ভারতে বিমানঘাঁটিতে জঙ্গি হামলায় নিহত ৮

শনিবার ভোররাতে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের পাঠানকোটে বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলা হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে ৫ জঙ্গি ও ৩ বিমানবাহিনী কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন জওয়ান। ভারত-পাকিস্তান আলোচনার পথ ফের বন্ধ করতেই এমন মরিয়া হামলা বলে ভারত সরকার মনে করছে। এর পর ভারতের বিভিন্ন শহরে বাড়ানো হয়েছে সতর্কতা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ভারত প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চায়। তাই বলে সন্ত্রাসী হামলা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ভারতের উপর যদি সন্ত্রাসী হামলা হয় তবে ভারত তার উপযুক্ত জবাব দিতে দ্বিধা করবে না। লাহোরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাতের কয়েকদিন পরেই এ হামলা চালানো হলো। এ দিন রাত সাড়ে তিনটা নাগাদ পাকিস্তান সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে ঢুকে পড়ে জঙ্গিরা। তবে তাদের সংখ্যা কত ছিল তা নিশ্চিত ভাবে জানা যায় নি। এরা প্রত্যেকেই বিমানবাহিনীর পোশাকে ছিল বলে জানা গেছে। ঘাঁটির পিছন দিকে একটি ক্যানালের সঙ্গে বিমানঘাঁটির সংযোগকারী নিকাশী নালার মধ্য দিয়ে জঙ্গিরা ভিতরে প্রবেশ করেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘাঁটির যে অংশে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার রাখা থাকে সেদিক থেকে হামলা চালাতে শুরু করে জঙ্গিরা। ঘাঁটির বাইসন মিগ বিমান ও এমআই হেলিকপ্টারগুলি ধ্বংস করাই জঙ্গিদের উদ্দেশ্য ছিল বলে  ধারণা করা হচ্ছে। পাঠানকোটের বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে যত বেশি সম্ভব ক্ষয়ক্ষতি করাই লক্ষ্য ছিল জঙ্গিদের। এজন্য নির্দেশ এসেছিল পাকিস্তান থেকে। জঙ্গিদের ফোন ট্যাপ করে একথা জানা গেছে বলে সূত্রের খবর। সন্দেহের তীর জঙ্গি সংগঠন জৈশ-ই-মহম্মদের দিকে।   জৈশ-এর প্রধান কমান্ডার আজহার মাসুদের ভাই আবদুল রউফ মাসুদ আজহার ও আল- রেহমান ট্রাস্ট এই হামলার পেছনে রয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে দাবি করা হয়েছে। গোয়েন্দাদের মতে, হামলার প্রধান মাথা হিসেবে কাসেম জান, মৌলানা আসফাক, আব্দুর গফুরকে গোয়েন্দারা চিহ্নিত করেছেন। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, গত শুক্রবার গুরুদাসপুর এসপির ছিনতাই হওয়া গাড়িতে করেই জঙ্গিরা বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে পৌঁছেছিল। এই গাড়ি ছিনতাইয়ের পরেই জঙ্গী হামলার আশঙ্কায় রাতেই বিমানবাহিনীর অফিসারদের নিয়ে দিল্লিতে ভারতের জাতীয় উপদেষ্টা অজিত দোভাল জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন। নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছিল। সেনাপ্রধানদেরও হামলার আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছিল। জানা গিয়েছিল, এসপির গাড়ি ছিনতাইয়ের পাশাপাশি ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে জঙ্গিরা নাকি পাকিস্তানে কথাও বলেছিল বেশ কয়েকবার। ফোন ট্যাপ করে তা জানা গিয়েছে। বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালানোর সময়ও জঙ্গিরা পাকিস্তানে কথা বলছিল বলে জানা গেছে। জঙ্গিদের কাছে বার বার নির্দেশ আসছিল ভারতীয় বিমানঘাঁটির দামি সরঞ্জাম আগে নষ্ট করে দেয়ার জন্য। তবে বিমানবাহিনী সূত্রে দাবি করা হয়েছে, সতর্কতার ফলেই বিমানঘাঁটিতে প্রবেশের পর ঘাঁটির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনাদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল জঙ্গিদের। