অর্জন আর বিসর্জনের গল্প by আরিফ রনি,

তাকে দেখার জন্য হাপিত্যেশ করে মরছিলেন সবাই। অবশেষে গতকাল তার দেখা পাওয়া গেল। টানা দু দিন গোমড়া মুখে থাকার পর কাল হেসে উঠলেন ‘সূর্যিমামা’। আলোকস্বল্পতায় দু দিনে প্রায় ৯০ ওভার খেলা না হওয়া জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে কাল আলোর অভাব ছিল না। অন্তত বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময়। কিন্তু আলোটা হারিয়ে গেল বাংলাদেশ দল থেকে!
প্রথম দেড় দিনে বাংলাদেশ দলে ছিল খুশির জোয়ার। দ্বিতীয় দিনের শেষ দিকে আস্তে আস্তে ভাটার টান। আর তৃতীয় দিন শেষে সেই খুশি প্রায় উধাও। ম্যাচের এখনো অনেক বাকি, হতে পারে অনেক কিছুই। তবে বোলারদের সৌজন্যে পাওয়া ভারতকে চাপে ফেলার সুবর্ণ সুযোগটা বাংলাদেশ হাতছাড়া করেছে ব্যাটসম্যানদের নিদারুণ ব্যর্থতায়। বড় লিড পাওয়া তো দূরের কথা, উল্টো ভারতই পেয়ে গেছে লিড, হোক না সেটা এক রানের।
দ্বিতীয় দিনে তিন উইকেট হারানোর পরই বড় লিডের স্বপ্ন শেষ। মোটামুটি মাঝারি আকারের একটা লিডের দিকে বাংলাদেশ তাকিয়ে ছিল। তাকিয়ে ছিল দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ মোহাম্মদ আশরাফুল এবং এই ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য দলে রাখা রকিবুল হাসানের দিকে। কিন্তু প্রথম সেশনেই এই দুজনের সঙ্গে আউট অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও।
৯৮ রানে নেই ৬ উইকেট, বাংলাদেশকে ১৫০-র ভেতর আটকে দিয়ে কালকেই শ দুয়েক রান তুলে ফেলবে ভারত—শঙ্কা তখন এমনটাই। কিন্তু দাঁড়িয়ে গেলেন দুজন। একজন এসব পরিস্থিতিতেই রান করাটাকে যেন নিজের ব্রত করে নিয়েছেন। অন্যজন হঠাত্ করেই যেন হয়ে উঠেছেন দলের জন্য বড় এক আস্থার জায়গা। মুশফিকুর রহিম এই নিয়ে টানা ৯ ইনিংস দুই অঙ্ক পার করলেন, গত ১৬ ইনিংসে দুই অঙ্কের নিচে আউট হয়েছেন মাত্র তিনবার। তবে ১৬ ইনিংসের ১০ বারই ৩০ পার করেও ফিফটি মাত্র ৩টি। কাল আরও একবার সেই রোগে আক্রান্ত। ৪৪ রানের মাথায় কী যে হলো, স্পিনের বিপক্ষে উঠিয়ে মারতে গেলেন অমিত মিশ্রকে। বাউন্ডারি তো বহুদূর, পার করতে পারেননি ৩০ গজের বৃত্তই।
এর আগে দুই টেস্টের চার ইনিংসে একবার মাত্র দুই অঙ্ক ছুঁয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু সে তো ছয় মাস আগের ঘটনা। বছর শুরুর ত্রিদেশীয় ক্রিকেট দেখেছে নতুন এক মাহমুদুল্লাহকে। ব্যাট হাতে ওয়ানডের ফর্মটা বয়ে আনলেন টেস্টেও। প্রথম ফিফটিকে যে আরও টেনে নিতে পারলেন না, এতে দায় কিছুটা আছে মুশফিকের। মুশফিক আউট হওয়ায় দুজনের জমে যাওয়া ১০৮ রানের জুটিটাই শুধু ভাঙল না, সপ্তম উইকেটের পতন মাহমুদুল্লাহর ওপর এনে দিল দ্রুত রান তোলার চাপ। সেই চাপে স্ট্রাইক ধরে রাখার চেষ্টা করতে গিয়েই হলেন আউট।
অবশ্য এই রানই বা কম কি! ভারতের বিপক্ষে ১১ ইনিংসে এটি বাংলাদেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ স্কোর। অভিষেক টেস্টে ৪০০-এর পর ভারতের বিপক্ষে আড়াই শ পেরোনো মাত্র দুবার। ২০০৪ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে (৩৩৩), আর ২০০৭ সালে মিরপুরে দু দেশের সর্বশেষ টেস্টে (২৫৩)। ওয়েস্ট ইন্ডিজে স্মরণীয় ওই সিরিজেও দলের রান আড়াই শ পেরিয়েছে মাত্র একবার। এর আগের সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও একবার, আর তার আগের সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পারই হয়নি, তবে আড়াই শ ছুঁয়েছে একবার।
শুরু ভালো হোক আর না হোক, স্কোরটাও যেন বাধা একটা গণ্ডির ভেতরেই, ওই ১৬০-১৭০ থেকে ২৪০। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের এই চেহারায় তাই বিস্ময়ের কিছু নেই। শুধু অনেকবার করা প্রশ্নটাই আরেকবার করতে হচ্ছে, তাদের সামর্থ্য কি তবে এটাই! তার চেয়ে বড় প্রশ্ন, বোলারদের অর্জনটা কি বিসর্জনই দিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা?

No comments

Powered by Blogger.