ইউরোপের আকাশে আবার উড়তে শুরু করেছে বিমান

আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের মেঘ কমতে শুরু করায় গতকাল মঙ্গলবার ইউরোপের আকাশে আবার বিমান চলাচল শুরু হয়েছে। টানা পাঁচ দিন কার্যত বন্ধ থাকার পর অনেক দেশে কমবেশি বিমান চলাচল করেছে। ফলে বিভিন্ন দেশে আটকে পড়া লোকজনের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসছে।
তবে এর মধ্যেই যুক্তরাজ্যের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আবার সতর্কতা জারি করে বলেছে, আইসল্যান্ড থেকে আগ্নেয়গিরির নতুন একটি ছাইয়ের মেঘ আবার ইউরোপের দিকে আসছে। এতে করে বিমান চলাচল পুরোদমে শুরুর ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
বিমান চলাচলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বৃহত্তম সংকট মোকাবিলায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর পরিবহনমন্ত্রী ও বিশেষজ্ঞরা গত সোমবার ভিডিও কনফারেন্স করেন। ওই আলোচনায় বিমান চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। এরপর মঙ্গলবার সকাল থেকে ইইউর ২৭টি দেশে বিমান চলাচল শুরু হয়।
গতকাল সকালে ফ্রান্সের প্যারিস, স্পেনের মাদ্রিদ এবং জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে বিমান ওঠানামা শুরু হয়। তবে এদিন অনেক ফ্লাইট বাতিল করা হয়। তখন আশা করা হয়, মঙ্গলবার দিনের মধ্যে ইউরোপের অনেক রুটেই বিমান চলাচল শুরু করা সম্ভব হবে।
এদিকে যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ড থেকে গতকাল আবার বিমান উড্ডয়ন শুরু হয় এবং ইংল্যান্ডের উত্তরাংশ থেকে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তবে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ জানায়, জাতীয় বিমান চলাচল সংস্থা ন্যাটস নতুন করে সতর্কতা জারি করায় তারা স্বল্পপাল্লার ফ্লাইটগুলো বাতিল করেছে।
উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্ট বিমানবন্দরের এক মুখপাত্র জানান, তাঁরা আশা করছেন শিগগির বিমান চলাচল শুরু করতে পারবেন। তবে এ জন্য তাঁরা ন্যাটসের পরামর্শের অপেক্ষায় আছেন।
নেদারল্যান্ডের পরিবহনমন্ত্রী ক্যামিয়েল ইউরলিংস জানান, তাঁর দেশে বিমান চলাচল শুরু হয়েছে। তবে পরিস্থিতির অবনতি হলে আবারও তা বন্ধ করা হতে পারে বলে তিনি সতর্ক করে দেন।
সুইজারল্যান্ড ও ইতালির উত্তরাংশেও গতকাল বিমান চলাচল শুরু হয়। ফ্রান্স তার কিছু রুটও চালু করে। সকাল থেকে বেলজিয়াম ও ডেনমার্কে বিমান চলাচল শুরু হয়। এ ছাড়া অস্ট্রিয়া, এস্তোনিয়া, হাঙ্গেরি ও তুরস্কও আবার বিমান চলাচল শুরু করেছে। তবে ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড ও নরওয়ে গতকালও আবারও বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, বিমান চলাচল শুরুর বিষয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। ইউনিয়নের পরিবহনবিষয়ক কমিশনের কর্মকর্তা হেলেন কেয়ার্নস জানান, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সমন্বয়ের বেশ অভাব। একেক দেশ একেকভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
জার্মানির হ্যানোভার থেকে আমাদের প্রতিনিধি সরাফ আহমেদ জানান, গত রোববার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ঘণ্টাখানেক পর আবার তা বলবত্ করায় সমালোচনার মুখে পড়েন জার্মান পরিবহনন্ত্রী রামস্যাউয়ার। তবে মন্ত্রী বলেছেন, বিমানপথ সম্পূর্ণ নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত তিনি নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার পক্ষে।
ইইউ দেশগুলোর পরিবহনমন্ত্রীরা বিমান সংস্থাগুলোর চাপ ও সমালোচনার মুখে সোমবারের ভিডিও কনফারেন্সে বসেন। ইইউর পরিবহনবিষয়ক প্রধান সিম কার্লোস জানিয়েছেন, ওই বৈঠকে পরিবহনমন্ত্রীরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে বিমান চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত দেন।
তবে ইউরোপের আকাশের যেসব অংশে এখনো ছাইয়ের মেঘ ঘনীভূত আছে, বিমানগুলো সে এলাকা পরিহার করে চলবে।
আমাদের প্রতিনিধি আরও জানান, বার্লিনে বাংলাদেশ-জার্মানিবিষয়ক একটি সম্মেলনে যোগ দিতে এসে আটকা পড়েছেন সুলতানা কামালসহ বেশ কয়েকজন। তবে ওই সম্মেলনে যোগ দেওয়া বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব সড়কপথে বার্লিন থেকে রোম হয়ে দেশে ফিরেছেন।
এদিকে গত বুধবার থেকে অগ্ন্যুৎপাত শুরু করা আইসল্যান্ডের এয়াকিউয়াতলুয়োকুটল আগ্নেয়গিরি মঙ্গলবার কিছুটা শান্ত ছিল। তিনটি জ্বালামুখ দিয়ে থেমে থেমে এখনো অগ্ন্যুৎপাত হলেও ছাইয়ের পরিমাণ কমে এসেছে।
পাঁচ দিন ধরে ইউরোপের আকাশে বিমান চলাচল বন্ধ থাকার কারণে সারা বিশ্বের লাখ লাখ ভ্রমণকারী বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়েছে। বিমানপথে পরিবহন করা হয়, এমন পণ্যের সংকট শুরু হয়েছে। ইউরোপের আন্তদেশীয় ট্রেনগুলোতে যাত্রী বেড়ে যায় কয়েক গুণ। অতিরিক্ত ট্রেন চালিয়েও সংকট কাটানো যাচ্ছে না। বিভিন্ন স্থানে আটকে পড়া ভ্রমণকারীরা গাড়িসহ বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে। ফ্রান্সে একই সঙ্গে রেল ধর্মঘট শুরু হওয়ায় সে দেশে পরিবহনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইএটিএ) জানিয়েছে, বিশ্বের বিমান কোম্পানিগুলো প্রতিদিন গড়ে ২৭ কোটি মার্কিন ডলার লোকসান দিচ্ছে। বিরাট ক্ষতির মুখে স্ক্যান্ডিনেভিয়া এয়ারলাইনস তাঁদের আড়াই হাজার কর্মচারীকে ছাঁটাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গতকাল হাঁপানি ও ফুসফুসের অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অগ্ন্যুৎপাতের ছাই থেকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দেয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অতীতে আইসল্যান্ডেরই আরেক বড় অগ্ন্যুৎপাতের কারণে ইউরোপজুড়ে যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ও মহামারি হয়েছিল, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। বিষাক্ত গ্যাসেও সে সময় হাজার হাজার লোকের মৃত্যু হয়।

No comments

Powered by Blogger.