আফগানদের সঙ্গে শেষ লড়াই by মাসুদ আলম

বাংলাদেশ ২: ০ আফগানিস্তান। এটা কোনো বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচের স্কোরলাইন নয়। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের আগের ছয় সাক্ষাতের দুটি জয়ের হিসাব। বাকি চার ম্যাচ ড্র। অর্থাত্ ফুটবল মাঠে বাংলাদেশকে কখনো হারাতে পারেনি আফগানিস্তান।
আজ হারিয়ে দিলে একটি স্বপ্নের মৃত্যু হবে। স্বপ্নটা ১৯৯৯ কাঠমান্ডুর পর এই প্রথম দক্ষিণ এশীয় গেমস ফুটবলের সোনা জয়। এ জন্য আজ এসএ গেমস ফুটবলের ফাইনালে জয় চাই আফগানিস্তানের বিপক্ষে।
বাংলাদেশ পারবে? মুখে উত্তর না দিয়ে বাংলাদেশের সার্বিয়ান কোচ জোরান জর্জেভিচ প্রশ্নকর্তা সাংবাদিকের গলা টিপে ধরলেন! উদ্দেশ্যে এটা বোঝানো যে, ‘ডু অর ডাই। হয় জেত, নয় মরো। মাঝামাঝি কিছু নেই!’
মালদ্বীপের প্লে-মেকার আশফাক আলী বাংলাদেশকেই জয়ী ভাবছেন, ‘সাফ ফুটবলের চেয়ে এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ভালো খেলছে। সাফে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলা বাংলাদেশ এবার দেখছি হাওয়ায় বল না ভাসিয়ে জমিনে খেলার চেষ্টা করছে। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের জেতা উচিত।’
‘বাংলাদেশের জেতা উচিত’ কথাটা যেন হাওয়ায় ভাসছে। এক সাধারণ দর্শকের পর্যবেক্ষণ, ‘বাংলাদেশ দেখবেন ৩-১ গোলে জিতবে। এবার দল ভালো খেলছে, এখন পর্যন্ত চার ম্যাচেই জয়। কোনো গোলও খায়নি!’
ঠিক তাই। ভুটানকে ৪-০, নেপাল ৩-০, মালদ্বীপ ম্যাচে ১-০। সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ১-০। এমন ঝকঝকে পরিসংখ্যান ছিল ঢাকায় ২০০৩ সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়নশিপেও। ফাইনাল ড্র হলেও টাইব্রেকারে বাংলাদেশের জয় ধরলে টানা পাঁচ জয় ছিল সেবার। আজ জিতে ওই পরিসংখ্যানকে ম্লান করতে চায় বাংলাদেশ!
ফুরফুরে মেজাজের বাংলাদেশকে আফগানিস্তান কি সহজেই জিততে দেবে? ক্লাব থেকে বছরে ৪-৫ হাজার ডলারের চুক্তি, মাসিক আয় ২-৩ শ ডলার। বাংলাদেশের ফুটবলারদের আয়ের চেয়ে অনেক পেছনে যারা, সেই আফগানরা দুঃখকষ্ট ভুলে মরিয়া লড়াই দিতে তৈরি। বছর দশেক আগে ফিফার নিষেধাজ্ঞামুক্ত হওয়ার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি এই প্রথম কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে। উত্সবে মেতে ওঠার দুর্লভ এক মুহূর্তের অপেক্ষায় আফগান ফুটবলাররা।
এমন ম্যাচে আফগান দল পাচ্ছে না অধিনায়ক ইসরাফিল কোহিস্তানিকে। মালদ্বীপের বিপক্ষে সেমিফাইনালে লাল কার্ড দেখায় আজ তিনি মাঠের বাইরে। ১৯ বছর বয়সী তরুণ সহ-অধিনায়ক জহিব ইসলামের আলাদা প্রেরণা আছে, ‘কাবুলে বড় পর্দায় ফাইনাল দেখতে তৈরি সবাই। দেশ থেকে অনেক শুভেচ্ছা বার্তা এসেছে, সবাই উচ্ছ্বসিত। চেষ্টা করব এটা কাজে লাগাতে।’
আফগানিস্তান চেষ্টা করলেও কাজ হবে না, বাংলাদেশই জিতবে—বাংলাদেশ দলের এক কর্মকর্তার মনোভাব এমনই দেখাল। ‘আফগানিস্তান কোনো দলই না’—জাতীয় তাচ্ছিল্য তাঁর মুখে, ‘ওদের প্লেয়ার তো দু-তিনজন। বাংলাদেশ এদের সঙ্গে না জিতলে কার সঙ্গে জিতবে?’ পাল্টা প্রশ্ন তাঁর (’৭৯-তে আগাখান গোল্ডকাপে জয় ৪-১-এ, ২০০৪ ইসলামাবাদ গেমসে ২-১-এ জয়)!
টেকনিক, ট্যাকটিকসে বাংলাদেশ এগিয়ে বটে, তবে শারীরিক দিক থেকে আফগানরা এগিয়ে। কথাটা বাংলাদেশ অধিনায়ক আমিনুলের সামনে তুলুন, তিনি একটা কথাই বলবেন, ‘কে কোন দিক থেকে এগিয়ে-পিছিয়ে সেই হিসাব করে লাভ নেই। এখন আমরা শেষ ধাপে, জয় দিয়েই শেষটা করতে চাই।’
শেষটা জয় দিয়ে হবে তো? ১৯৮৪, ’৮৫, ’৮৯, ’৯৫ গেমস ফাইনালের হারের দীর্ঘশ্বাস তাড়া না করলেই হয়

No comments

Powered by Blogger.