ভারত-চীন সম্পর্ক: দ্বন্দ্ব চলতেই থাকবে by জ্যাবিন টি জ্যাকব

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে পরবর্তী অনানুষ্ঠানিক সম্মেলন হবে আগামী ১২ অক্টোবর, বারানসিতে। যখন এই সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলো, তখন একই সাথে বেশ কিছু রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে দুই দেশের মধ্যবর্তী নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘনকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে বড় ধরনের সঙ্ঘাত হয়েছে। ২০১৩ সালে ডেপসাংয়ে, পরের বছর চুমুর এলাকায় এবং ২০১৭ সালে ভুটানের দোকলাম এলাকায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।
মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে অবশ্য চীনাদের সীমানা লঙ্ঘনের ঘটনা কমে এসেছে। তবে মিডিয়ায় ঘটনা প্রকাশ বন্ধ করার কারণেও এটা হতে পারে। নিশ্চিতভাবে, এটা চীনাদের  চরিত্র নয় যে, প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে বলেই তারা সেটা বজায় রাখবে।
মে মাসে, যখন সাধারণ নির্বাচন চলছিল, তখন একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়। ভিডিওতে দেখা গেছে, ওয়েস্টার্ন সেক্টরের বিতর্কিত লাদাখ সীমান্ত এলাকায় চীনারা বড় ধরনের নির্মাণকাজ চালাচ্ছে। প্রায় শ খানে যানবাহন এবং কয়েকশ সেনা সেখানে অবস্থান করছে। এই ভিডিওটি ছিল মোবাইলে ধারণকৃত এবং ডেমচক এলাকার ফুকে-কোয়ুল এলাকার স্থানীয়রা ওই ভিডিওটি ধারণ করেছিল।
কয়েকদিন আগে, আবারও রিপোর্ট প্রকাশিত হযেছে যে, ওই এলাকায় চীনা বেসামরিক ব্যক্তিরা ভারতের সীমানায় ৬-৭ কিলোমিটার ভিতরে চলে এসেছিল। সেখানে দালাই লামার ৮৪তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে ভারতের জাতীয় পতাকার পাশাপাশি তিব্বতের ও বৌদ্ধদের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত অবশ্য পরদিন ঘোষণা দেন যে, কোন ধরনের অনুপ্রবেশ ঘটেনি এবং এমনকি এটাও বলেন যে, “চীনের সাথে আমাদের খুবই ভালো সম্পর্ক বজায় রয়েছে”।
একই দিন আরেকটি রিপোর্টে সরকারী কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে যে, “উহান সম্মেলনের পর থেকে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিতর্কিত সীমান্ত এলাকাগুলোতে সংঘর্ষের সংখ্যা ৫০ শতাংশ কমে গেছে”।
এটা স্মরণ করা যেতে পারে যে, প্রথম ‘অনানুষ্ঠানিক সম্মেলনে’ দুই নেতা তাদের নিজেদের সামরিক বাহিনীর জন্য কৌশলগত নির্দেশনা দেন এবং সীমান্ত এলাকায় আস্থা জোরদার ও পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়ানোর জন্য যোগাযোগ বৃদ্ধির উপর জোর দেন।
সীমান্ত বিরোধের ধরনটা এমন যেখানে নিজেদের দাবিকৃত এলাকায় উপস্থিতি নিশ্চিত করা বা সেখানে প্রবেশের অধিকার নিশ্চিত করাটা উভয় পক্ষেরই সামরিক টহলের প্রধান উদ্দেশ্য কারণ সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বা দর কষাকষির জন্য এটার প্রয়োজন।
এই বাস্তবতার প্রেক্ষিতে এই সম্ভাবনা কম যে, ‘আগ্রাসী টহল’ বা একে অন্যের টহলে নাক গলানোর মতো ঘটনা বন্ধ হবে বা স্বল্প সময়ের মধ্যে ‘যৌথ টহল’ বাস্তবায়ন করা যাবে। এর কারণ হলো দুই পক্ষই অবকাঠামো তৈরি করছে এবং বিতর্কিত এলাকাগুলোর ব্যাপারে নিজেদের দাবি প্রকাশের প্রবণতাও বাড়ছে।
দুই দেশের শীর্ষ নেতার পক্ষ থেকে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য এবং আরও ভালো আচরণের জন্য যে নির্দেশনা, সেটাকে যদিও ছোট করে দেখার সুযোগ নেই, তবে এর অর্থ এটাও হতে পারে যে, যদি দুই নেতার মধ্যে বোঝাপড়াটা ভেঙে পড়ে, তাহলে আমরা হয়তো আবারও সীমান্তে ঘন ঘন সঙ্ঘাতের সময়টাতে ফিরে যাবো, যেটা এক পর্যায়ে বড় ধরনের সঙ্ঘাতের রূপ নিতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.