অরুণাচল প্রদেশে প্রেসিডেন্টের শাসন চ্যালেঞ্জ করেছে কংগ্রেস

অরুণাচল প্রদেশে কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শে প্রেসিডেন্টের শাসন জারি নিয়ে ভারতের রাজনীতিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি আমলে নিয়েছে। এর আগে কেন্দ্রীয় সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে। প্রথম দিকে হাই কোর্ট আবেদন আমলে নিলেও পরক্ষণে তা প্রত্যাখ্যান করে। ফলে বাধ্য হয়ে কংগ্রেস সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। উল্লেখ্য, অরুণাচল প্রদেশে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস ও এর বিদ্রোহীদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেখানকার বিধানসভার প্রায় অর্ধেক এমপি বিদ্রোহ করে যোগ দিয়েছে বিজেপিতে। তাদের মধ্যে রয়েছে গভর্নর জেপি রাজখোয়াও। তার নেতৃত্বে এক গ্রুপ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। অন্যদিকে রয়ে যায় স্পিকার, মুখ্যমন্ত্রী নাবাম তুকির নেতৃত্বে আরেক গ্রুপ। স্পিকার বিশেষ নির্দেশে বিধানসভা তালাবদ্ধ করে রেখেছেন। ফলে বিদ্রোহীরা এর ভিতর প্রবেশ করতে পারছে না। এতে গভর্নর সম্প্রতি একটি কমিউনিটি হলে অধিবেশন আহ্বান করেন। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে যখন উত্তেজনা তুঙ্গে তখন ২৬শে জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে অরুণাচলে প্রেসিডেন্টের শাসন জারি করা হয়। সেই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে কংগ্রেস। অনলাইন এনডিটিভি বলছে, ওই প্রদেশে ক্ষমতাসীন ছিল কংগ্রেস। কিন্তু সেখানে প্রেসিডেন্টের শাসন জারির একদিন পরে সে নির্দেশের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আবেদন করেছে কংগ্রেস। সে আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। অরুণাচলে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সেখানে কেন্দ্রীয় সরকার অর্থাৎ প্রেসিডেন্টের শাসন জারি করাকে প্রজাতন্ত্র দিবসে গণতন্ত্র হত্যা হিসেবে অভিহিত করেছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত রাজ্য অরুণাচল প্রদেশ। সেখানে কেন্দ্রের শাসন জারি সংক্রান্ত এক নির্দেশে প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জী স্বাক্ষর করেছেন মঙ্গলবার। এর ফলে ওই রাজ্য সম্পর্কে সরকার যে নীতি গ্রহণ করেছে তিনি তাতে সম্মতি দিলেন। এর আগে সোমবার তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। এ সময় তিনি অরুণাচল প্রদেশে কেন্দ্রীয় শাসন জারির প্রেক্ষিত ব্যাখ্যা করেন প্রেসিডেন্টকে। পরে মঙ্গলবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দেয়। এতে বলা হয়, অরুণাচল প্রদেশে সাংবিধানিক বিধি ভেঙে দেয়া হয়েছে। এর ফলে সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন জারি থাকবে। কংগ্রেস অভিযোগ করছে, কেন্দ্রীয় সরকার ওই রাজ্যের সরকারকে অস্থিতিশীল করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, যে সরকার বিজেপি বা তাদের মিত্রদের দ্বারা পরিচালিত নয়। উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরে এ রাজ্য রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়ে। ওই সময়ে রাজ্য কংগ্রেসের প্রায় অর্ধেক এমপি দলের সঙ্গে বিদ্রোহ করে যোগ দেন বিজেপিতে। তারা স্পিকার ও মুখ্যমন্ত্রী নাবাম তুকিকে সরিয়ে দিতে বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দেয়। বিধানসভার এ অধিবেশন আহ্বান করেন গভর্নর জেপি রাজখোয়া। স্পিকারের নির্দেশে যেহেতু বিধানসভা তালাবদ্ধ ছিল তাই এমপিরা একটি কমিউনিটি হলে বৈঠকে বসেন। এ জন্য গভর্নরকে বিজেপির এজেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস বলেছে, বিদ্রোহীদের জন্য একটি অধিবেশন আহ্বান করে গভর্নর বিজেপির এজেন্টের মতো কাজ করেছেন। গুয়াহাটি হাই কোর্টে তাই কংগ্রেস একটি আবেদন করেছে। তাতে তরা বলেছে, ডিসেম্বরে গভর্নর যে বিধানসভা আহ্বান করেছিলেন সেটা সংবিধানের লংঘন। কারণ, এ অধিবেশন আহ্বানের আগে মুখ্যমন্ত্রী নাবাম তুকি ও তার মন্ত্রীপরিষদের সঙ্গে কোন পরামর্শ করা হয় নি। এ বিষয়ে স্পিকার হাই কোর্টে একটি পিটিশন করেন। কিন্তু প্রথমে হাই কোর্ট কংগ্রেসের বিদ্রোহীদের অধিবেশনে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল তা সাময়িক স্থগিত করেন। তার পর পরই কোর্ট ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। এতে বাধ্য হয়ে স্পিকার ছুটে যান সুপ্রিম কোর্টে। এখন সেখানেই লড়াই চলছে কেন্দ্রীয় সরকার ও কংগ্রেসের মধ্যে। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তি দাঁড় করছে যে, অরুণাচল প্রদেশে আইন শৃংখলার অবনতি হয়েছে। ৬ মাস যাবত সেখানে বিধানসভার কোন অধিবেশন হয় নি। এমপিদেরকে বিধানসভার ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছিল না। কারণ, পার্লামেন্ট ভবন তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন স্পিকার।

No comments

Powered by Blogger.