৯০ জন আরোহীনিয়ে ভূমধ্যসাগরে ইথিওপিয়ার বিমান বিধ্বস্ত

ইথিওপিয়ার একটি বিমান ৯০ জন আরোহী নিয়ে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের পাশে ভূমধ্যসাগরে বিধ্বস্ত হয়েছে। স্থানীয় সময় রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বৈরুতে রফিক হারিরি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ওড়ার কিছুক্ষণ পর বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
তাত্ক্ষণিকভাবে দুর্ঘটনার কারণ জানা যায়নি। দুর্ঘটনার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ ও নাশকতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে, খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনা হতে পারে। গত রোববার থেকে বৈরুতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। খবর এএফপি, এপি, জি নিউজ ও রয়টার্স অনলাইনের।
লেবাননের গণপূর্ত ও পরিবহনমন্ত্রী গাজী আরিদি বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের জানান, বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের ইথিওপিয়া এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ৪০৯-এর বিমানটি ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় যাওয়ার উদ্দেশে রোববার রাত আড়াইটার দিকে বৈরুতের রফিক হারিরি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। এর কিছুক্ষণ পর বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে তা বৈরুতের ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে উপকূলীয় এলাকা নামেহ থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার পশ্চিমে ভূমধ্যসাগরে বিধ্বস্ত হয়।
জানা গেছে, বিমানটি ওড়ার পরপরই ঝোড়ো হাওয়া ও প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। আরিদি জানান, নিঃসন্দেহে আবহাওয়া খুব খারাপ ছিল।
বৈরুত থেকে কয়েক কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত নামেহ গ্রামের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনি গ্রামটির ওপর একটি আগুনের গোলা পড়তে দেখেন।
বিমানটিতে ৮৩ জন যাত্রী ও সাতজন ক্রু ছিলেন। পরিবহনমন্ত্রী গাজী আরিদি জানান, যাত্রীদের মধ্যে লেবাননের ৫৪ জন, ইথিওপিয়ার ২২ জন এবং ইরাক, ফ্রান্স ও সিরিয়ার একজন করে যাত্রী ছিলেন। এ ছাড়া ব্রিটিশ, কানাডীয় ও রাশিয়ার বংশোদ্ভূত লেবাননের আরও তিন দ্বৈত নাগরিক ছিলেন। এর মধ্যে কয়েকজন শিশু যাত্রী ছিল।
ফরাসি দূতাবাস বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, দ্বৈত ওই নাগরিকদের মধ্যে লেবাননে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত ডেনিস পিয়েতঁর স্ত্রী মার্লা সানচেজ পিয়েতঁও ছিলেন।
ইথিওপিয়ার হাজার হাজার নাগরিক লেবাননে গৃহকর্মীর কাজ করেন। এ জন্য ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস নিয়মিত আদ্দিস আবাবা ও বৈরুতে ফ্লাইট পরিচালনা করে।
উদ্ধার তত্পরতা: দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে হেলিকপ্টার ও নৌজাহাজ পাঠানো হয়। পরিবহনমন্ত্রী আরিদি জানান, লেবাননের সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী এবং লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। তিনি জানান, ‘উদ্ধারকাজে সহায়তার জন্য আমরা দেশের ভেতরে ও বাইরে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাস্থল থেকে অনুসন্ধানকারীরা ৩৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে।
লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের মুখপাত্র কর্নেল ডিয়েগো ফুলকো বলেন, উপকূলীয় টাস্কফোর্সের দুটি জাহাজ ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। আরেকটি পথে রয়েছে। জাতিসংঘের দুটি হেলিকপ্টারও সেখানে রয়েছে।
এ ছাড়া সাইপ্রাস পুলিশের একটি হেলিকপ্টার এবং সাইপ্রাসে অবস্থানরত ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারও সেখানে আছে।
নাশকতার সম্ভাবনা নাকচ: বিমান দুর্ঘটনার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ বা নাশকতার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিচেল স্লেইম্যান। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত বিমান দুর্ঘটনার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ বা নাশকতার কোনো প্রমাণ পাইনি।’ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটা খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। হতাহতদের খুঁজতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।’ বিমানটির আরোহীদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার নির্ধারিত সূচি বাতিল করে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেন।
তদন্ত কমিটি: বিমান দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পরিবহনমন্ত্রী আরিদি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। আদ্দিস আবাবায় দ্য ইথিওপিয়ান নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, সংঘর্ষের কারণ অনুসন্ধানে বৈরুতে একটি দল পাঠিয়েছে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস।
শোকার্ত স্বজনদের ভিড়: দুর্ঘটনার খবর পেয়ে গতকাল সোমবার সকালে বিমানটির যাত্রীদের স্বজনেরা রফিক হারিরি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জড়ো হয়। বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে অবস্থান করা স্বজনদের কয়েকজনকে চিত্কার করে কাঁদতে দেখা গেছে। কয়েকজন কিছুক্ষণ পর পর মূর্ছা যাচ্ছিল। রেডক্রসের স্বেচ্ছাসেবকেরা সামাল দিচ্ছিলেন তাদের। বিমানটির এক যাত্রীর স্ত্রী বিলাপ করে বলছিলেন, ‘আমি জানি তারা তাকে খুঁজে পাবে না।’
বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমানটি ১৯৯৮ সাল থেকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। মোটামুটিসংখ্যক যাত্রী ধারণক্ষমতার এই বিমান বিশ্বের সবচেয়ে ব্যবহূত আধুনিক বিমানগুলোর অন্যতম। বিমানটি একসঙ্গে ১৮৯ জন যাত্রী বহন করতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.