নির্বাসিত জীবনের ৫০তম বছরে আবার অরুণাচলে দালাই লামা

চীনের তীব্র আপত্তি উপেক্ষা করে তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা গতকাল রোববার ভারতের অরুণাচল প্রদেশে পৌঁছেছেন। সেখানে পৌঁছে তিনি ভারতে দ্বিতীয় বৃহত্তম তিব্বতি মঠ ‘তাবাং মঠ’ পরিদর্শন করেন এবং একটি জাদুঘর উদ্বোধন করেন। নির্বাসিত জীবনের ৫০তম বছরে আবার অরুণাচল সফর করছেন দালাই লামা। তিব্বতে ১৯৫৯ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর এই তাবাং শহর থেকেই দালাই লামার নির্বাসিত জীবনের সূচনা। এরপর ১৯৮৩, ১৯৯৭ ও ২০০৩ সালে এখানে এসেছিলেন তিনি।
জাদুঘর উদ্বোধন করার পর দালাই লামা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার যেকোনো সফর নিয়েই চীন প্রতিবাদ জানাবে। বিষয়টি এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তবে তিব্বত নিয়ে আমি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চালাচ্ছি—চীন সরকারের এমন দাবি পুরোপুরি ভিত্তিহীন। তাবাংয়ে আমার এই সফর সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক।’ অর্ধশতাব্দী আগের তাবাং সফরের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘এখানে আবার আসতে পেরে আমি খুশি। তাবাংয়ে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে।’
তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতি একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছে উল্লেখ করে দালাই লামা বলেন, ‘তবে আমি নিরাশ নই, বরং আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। কারণ আমি দেখছি, কীভাবে অরুণাচল প্রদেশে এই ধর্ম ও সংস্কৃতি টিকে আছে।’
গতকাল একটি হেলিকপ্টারে চেপে ভারতের গুয়াহাটি থেকে অরুণাচলের তাবাং শহরে পৌঁছান তিনি। সেখানে তাঁকে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দর্জি খাণ্ডু ও অন্য মন্ত্রীরা। এর পর তাঁকে তাবাং মঠে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কয়েক হাজার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী তিব্বতি এই নেতাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়। জীবন্ত এই কিংবদন্তিকে স্বাগত জানাতে তাবাং শহরকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখার ব্যাপারে তত্পর রয়েছে।
দালাই লামা এই সফরের সময় ৯ থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত তাবাং বৌদ্ধ মঠে অবস্থান করবেন এবং ধর্মীয় বিষয় নিয়ে সেখানকার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। পরে ১২ নভেম্বর দিরাং, ১৩ নভেম্বর বোমদিয়াল ও ১৪ নভেম্বর রাজ্যের রাজধানী ইটানগরে ধর্মীয় বিষয়ে বক্তৃতা করবেন।
এ ছাড়া সফরে সেন্টার ফর বুড্ডিস্ট কালচার স্টাডিজের ধর্মীয় বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার উদ্বোধন এবং অনুসারীদের নিয়ে কেন্দ্রে উপাসনা অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন। এদিকে দালাই লামার এই সফর উপলক্ষে স্থানীয় প্রশাসন ১২ নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। দালাই লামার এ সফর উপলক্ষে তাবাং মঠের প্রধান তুলকু রিমপোচে জানান, ‘তাঁকে নিজেদের কাছে পেয়ে খুবই খুশি আমরা। আধ্যাত্মিক নেতার প্রিয় খাবার রান্নার জন্য মঠের রাঁধুনিদের মাসখানেক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তার জন্য বেশ কিছুদিন ধরে উপহারসামগ্রী জমিয়ে রাখা হয়েছে।’
এর আগে ৭৪ বছর বয়স্ক তিব্বতি নেতার এ সফরের তীব্র প্রতিবাদ জানায় চীন। তাদের বক্তব্য, দালাই লামার এ সফর তাঁর চীনবিরোধী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাবকে আরও প্রকট করে তুলবে। তবে ভারত সরকার এর জবাবে বলেছে, দালাই লামা তাদের সম্মানিত অতিথি এবং দেশের যেকোনো স্থানে সফর করার অধিকার তাঁর রয়েছে। অরুণাচল প্রদেশের অধিকার নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। দুই দেশের সরকারই একে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে।

No comments

Powered by Blogger.