কাশ্মীর ঘটনার পর ভারত কি অনূদার গণতন্ত্র হয়ে উঠছে? by দার ইয়াসিন

ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা সবসময় বিতর্কিত কাশ্মীর অঞ্চলের উপর আরও আধিপত্য বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে এসেছে, এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার পদক্ষেপ নিয়েছেন। ভারতের পার্লামেন্ট জম্মু ও কাশ্মীরের আধা-স্বায়ত্বশাসিত মর্যাদা বাতিল করেছে, যেটার কারণে নয়াদিল্লী থেকে খানিকটা স্বাধীন ছিল রাজ্যটি। কেন্দ্রীয় সরকার একইসাথে সেখানে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে, সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের গৃহবন্দী করা হয়েছে।

মোদি জাতির উদ্দেশে দেয়া এক বক্তৃতায় ঘোষণা দেন যে, কাশ্মীরের জন্য এটা একটা নতুন যুগের সূচনা, এটার মধ্য দিয়ে বহু বছরের কষ্ট থেকে তারা মুক্ত হবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত ভারতের একমাত্র মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ এই অঞ্চলটিতে নতুন করে সঙ্ঘাত ও সহিংসতা উসকে দেবে।

কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় শহর শ্রীনগরের চেহারা মঙ্গলবারও ছিল থমথমে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে, পুরো শহর কাঁটাতার আর স্টিল ব্যারিকেডের গোলকধাঁধাঁ হয়ে আছে। আকাশে উড়ছে ড্রোন আর হেলিকপ্টার। দাঙ্গার পোষাকে টহল দিচ্ছে সেনারা।

ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতন্ত্রের দেশ এবং প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তানের তুলনায় তাদের গণতন্ত্র কিছুটা উদার। কিন্তু মোদি তার পেশিবহুল নীতির মাধ্যমে গণতন্ত্রের সাফল্যকে বাধাগ্রস্ত করছেন। মে মাসে, তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হয় এবং দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে সাথে নিয়ে মোদি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দ্রুত কাশ্মীরের উপর সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

১৯৪৭ সাল থেকে এ পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে বিভেদ চলে আসছে, যখন ব্রিটিশ ভারত দুই ভাগে বিভক্ত হয়। দুই দেশের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ হয়েছে এবং বহু বছর ধরে এই অঞ্চলে সহিংসতা এবং সরকারের দমন পীড়ন চলে আসছে। চীনও এই অঞ্চলের একটি অংশকে নিজেদের দাবি করে।

এই এলাকাটি আগে থেকেই অনেকটা নয়াদিল্লীর শাসনাধীনে ছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ্য কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের পর্যায়ে নামিয়ে আনা হলো।

গত সপ্তাহ থেকে কাশ্মীরীদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে রাখা হয়েছে। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিকে বর্তমানে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। কিন্তু তাকে বন্দী করার আগে, তিনি টুইটারে লিখেছিলেন যে, মি. মোদির পদক্ষেপ “ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কালো দিন নিয়ে এসেছে”। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্তকে তিনি “অবৈধ ও অসাংবিধানিক” আখ্যা দেন এবং ভারতীয় সেনাদের “দখলদার বাহিনী’ হিসেবে মন্তব্য করেন।

এগুলোর কোনটাই ভাল ভবিষ্যত নিয়ে আসবে না।

কাশ্মীরে মোদি যেন চীনের কাছ থেকে ধারণা নিয়েছে, যারা বহু বছর ধরে শিনঝিয়াং নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে চীন শিনঝিয়াংয়ের গণতান্ত্রিক চেহারা পাল্টে দিয়েছে। সাবেক উইঘুর মুসলিম সংখ্যাগুরু জণগোষ্ঠি এখন বিভিন্ন শহরে সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে, কারণ এই সব অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক চীনা নাগরিক অভিবাসী হয়ে এসেছে।

কাশ্মীরে অ-কাশ্মীরীদের জন্য জমি কেনার সুযোগ খুলে দেয়ায় এটা ওই অঞ্চলের জনসংখ্যার মানচিত্র বদলে দিতে পারে, যেমনটা নয়াদিল্লি চায়। কাশ্মীরের জনসংখ্যা হলো এখন ৭ মিলিয়ন। আর ভারতের জনসংখ্যা হলো ১.৩ বিলিয়নের বেশি।

মোদি নিজের জনগণের বিরুদ্ধে যে আগ্রাসন শুরু করেছেন তাতে বিশ্বকে তিনি সামান্যই আশ্বস্ত করতে পারবেন যে, তার হিন্দু জাতীয়তাবাদ ভারতে সংখ্যালঘুদের জন্য কোন সুযোগ বাকি রাখবে। উদার গণতন্ত্র থেকে তিনি বড় এক ধাপ পিছিয়ে গেছেন এবং এগিয়ে গেছেন অনুদার গণতন্ত্রের দিকে। এটা আসলেই একটি নতুন যুগ। তবে সেটা শান্তিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা কম।

No comments

Powered by Blogger.