পরীক্ষা হবে, শুধু আসবে না সাকিবুল

ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের শহীদ রমিজউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির নিচতলার ২৮ নম্বর কক্ষের দ্বিতীয় সারির চতুর্থ বেঞ্চে ছিল সাকিবুল ইসলামের আসন। এখানে বসেই এসএসসি (মাধ্যমিক) পরীক্ষা দিত সে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় আবার পরীক্ষা শুরু হবে। কিন্তু সাকিবুল আর বসবে না এই আসনে, খাতায় লিখবে না উত্তর। কারণ, গত মঙ্গলবার পরীক্ষা দিতে আসার পথেই এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে। সাকিবুলের এই অকালমৃত্যু মানতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। সাকিবুলের চাচা জসিম উদ্দিন বলেন, সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করতে ১০-১২ বছর আগে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় আসেন সাকিবুলের বাবা জাহাঙ্গীর আলম।
দক্ষিণ বাড্ডায় বাসা ভাড়া নেন এবং দুই ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করান। বড় ছেলে রাকিবুল ইসলাম গত বছর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি হয়েছে। দুর্ঘটনায় ছোট ছেলে সাকিবুলকে হারিয়ে জাহাঙ্গীর এখন বাক্‌রুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। মা ফরিদা ইয়াসমিনও ছেলের শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বনানীর বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দিবা শাখার বাণিজ্য বিভাগের (ডি গ্রুপ) ছাত্র ছিল সাকিবুল। তার শ্রেণিশিক্ষক মিলন কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, সাকিবুলের মৃত্যুতে স্কুলের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশের পাশাপাশি গতকাল সকালে তার আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া করা হয়েছে। তিনি বলেন, মায়ের সঙ্গেই স্কুলে আসা-যাওয়া করত। কোনো কারণে তার মা স্কুলে আসতে না পারলে সাকিবুলও আসত না। স্বজনেরা বলছেন, গত মঙ্গলবার সকালে একটি বাসে দক্ষিণ বাড্ডার বাসা থেকে মায়ের সঙ্গে ক্যান্টনমেন্টের পরীক্ষা কেন্দ্রে যাচ্ছিল সাকিবুল। সকাল নয়টার দিকে বাস মহাখালী সিগন্যালে আটকে পড়লে সাকিবুল ও তার মা বাস থেকে নেমে সিগন্যাল পার হন। এরপর সাকিবুল একটি বাসে ও দুই-তিন বাস পেছনের একটিতে তার মা ওঠেন। মা ঠিকভাবে বাসে উঠতে পারলেন কি না, তাই নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল সাকিবুলের। তাই বাসের জানালা দিয়ে মাথা বের করে বারবার তাকাচ্ছিল পেছনে। আর এ সময় সাকিবুলের মাথায় সড়কের পাশের ল্যাম্পপোস্টের আঘাত লাগে। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে মঙ্গলবার বাদ এশা নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটীতে সাকিবুলদের গ্রামের বাড়িতে তার দাদা-দাদির কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতেই বনানী থানায় একটি মামলা হয়েছে। বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, সাকিবুলের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাত চালককে আসামি করে মামলা করেছেন। গতকাল রাত নয়টা পর্যন্ত আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় জড়িত বাসটি জব্দ করা হয়েছে। বাস মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে, শিগগিরই চালকের পরিচয় পাওয়া যাবে। সাকিবুলের শ্রেণিশিক্ষক মিলন কুমার বিশ্বাস বলেন, পড়ালেখা ছাড়া অন্য কিছুতে মন ছিল না সাকিবুলের। স্কুলে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নামও সাকিবুল, পুরো নাম সাকিবুল হাসান। সাকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলে, শহীদ রমিজউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের একই কক্ষে বসে পরীক্ষা দিয়েছে তারা। সাকিবুল ইসলামের সঙ্গে গত রোববার তার শেষ কথা হয়েছিল। ওই দিন বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা ছিল। মঙ্গলবার পরীক্ষা চলাকালে সাকিবুল ইসলামের আসন ফাঁকা ছিল। শিক্ষক জানিয়েছিলেন একটি দুর্ঘটনা হয়েছে, যার জন্য সাকিবুল ইসলামের পরীক্ষার হলে আসতে এক ঘণ্টার মতো দেরি হতে পারে। কিন্তু সে আর আসেনি। পরীক্ষার পর সহপাঠীরা জানতে পারে সাকিবুল ইসলাম মারা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.