সন্দীপের ছুটে চলা-বদিউজ্জামান

সাঁতারপুলের নীল জলের দাপাদাপি তখন থেমে গেছে। ধীরে ধীরে বাড়ির পথ ধরছে দর্শক। বিকেলের একচিলতে সোনারোদের আভা পানির ওপর দিয়ে ঠিকরে পড়ছে তাঁর মুখে। সবাই উঠে গেলেও তখনো সাঁতরে চলেছেন তিনি। একটু আগে ২০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে দক্ষিণ এশীয় গেমসের রেকর্ড গড়ে সোনা জেতা ভারতীয় তরুণ সন্দীপ সেজওয়াল কি একটু ক্লান্ত?
গত ২৩ জানুয়ারি বাইশে পা দিয়েছেন। জলের সঙ্গে সখ্য ১৪ বছর আগে থেকেই। আলোকচিত্রী বাবা রামপ্রকাশ মারা গেছেন দুই বছর আগে। মা গৃহিণী। ছোট বোন রিতু তাঁর চেয়ে বছর দুয়েকের ছোট। তিনিও সাঁতারে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। কোনো কিছু পাওয়ার আশায় নয়, শুধু জলকে ভালোবেসেই তাঁদের দুই ভাইবোনের সাঁতারে আসা।
ভারতের এক নম্বর সাঁতারু সন্দীপ টানা চার বছর ধরে এই আসনটা ধরে রেখেছেন। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে আছেন ৫৩ নম্বরে। পানিতে নামলেই পদক। পদক জেতা যেন অভ্যাস হয়ে গেছে ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার এই তরুণের। তাঁর শোকেসে জাতীয় আর আন্তর্জাতিক মিলিয়ে কতগুলো পদক সাজানো আছে সেটা মনে করতেই পারলেন না, ‘আমি গুনে বলতে পারব না কতগুলো জিতেছি।’ প্রধানত ৫০ মিটার, ১০০ মিটার ও ২০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে সাঁতরে থাকেন নয়াদিল্লির এই সাঁতারু। এই বছর অক্টোবরে নিজের শহরেই শুরু হবে কমনওয়েলথ গেমস। সেখানেও সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান।
মাত্র কদিন আগেই দিল্লির সেন্ট যোশেফ কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করেছেন। আরও আগেই এটি শেষ করতে পারতেন। শুধু সাঁতারের প্রস্তুতির জন্যই লেখাপড়া বন্ধ রেখেছিলেন কয়েক মাস।
ভারতে ক্রিকেট হলো ধর্মের মতো একটা আবেগ। ক্রিকেটার না হয়ে কেন সাঁতারু হওয়ার শখ হলো? সাঁতারু হয়েছেন, কারণ এই খেলাটি ‘ব্যক্তিগত সাফল্য’ দেয়।
দক্ষিণ এশিয়ার এত বড় সাঁতারু কিন্তু তাঁর আদর্শ কেউ নেই। না, মার্ক স্পিত্জ, না মাইকেল ফেল্প্স, না ইয়ান থর্প। তিনি নিজেই নিজের আদর্শ, ‘আমি কাউকে অনুসরণ করি না। সব সময় চেষ্টা করি নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার।’ গত অলিম্পিকে গিয়েছিলেন বেইজিংয়ে। খুব কাছ থেকে দেখেছেন মাইকেল ফেল্প্সকে। একই সঙ্গে সাঁতরেছেনও। কিন্তু ভালো কিছু করতে পারেননি। হয়েছিলেন ৩৫তম। তবে ২০১২ লন্ডন অলিম্পিক তাঁকে একটা সোনা জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। অভিনব বিন্দ্রার মতো তারকাখ্যাতি পেতে লোভ জেগেছে তাঁর, ‘আমি এখন থেকেই টার্গেট করেছি এবার অলিম্পিকে কিছু একটা করব। সেটা অবশ্যই সোনার লড়াই।’ বলতে বলতে তাঁর ফরসা মুখে ছড়িয়ে পড়ল সোনালি হাসির আভা। বড় সাফল্য তাঁকে পেতেই হবে। বাবা মারা যাওয়ার আগে তাঁকে এই একটি কথাই বলে গিয়েছিলেন। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতেই এগিয়ে চলেছেন সন্দীপ।

No comments

Powered by Blogger.