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টায় জঙ্গিদের খতম করা  সম্ভব হয়েছে। তবে আরও জঙ্গি এলাকায় রয়েছে কিনা তাদের খোঁজে গোটা এলাকায় কম্বিং অপারেশন চলছে। জানা গেছে, জঙ্গিরা পাকিস্তানের ভাগলপুর থেকে এই হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে তিন দিন আগেই ভারতে প্রবেশ করেছিল।  পুলিশ সূত্রে খবর, পাঠানকোট-জম্মু হাইওয়েতে সতর্ক প্রহরা শুরু হয়েছে। দিল্লিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পানিক্কর সেনাবাহিনীর তিন প্রধান, গোয়েন্দা প্রধান এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ঘটনার বিস্তারিত পর্যালোচনা করেছেন। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য এবং এই ধরনের যে কোনো হামলার চেষ্টা গোড়াতেই প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে সেনাবাহিনীকে। জঙ্গিদের ফোনকল ট্যাপ করে খুব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে সাউথ ব্লক সূত্রের খবর। তবে আগাম আশঙ্কা সত্ত্বেও জঙ্গি হামলা কিভাবে ঘটেছে সেটা নর্থ ব্লকের কর্তাদের ভাবাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, এমআই-২৫ ও এমআই-৩৫ হেলিকপ্টারগুলিই মূল টার্গেট ছিল জঙ্গিদের। এই হেলিকপ্টার গানশিপ তথা অ্যাটাক হেলিকপ্টার ভারতীয় বায়ুসেনার অন্যতম বড় শক্তি। একেই যুদ্ধক্ষেত্রে ‘উড়ন্ত ট্যাঙ্ক’ বলা হয়। ওই কপ্টারগুলি ধ্বংস করতে পারলে জঙ্গিরা বড় ধাক্কা দিতে পারত বিমানবাহিনীকে। কিন্তু ঘটেছে ঠিক উল্টোটাই। ঘাঁটিতে জওয়ানরা যখন জঙ্গিদের মুখোমুখি লড়েছেন, তখন এমআই-২৫ এবং এমআই-৩৫ কপ্টারগুলিও অভিযান শুরু করে দিয়েছিল। আকাশ থেকে হামলা শুরু হয় জঙ্গিদের উপর। ফলে অচিরেই জঙ্গিদের ছক   ভেস্তে গেছে। পরে কম্বিং তল্লাশিতেও কাজে লাগানো হয় ওই কপ্টারগুলিকেই। গুরুদাসপুরে জঙ্গি হামলার মাত্র ছ’মাসের মধ্যে  ফের এক বার রক্তাক্ত হয়েছে পাঞ্জাব। তবে বিমানঘাঁটিতে হামলার নিন্দা করেছে সব রাজনৈতিক দলই। কংগ্রেস ও পিপলস ডেমোক্রাটিক ফ্রন্ট বলেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনাকে লাইনচ্যুত করতেই এই হামলা চালানো হয়েছে।
আইএসআই’র হাত?
ভারতের কিছু সূত্র মোতাবেক, হামলার পেছনে সরাসরি জড়িত পাকিস্তানের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। জি নিউজ এক খবরে জানিয়েছে, গত ডিসেম্বরে ভারতে হামলার জন্য আইএসআই কয়েকটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠকে বসে। সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে সমন্বয় করার জন্যই ওই বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
এদিকে কয়েকদিন আগে গ্রেপ্তার হওয়া ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাবেক এক কর্মকর্তাকে এ হামলার বিষয়ে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। রঞ্জিত কেকে নামে ওই কর্মকর্তাকে নারীর লোভ দেখিয়ে জালে আটকানো হয়। পরে তাকে ব্ল্যাকমেইল করে ভারতের বিভিন্ন বিমানঘাঁটির তথ্য হাতিয়ে নেয়া হয়। গোয়েন্দাদের ধারণা এ হামলার সঙ্গে রঞ্জিত কেকের দেওয়া তথ্যের সমপর্ক থাকতে পারে।
হামলার আগে মা’কে ফোন?
জি নিউজের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ত্রাসীরা হামলার আগে পাকিস্তানে বেশ কয়েকটি কল করে, যেসব তৎক্ষণাৎ একটি গোয়েন্দা সংস্থার হস্তগত হয়। এর মধ্যে এক সন্ত্রাসী তার মাকে ফোন করেছিল। কথোপকথনের একপর্যায়ে নিজের ছেলেকে মৃত্যুর আগে খাবার খেয়ে নিতে বলেন তার মা।

No comments

Powered by Blogger.