বেকহামের অশ্রুসিক্ত বিদায়

বিদায়বেলায় আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি,
ডেভিড বেকহামের চোখে নামল অশ্রুধারা। কাঁদালেন
গ্যালারিতে থাকা স্ত্রী ভিক্টোরিয়া বেকহাম ও সন্তানদেরও
(ডানে)। তবে সতীর্থরা শূন্যে ছুড়ে হূদয়ছোঁয়া একটা
মুহূর্তও এনে দিয়েছেন এই ফুটবলারকে
দুই দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কখনো মাঠ ছেড়েছেন চোটের যন্ত্রণা নিয়ে। কখনো সঙ্গী হয়েছে স্বপ্নভঙ্গের বেদনাও। কিন্তু মনটাকে শক্ত রেখে ডেভিড বেকহাম ঠোঁটের কোণে হাসিটা ধরে রেখেছেন সব সময়ই। কিন্তু শেষ ম্যাচে আবেগটাকে ধরে রাখতে পারলেন না ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক। পরশু পার্ক ডি প্রিন্সেস স্টেডিয়ামে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি খেলে ৮১ মিনিটে যখন বেরিয়ে এলেন মাঠ থেকে, বেকহামের কানে বাজল বিটলসের গান, তাঁর চোখে নামল অশ্রু।
বেকহামের কান্নাভেজা বিদায়ের দিনটাকেই জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ পরিণত করেছেন উদ্যাপনের উপলক্ষ। জোড়া গোল করে প্যারিস সেন্ট-জার্মেইয়ের (পিএসজি) সুইডিশ স্ট্রাইকার গড়েছেন এক মৌসুমে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ লিগ গোলের রেকর্ড। এই দুই গোল নিয়ে লিগে তাঁর গোল এখন ২৯টি। সুইডিশ স্ট্রাইকারের সামনে এখন ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানে ফ্রান্সের সাবেক স্ট্রাইকার জ্যঁ পিয়েরে পাপাঁর এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ছোঁয়ার হাতছানি। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে পাপাঁ অলিম্পিক মার্শেইয়ের হয়ে করেছিলেন ৩০ গোল। রেকর্ডের পাশাপাশি বেকহামের বিদায়বেলাকেও রাঙিয়েছেন জয়ের রঙে। ইব্রাহিমোভিচের জোড়া গোলে পিএসজি ব্রেস্তকে হারিয়েছে ৩-১ গোলে। ব্রেস্তের অবনমন নিশ্চিত হয়েছিল অবশ্য আগেই। বিদায়ী ম্যাচে দলকে জেতাতে অবদান রেখেছেন বেকহামও। মাতুইদির করা দলের দ্বিতীয় গোলটি বানিয়ে দিয়েছিলেন তিনিই।
গত রোববার ১৯ বছর পর লিগ শিরোপা নিশ্চিত হয়েছে পিএসজির। শিরোপা-আনন্দ টাটকা থাকতেই ১৬ মে বেকহাম দিয়ে দেন অবসরের ঘোষণা—এই মৌসুম শেষেই চিরতরে তুলে রাখবেন বুটজোড়া। পিএসজির আরেকটি লিগ ম্যাচ বাকি আছে। কিন্তু আগামী রোববার লিগের শেষ ম্যাচটি পিএসজি খেলবে প্রতিপক্ষ লরিয়াঁর মাঠে গিয়ে। যেটি আসলে প্লাস্টিকে মোড়ানো মাঠ। বেকহাম নিজেই বলছেন, ‘অফিশিয়ালি আমাদের আরও একটা ম্যাচ আছে। কিন্তু সেটা প্লাস্টিকের মাঠ এবং মাত্রই কয়েক বছর আগে আমার অ্যাকিলিস ভেঙে গিয়েছিল। কাজেই কে জানে আমি খেলতে পারব কি পারব না?’
এ জন্যই পরশু পার্ক ডি প্রিন্সেসে নেমেছিলেন বিদায়ের প্রস্তুতি নিয়েই। বেকহামের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের প্রতি সম্মান জানিয়ে কোচ কার্লো আনচেলত্তি শেষ ম্যাচে তাঁর বাহুতেই বেঁধে দেন অধিনায়কত্বের বন্ধনী। ৮১ মিনিটে মাঠ ছাড়ার সময় পান সতীর্থ খেলোয়াড়দের ‘গার্ড অব অনার’। গ্যালারি ভরা দর্শক দাঁড়িয়ে সম্মান জানায় তাঁকে। ধীর পায়ে বেঞ্চের দিকে এগোনো বেকহামের চোখে তখন জল।
ম্যাচ শেষে ব্যক্তিগত পদকের জন্য যখন বেদিতে দাঁড়ালেন, বেকহামের গায়ে জড়ানো ইংল্যান্ডের জাতীয় পতাকা। পর্দায় বেজে উঠল বিটলসের গান ‘হ্যালো, গুডবাই’। ভিডিওতে দেখানো হলো পিএসজিতে তাঁর খেলার উল্লেখযোগ্য মুহূর্তগুলো। বেকহামের কথা, ‘আবেগের ধাক্কাটা শুরু হয় বেরিয়ে আসার ২০ মিনিট আগেই। মাঠে দৌড়ানো, এমনকি বল শট নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। তবে সতীর্থ খেলোয়াড়দের প্রতিক্রিয়া দেখাটা ছিল সত্যিই বিশেষ।’
বাবা-মা, স্ত্রী ভিক্টোরিয়াসহ উপস্থিত ছিলেন তাঁর পরিবারের ২৫ জন সদস্য। ছেলেরা তো তাঁর বুট, জার্সি, পদক নিয়ে এরই মধ্যে স্মৃতিশালাই বানিয়ে ফেলেছে!
১৯৯৩ সালে শুরুটা হয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে। সেই থেকে ভিন্ন চারটি লিগে শিরোপার স্বাদ পাওয়া বেকহাম নিজের অর্জনে তৃপ্ত। খুশি, শেষটা প্যারিসের মতো জায়গায় হওয়াতেও, ‘আমার ক্যারিয়ারের শেষটা হয়ে থাকল “ভেরি স্পেশাল”। এখন আমি সময়টা আমার পরিবারের সঙ্গে উপভোগ করব। ভান্ডারে অনেক স্মৃতি জমিয়েই আমি যাচ্ছি।

No comments

Powered by Blogger.