স্কুল-কলেজের সময়সূচি

গত ২১ জুলাই সরকার যখন দিনের আলো সংরক্ষণের জন্য ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে আনে, তখন দিনের দৈর্ঘ্য ছিল ১৪ ঘণ্টা। নিজ কক্ষপথে পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলে সূর্য এখন দক্ষিণ গোলার্ধের দিকে সরে যাচ্ছে। ফলে উত্তর গোলার্ধে প্রতিদিনই দিনের সময়কাল কমে আসছে। ২৩ সেপ্টেম্বরের পর থেকে ভৌগোলিক নিয়মেই দিনের দৈর্ঘ্য রাতের চেয়ে কমে আসছে। ফলে ছোট শিশুদের স্কুলে যাওয়ার জন্য ঘুম থেকে উঠতে হচ্ছে রাতের অন্ধকারে। যানবাহনের অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়। স্কুলে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে অনেক শিশু সকালের নাশতা না খেয়েই স্কুলে যাচ্ছে। ইদানীং সকালে কুয়াশা পড়তে শুরু করায় অবস্থার আরও অবনতি হচ্ছে।
সম্ভবত সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ কোনো মন্ত্রী মহোদয়-মহোদয়ারই এ কষ্টকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে না। যদিও শিশু অধিকার নিয়ে তাঁরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সম্প্রতি অনেক বড় বড় কথা বলেছেন। সারা বিশ্বেই শিশুদের জন্য সরকার অনেক সুবিধা দিয়ে থাকে; আর আমাদের দেশে সরকারি সিদ্ধান্তের ফলে শিশুরা কষ্ট পায়। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে আগের অবস্থায় যাওয়া হবে না। তবে যানজট কমানোর জন্য সরকারি, বেসকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমাসহ স্কুল-কলেজের সময়সূচি পরিবর্তন করা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ শুরুর সময় আগের মতোই সকাল সাতটা থেকে সাড়ে সাতটা হবে। এখন সূর্যোদয় হয় বর্তমান সময় সকাল সাতটায়। কিছুদিন পরে সাড়ে সাতটায় সূর্য উঠবে। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি, সরকারি স্কুল-কলেজ যথাশিগগির সম্ভব শুরু করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকার স্কুল-কলেজগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষের কিছুই করার থাকে না। এখন যদি সরকার শিশুদের স্কুল শুরুর সময় শীতকালে সকাল সাড়ে আটটাও নির্ধারণ করে, তাহলেও গত বছরের তুলনায় (শীতকালে আগের পৌনে আটটা) একটু আগেই স্কুল শুরু হবে।
যদি সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোমলমতি শিশুদের কষ্টটুকু বিবেচনায় না নিয়ে সকাল সাতটা বা সাড়ে সাতটায় সরকারি স্কুল শুরুর সময় নির্ধারণ করে, তবে রাতের অন্ধকারেই শিশুদের স্কুলে রওনা হতে হবে। যদিও তাদের অধিকার আছে, পর্যাপ্ত ঘুমের, সকালের নাশতা খেয়ে স্কুলে যাওয়ার।
আমরা অভিভাবকেরা অসহায় সরকারি সিদ্ধান্তের কাছে। কিন্তু আমাদের সন্তানদের কষ্ট দিলে কোনো অভিভাবকই খুশি মনে মেনে নেবে না। এটা আমাদের কাছে খুবই স্পর্শকাতর বিষয়, আমরা সেটা ভুলে যাব না।
আবু নাসের
নয়াপল্টন, ঢাকা।

No comments

Powered by Blogger.