আইপিওর টাকা ফেরত পাওয়ার পদ্ধতি আগে জানিয়ে দিতে হবে

এখন থেকে কোনো কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) লটারিতে অকৃতকার্য হওয়া আবেদনকারীরা নিজ ব্যাংক হিসাবে অথবা সরাসরি রিফান্ড ওয়ারেন্টের মাধ্যমে টাকা ফেরত নিতে পারবেন।
তবে আবেদনকারী কীভাবে টাকা ফেরত নিতে চান, তা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির আইপিওর আবেদন ফরমে আগে থেকেই উল্লেখ করতে হবে। এ জন্য আবেদন ফরমে আলাদা একটি ছক যুক্ত করা হবে। যেখানে টিক চিহ্নের মাধ্যমে আবেদনকারী কীভাবে টাকা পেতে চান তা জানিয়ে দেবেন।
একইভাবে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা লভ্যাংশের টাকা সরাসরি বা ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডাররা যেভাবে সংগ্রহের আগ্রহ প্রকাশ করবেন, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে সেভাবেই তা বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। এর আগে শেয়ারহোল্ডারকে নির্ধারিত একটি সময়সীমার মধ্যে তার আগ্রহের কথা কোম্পানির কাছে জানাতে হবে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) এক বৈঠকে গতকাল মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমিশন বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিস্তারিত দুই-এক দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
সভা শেষে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আনোয়ারুল কবির ভুঁইয়া সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে আইপিওর টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে দুই পদ্ধতিতে টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।’
গত বছরের নভেম্বর এসইসি আইপিও এবং লভ্যাংশের টাকা সরাসরি আবেদনকারীর ব্যাংক হিসাবে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তার আগে বিনিয়োগকারীরা এসব টাকা সরাসরি বা ডাকযোগে পেয়ে থাকত। এ প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সময় নানা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তাই বিনিয়োগকারীদের হয়রানি কমানোর কথা বিবেচনা করেই নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবে টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এসইসি।
কিন্তু ব্যাংকগুলোকে মানসিক ও ব্যবহারিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার সুযোগ না দিয়েই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের হয়রানি আরও বেড়েছে। কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা ও বাস্তবতা যাচাই না করেই ব্যাংক হিসাবে টাকা ফেরতসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে গিয়েই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
তবে তারা এও বলছেন, নতুন পদ্ধতিতে কোম্পানিকে দুভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, যা জটিলতা আরও বাড়াবে। তা ছাড়া ব্যাংকগুলো অসহযোগিতার বিষয়টি নতুন পদ্ধতিতেও কার্যকর থাকবে।
সম্প্রতি একটি বিমা কোম্পানি ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশের টাকা ফেরত দিতে চাইলেও অন্তত পাঁচটি ব্যাংক তা প্রত্যাখ্যান করে।
মূলত গ্রামীণফোনের আইপিওর আবেদন থেকে লটারিতে অকৃতকার্য আবেদনকারীদের টাকা সরাসরি ব্যাংক হিসাবে পাঠানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। কোম্পানিটি তার সুনাম ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে বড় ধরনের ঝুট-ঝামেলা ছাড়াই অকৃতকার্য আবেদনকারীদের বড় অংশেরই নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবে টাকা ফেরত দিতে সক্ষম হয়। তার পরও প্রায় ১০ শতাংশের মতো আবেদনকারীর টাকা ফেরত দিতে গ্রামীণফোনকেও বেগ পেতে হয়েছে।
কিন্তু তালিকাভুক্ত কোম্পানি গোল্ডেনসনের পুনঃ আইপিওর টাকা ফেরত নিয়ে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এসইসির নির্দেশ মানতে গিয়ে এক মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও সব আবেদনকারীর টাকা ফেরত দিতে পারেনি কোম্পানিটি। এ জন্য উত্তেজিত আবেদনকারীরা কোম্পানির কার্যালয় ভাঙচুর, ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নাজেহাল ও এসইসির কার্যালয় ঘেরাওয়ের মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.