মরিনহোর শ্রদ্ধা, ফন গলের সমীহ

গুরু-শিষ্যের লড়াই শেষ হয়েছে কাল রাতেই। লুই ফন গল জিতলেন নাকি হোসে মরিনহো—এ খবরও নিশ্চয়ই আপনাদের জানা। তবে লড়াইয়ের আগেও লড়াই হয়। কথার লড়াই। আর মরিনহো যেখানে আছেন, সেখানে প্রতিপক্ষের উদ্দেশে বাক্যবাণ ছুড়বেন না, তা কী করে হয়! তবে আশ্চর্য ব্যতিক্রম, কাল মাদ্রিদের ফাইনালের আগে মরিনহো যথেষ্ট শ্রদ্ধা নিয়ে কথা বলেছেন। ফন গলও যথেষ্ট সমীহ দেখিয়েছেন মরিনহোকে।
কারণটা আন্দাজ করে নেওয়া যায়। মরিনহোর তাঁর একসময়ের ‘মাস্টার’রের প্রতি আজও শ্রদ্ধাবনত। পরশু সংবাদ সম্মেলনে পর্তুগিজ এই কোচ তো স্বীকার করেই নিলেন, ‘তিনি (ফন গল) দুর্দান্ত এক কোচ। তাঁর কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। তাঁর সঙ্গে যে কয়েক বছর সময় কাটিয়েছি, নিঃসন্দেহে সেটি আমাকে আরও শাণিত করেছে। তিন বছর আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। তাঁর বাড়ি আর আমার বাড়ি ছিল মাত্র ৫০ মিটার দূরত্বে। তাই বলা চলে, দিনের প্রায় ২৪ ঘণ্টাই আমরা একসঙ্গে কাজ করতাম। আমার জন্য সেটি ছিল স্পেশাল একটা সম্পর্ক।’
ফন গলের কাছ থেকে শিখিয়েছেন, কিন্তু ফুটবল-দর্শনে দুজনে তো দুই মেরুর। ফন গল এখনো আক্রমণাত্মক ফুটবলে বিশ্বাসী। আর মরিনহোর নামের সঙ্গে জুটেছে অতিরক্ষণাত্মক অপবাদ। মরিনহো জানিয়েছেন, পরিশ্রমটাই শেষ কথা। এবং এই দর্শন তাঁকে শিখিয়েছেন ফন গলই, ‘আমি পশুর মতো খেটেছি ওর সঙ্গে কাজ করার সময়। আমার জন্য তার পরও সেটি ছিল আনন্দের। আমি তাঁর কাছ থেকে একটা জিনিস শিখেছি। সফল হতে গেলে আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতেই হবে।’
ফন গল নিজে কি এখনো মরিনহোকে তাঁর শিষ্য ভাবেন? একগাল হেসে এই ডাচ কোচ জানালেন, মরিনহো তো জনপ্রিয়তায় অনেক আগেই ছাপিয়ে গেছেন তাঁকে, ‘মরিনহোর প্রজন্মের কথা যদি বলেন, তবে ও-ই সবার সেরা।’ নিজেকে ‘মরিনহোর প্রজন্ম’ থেকে আলাদাই রাখতে চান ফন গল। তবে বার্সেলোনায় দুজনে একসঙ্গে কাজ করার সময়ই টের পেয়েছিলেন, তাঁর এই সহকারী অনেক দূর যাবে। নির্দ্বিধায় সেটি স্বীকার করে নিলেন ফন গল, ‘সহকারী হিসেবে ও ছিল অসাধারণ। প্রতিপক্ষের খুঁটিনাটি চমত্কার বিশ্লেষণ করে ফেলত। মাঝেমধ্যে আমি তো ওকে (কাপের অগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোয়) মূল কোচের দায়িত্বই ছেড়ে দিতাম।’
একদিক দিয়ে শিষ্যের চেয়ে গুরু এগিয়েই আছে। চেলসির কোচ থাকার সময় থেকেই এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া কোচ মরিনহোই। কাল একটা জায়গায় অবশ্য সমানে সমান থেকে লড়াইয়ে নেমেছিলেন দুজন। যে-ই শিরোপা জিতেছেন, ভিন্ন ভিন্ন দুটো দলের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা মাত্র তৃতীয় কোচ হিসেবে নাম লিখিয়েছেন ইতিহাসে। কে লেখালেন? গুরু? নাকি শিষ্য।

No comments

Powered by Blogger.