পিলখানা হত্যার বিচার

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর পার হতে চললেও অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এখনো প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। এর আগে সরকার ও সেনাবাহিনীর গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও তারা নির্দিষ্টভাবে কোনো অপরাধীকে শনাক্ত করেনি। এই প্রেক্ষাপটে হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে নতুন করে বাগ্যুদ্ধ শুরু হওয়া দুঃখজনক। এ ধরনের বাগ্যুদ্ধ যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত, তেমনি অনৈতিকও।
গত বছরের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত এ নৃশংস ঘটনায় ৭৪ জন নিহত হন, যার মধ্যে ৫৭ জনই সেনা কর্মকর্তা। অন্য কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের পরিস্থিতি হলে বিরোধী দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই সরকার সিদ্ধান্ত নিত। আবার বিরোধী দলও পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা না করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিত। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এ দুইয়েরই প্রচণ্ড অভাব রয়েছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর সরকার যে ধৈর্য ও বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে, মোটামুটি সব মহলে তা প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু তারা বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন বোধ করেনি। হত্যার বিচার দূরের কথা, সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই নতুন করে সরকার ও বিরোধী দল বাহাসে লিপ্ত হয়েছে।
গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘটনার দিন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সেনা নিবাসের বাড়িতে না থাকা এবং লন্ডন থেকে তাঁর ছেলে তারেক রহমানের টেলিফোন করা নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন। জবাবে বিএনপির নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অপরাধ আড়াল করতে আটক অনেক বিডিআর সদস্যকে মেরে ফেলা হয়েছে। বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও তাঁরা অভিযোগ এনেছেন। তদন্তাধীন কোনো বিষয়ে এ ধরনের ঢালাও মন্তব্য সমীচীন নয়।
এ ধরনের প্রচারণায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সত্য, আত্মরক্ষার সুযোগ পায় অপরাধী এবং বাধাগ্রস্ত হয় ন্যায়বিচার। সরকার বা বিরোধী দল জেনেশুনেই কি এ কাজ করছে? তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছে, সে সবের পক্ষে কি যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ তাদের হাতে আছে। থাকলে সেগুলো তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়াই হবে উত্তম কাজ। আগে পারস্পরিক দোষারোপে অনেক গুরুতর অপরাধের মামলা ধামাচাপা পড়ে গেছে। প্রকৃত অপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিকে নিয়ে টানাটানিও কম হয়নি। ফলে জজ মিয়া কাহিনির সৃষ্টি হয়েছে। এই ধারা আর চলতে দেওয়া যায় না।
কোন আইনে পিলখানা ঘটনার বিচার হবে, সে নিয়ে বিতর্কও ছিল। শেষ পর্যন্ত আদালতই ঠিক করে দেন, বিডিআর আইনে বিদ্রোহের এবং ফৌজদারি আইনে হত্যা ও লুটপাটের বিচার হবে। সে অনুযায়ী ছয়টি বিশেষ আদালতে বিদ্রোহের বিচারকাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু যে ঢিমেতালে বিচার চলছে তাতে অনেক বছর লেগে যাবে। বিচার দ্রুত শেষ করতে আদালতের সংখ্যা বাড়ানোর বিকল্প নেই। অন্যদিকে তদন্তকাজ শেষ না হওয়ায় হত্যার বিচারকাজ শুরুই হতে পারছে না।
অতএব রাজনৈতিক বাহাস বন্ধ করে যত দ্রুত সম্ভব পিলখানা হত্যার বিচারকাজ শুরু করতে হবে। সরকার ও বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের কাছ থেকেও এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল আচরণই প্রত্যাশিত। তাদের এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.