সরকারিভাবে তুরাগ ধ্বংসের বন্দোবস্ত -সীমানা নির্ধারণে এত বড় ‘ভুলের’ হোতা কারা

উচ্চ আদালতের নির্দেশকে কীভাবে বুড়ো আঙুল দেখাতে হয়, তার ‘উজ্জ্বল’ ইতিহাস সৃষ্টি করল ঢাকা জেলা প্রশাসন ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। উচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছিলেন তুরাগ নদ উদ্ধারে ব্যবস্থা নিতে। ব্যবস্থা অবশ্য নেওয়া হয়েছে; কিন্তু উদ্ধারের নয়, দখলের। গ্রামদেশে একেই বলে ‘কানাকে হাইকোর্ট দেখানো’। উচ্চ আদালতের সঙ্গে এই প্রতারণাকে কি ‘ভুল’ বলে চালিয়ে দেওয়া সম্ভব?
এ বিষয়ে প্রথম আলোসহ গণমাধ্যমে অনেক আলোচনা হয়েছে। গতকাল প্রথম আলোয় তুরাগের সোয়া পাঁচ কোটি বর্গফুট জমি দখল বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) অনুসন্ধানী সংবাদও ছাপা হয়েছে। নদের পাশে সীমানাপ্রাচীর সঠিকভাবে স্থাপন করা হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ জায়গায়। অর্থাৎ প্রায় ৯৯ শতাংশ এলাকাকে সীমানার বাইরে দখলদারদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের আওতায় বেশ কয়েক বছর আগে ঢাকার চারটি নদীকে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর উচ্চ আদালত অব্যাহতভাবে ঢাকার তুরাগ, বালু, বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যাকে দূষণ ও দখলমুক্ত করার নির্দেশও দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে তুরাগ নদ রক্ষায় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ হিসেবে নদের সীমানায় খুঁটি পুঁতে, গাছ লাগিয়ে, পাড় বাঁধিয়ে দখলদারদের প্রতিহত করার নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। নির্দেশ পালনের দায়িত্ব ছিল ঢাকা জেলা প্রশাসন এবং অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের। তারা নদীর সীমানা চিহ্নিত করার জন্য বেছে নেয় শুকনো মৌসুমকে। উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার: ইতিমধ্যে তুরাগের ভেতরে দখল সম্পন্ন হওয়া এলাকাগুলোকে সীমানার বাইরে রাখা এবং আরও নতুন এলাকায় দখলের সুবন্দোবস্ত করা। যেখানে প্রয়োজন ছিল দখল উচ্ছেদ, সেখানে তারা করেছে দখলের সুরক্ষা।
তুরাগ নদ রক্ষার নামে ঢাকা জেলা প্রশাসন ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের এই নিষ্ঠুর প্রহসন নদী রক্ষার নামে নদী হত্যারই আয়োজন। এটা আইনের নির্লজ্জ বরখেলাপ। এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবশ্যই বিচার হওয়া প্রয়োজন। ঢাকার চারটি নদী উদ্ধারকে সারা দেশের নদী উদ্ধারের সূচনা হিসেবে পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করা হোক।

No comments

Powered by Blogger.