মনঃসংযোগ করতে না পারার দোষ কিশোর কিশোরীদের নয়

পড়ালেখা বা বাড়ির কাজ করার সময় মনঃসংযোগ করতে কিশোর-কিশোরীদের যে সমস্যা হয়, সে জন্য তাদের কোনো দোষ নেই। কারণ এই বয়সে তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ আগে যা ধারণা করা হতো, তার চেয়ে কম হয়। এ সপ্তাহে জার্নাল অব নিউরো সায়েন্স নামের সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এ দাবি করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কিশোর বয়সে দেহের গঠন মোটামুটি কম বয়সী একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মতো হলেও কিশোর-কিশোরীদের মস্তিষ্কের গঠন ছোট ছেলেমেয়েদের মস্তিষ্কের গঠনের কাছাকাছি পর্যায়ে থাকে। অর্থাৎ তাদের মস্তিষ্ক পূর্ণবয়স্ক মানুষের তুলনায় বেশি অগোছালো থাকে এবং তারা দ্রুত মনোযোগ হারায়। গবেষকেরা জানান, বয়স ত্রিশের কোঠায় পৌঁছালে বা বিশের শেষ ভাগে সাধারণত একজন মানুষের মস্তিষ্কের বিকাশ পূর্ণ হয়।
গবেষণাপত্রটির যৌথ লেখকদের একজন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইনস্টিটিউট অব কগনিটিভ নিউরো সায়েন্স বিভাগের গবেষক আইরোইসে ডুমোনথেইল বলেন, ‘বাইরের কোনো ঘটনা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে শ্রেণীকক্ষে মনঃসংযোগ করা সব সময় কিশোর-কিশোরীদের জন্য সহজ হয় না। অথবা অঙ্ক কষার সময় ছোট ভাইবোনেরা আশপাশে দুষ্টুমি করলেও তাদের পক্ষে ওই অঙ্কে মনঃসংযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়।’ তিনি বলেন, ‘দ্রুত এই মনোযোগ হারানো বা মনঃসংযোগ ধরে না রাখার ব্যাপারে কিশোর-কিশোরীদের কোনো দোষ নেই। তাদের মস্তিষ্কের তুলনামূলক স্বল্প বিকাশই এ জন্য দায়ী। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের সমান মানসিক ক্ষমতা একটি কিশোর বা কিশোরীর থাকে না।’
এই গবেষণার সময় একদল কিশোর-কিশোরীর মস্তিষ্কে ‘এমআরআই (ম্যাগনেটিক রিজোনেন্স ইমেজিং) স্ক্যান’ করা হয়। এ সময় তাদের একটি সমস্যা সমাধান করতে বলা হয় এবং মনোযোগ নষ্ট করার ব্যবস্থা রাখা হয়। বিজ্ঞানীরা দেখতে পান, কিশোর-কিশোরীদের মস্তিষ্কের ‘প্রফ্রন্টাল কর্টেক্স’ নামের যে অংশটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও একাধিক কাজের নির্দেশের জন্য দায়ী, সে অংশটি একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের মস্তিষ্কের তুলনায় কম কার্যকর।
গবেষক দলের নেতা সারাহ-জাইন ব্লাকমোর বলেন, ‘আমরা এত দিন জানতাম, ছোট ছেলেমেয়েদের মস্তিষ্কের ওই অংশটি বিশৃঙ্খলভাবে কাজ করে। কিন্তু আমরা ধারণা করিনি, এটা একজন মানুষের বয়সের বিশের কোঠার শেষ ভাগ বা ত্রিশের কোঠার শুরু পর্যন্ত চলতে থাকে। কিশোর বয়সেও মস্তিষ্কের ওই অংশের বিকাশ চলতে থাকে। তাদের চিন্তাগুলোও তাই অনেক বেশি বিশৃঙ্খল থাকে।’

No comments

Powered by Blogger.