জেদ থেকেই এমন ‘আগুনে’ জুবায়ের

যুবায়ের আজ, ষষ্ঠ উইকেট নেওয়ার পর
বৈশাখের প্রচণ্ড গরম পড়ছে। এই ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস দুপুরের রোদের তেজে ক্রিকেট খেলতে রীতিমতো হাঁসফাঁস করার কথা। কিন্তু ফতুল্লায় আজ হয়তো সূর্যের তেজকেও ছাপিয়ে গেছে অন্য এক তেজ—জুবায়ের হোসেন! আবাহনীর এই লেগ স্পিনার যে একাই ধসিয়ে দিয়েছেন কলাবাগানকে। তাঁর ৩৪ রানে ৬ উইকেটে ভর করেই কলাবাগানকে ১৪০ রানে রুখে দিয়ে আবাহনী ম্যাচ জিতে গেছে ৭ উইকেটে। লেগ স্পিনের সঙ্গে তেজ শব্দটা হয়তো ওভাবে ঠিক যায় না। লেগ স্পিন তো আসলে স্পিনারের মুঠো থেকে বেরোনো মায়াবী বিভ্রম! তবু জুবায়েরের স্পিনকে আজ ‘তেজ’ বলতেই হচ্ছে। শুধু উইকেট নিয়েছেন বলে নয়, বৈশাখের খরতাপকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে টানা ১০ ওভার বল করেছেন বলেও নয়। আজ কলাবাগানকে যতটা না লেগ স্পিনে পুড়িয়েছেন জুবায়ের, তার চেয়েও যে বেশি পুড়িয়েছেন মনের আগুনে। ম্যাচ শেষে নিজেই বলে দিলেন, জেদ থেকেই ফতুল্লার পিচে এমন আগুন ঢেলে দিয়েছেন। অমন বিস্ফোরক লেগ স্পিনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ২০ বছর বয়সী স্পিনার বললেন ‘কিছু করে দেখানোর’ জেদটা তাঁর ছিল, ‘সব সময়ই চেষ্টা থাকে ভালো বোলিং করার। যখন থেকে খেলা শুরু করেছি তখন থেকেই নিজেকে প্রমাণ করেই আসছি। জানতামও নিজেকে সব জায়গায় প্রমাণ করা লাগবে। সত্যি কথা বলতে আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে সুযোগ খুব কম পেয়েছি। আজকে সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে পেরেছি। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে এভাবেই কাজে লাগাব।’ দল জিতেছে, নিজের ৯.১ ওভারে ৩৪ রানে পেয়েছেন ৬ উইকেট—এমন পারফরম্যান্সের পরও ‘প্রমাণ’, ‘দেখিয়ে দেওয়া’ ব্যাপারগুলো কেন আসছে? কারণ ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ‘প্রতিভাবান’ স্বীকৃতির সঙ্গে একটা জিনিস বেশ ভালোভাবেই পেয়েছেন জুবায়ের—অবহেলা! জাতীয় দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহ তাঁকে বেশ পছন্দ করেন, সাকিব আল হাসানও আস্থা রাখতে বলেছিলেন জুবায়েরের ওপর, কিন্তু তবু জুবায়ের অবহেলিত। তাঁকে নিয়ে দেশের ক্রিকেটই আসলে দুই ভাগে বিভক্ত। এ কারণেই যে সুযোগ কম মেলে জুবায়ের নিজেও সেটি জানেন, ‘এটা আমি জানি আর আমার দলের যারা আছে সবাই জানে। শুধু হাথুরুসিংহ না, জাতীয় দলের যত সিনিয়র খেলোয়াড় আছেন, সবার কা​ছ থেকে আমি অনেক ভালো সাপোর্ট পাই। সবাই আমাকে ইতিবাচক কথা বলেন। আমার চেষ্টা থাকে নিজেকে প্রমাণ করার। অনেক সময় সফল হই, অনেক সময় ব্যর্থ। তবে সত্য কথা বলতে গেলে সুযোগটা আমার জন্য খুব কমই আসে।’ জাতীয় দলে শুধু টেস্ট হলেই তাঁর ডাক পড়ে। তার চেয়েও আশ্চর্যের ব্যাপার, ‘ছেলেটা লেগ স্পিন ভালোই করে, কিন্তু খরুচে’—এই অপবাদে ঘরোয়া ক্রিকেটেই তাঁর সুযোগ বলতে গেলে মেলেই না। গত বিপিএলে দল পাননি।  গতবার প্রিমিয়ার লিগেও আবাহনীর হয়ে খেলতে পেরেছিলেন মাত্র একটি ম্যাচ। এবার আরও একবার আবাহনীতে। কিন্তু নতুন কোচের অধীনে সুযোগ পেয়েই প্রথম ম্যাচেই দেখিয়ে দিলেন, একটু খরুচে হলেও তাঁর লেগ স্পিন কতটা বিষময় হতে পারে, ‘প্রস্তুতি ম্যাচে ৫ উইকেট পেয়েছিলাম, শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসটা ছিল। আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যদি ম্যাচ খেলি তাহলে ভালো কিছু করব।’ টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সবদিক মিলিয়েই বেশ সফল জুবায়ের। এখন এই ফর্ম পুরো টুর্নামেন্টে টেনে নেওয়ার অপেক্ষা। সেটি যতটা না আবাহনীর, তার চেয়েও বেশি হয়তো বাংলাদেশের। একজন বিশ্বমানের ডানহাতি লেগ স্পিনারের যে বড়ই অভাব দলে!

No comments

Powered by Blogger.