছিল স্পেনকে। শুরু থেকেই একটু লম্বা খেলার চেষ্টা করল, পর্তুগালও তা-ই। দুদলের সৌজন্যেই তখন প্রচুর মিস পাস। ফ্লাংকের দিকে বেশি গিয়েছে দুদলই। পর্তুগাল বাঁ দিকের ফ্লাংকটা বেশি ব্যবহার করেছে। এই করতে করতে প্রথম ২২-২৩ মিনিট খেলাটা একদমই ভালো লাগল না।
আগের ম্যাচগুলো দেখে জাপানের ব্যাপারে বাড়তি প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, সেটি তারা নিজেরাই শেষ করে দিল। বাতাসে বলের দখলে জাপান জেতেনি। গতিতেও হার। ভালো খেলেনি প্যারাগুয়েও। দুদলই খেলল ছন্নছাড়া ফুটবল। উদ্দেশ্যবিহীন লাথালাথি আরকি!
তিনটি পাস একসঙ্গে কারওই ঠিকমতো হয়নি। লাতিন দল হিসেবে প্যারাগুয়ের খেলায় সেই বল পজেশন, বল নিয়ন্ত্রণ—এসব তো ছিলই না। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে এমন ম্যাচ!

No comments

Powered by Blogger.