সর্বত্র রাজস্ববান্ধব সংস্কৃতি চেয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের চিঠি

জাতীয় জীবনের সব জায়গায় ‘রাজস্ব-বান্ধব সংস্কৃতি’ সৃষ্টি করতে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. নজিবুর রহমান। গত ১০ই ডিসেম্বর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের কাছে এ সংক্রান্ত একটি আধা-সরকারি পত্র দিয়েছেন। সচিবদের কাছে পাঠানো চিঠিতে মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং অধীনস্থ সংস্থাগুলোর রাজস্ব বাড়াতে চার ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, নিয়মিতভাবে উৎসে আয়কর কর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। রাজস্ব (আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট) খাতে কোনো বকেয়া থাকলে তা পরিশোধের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান/ঠিকাদারদের রাজস্ব পরিশোধের রেকর্ড নিয়মিতভাবে যাচাই করতে হবে। একই সঙ্গে রাজস্ব (আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট) পরিশোধের জন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণকালে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থের সংস্থান রাখতে হবে। ডিও লেটারের শুরুতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং তার নিয়ন্ত্রণাধীন মাঠপর্যায়ের সকল কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অক্লান্তভাবে পরিশ্রম করছেন। চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি জাতীয় জীবনের সর্বত্র একটি ‘রাজস্ব-বান্ধব সংস্কৃতি’ গড়ে তোলার জন্য ১০টি পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে- সুশাসন ও আধুনিক ব্যবস্থাপনা কাঠামো-এর আওতায় দুর্নীতি, হয়রানি, অসদাচরণ এবং বিশৃঙ্খলা এর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতে রাজস্ব বিষয়ক পাঠ্যসূচি প্রবর্তনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিসিএস (প্রশাসন) একাডেমি, বিসিএস (কর) একাডেমি, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমি, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমিসহ সব একাডেমিতে প্রশিক্ষণের জন্য রাজস্ব বিষয়ক কোর্স কারিকুলাম পাঠানো হয়েছে। বিভাগীয় ও জেলা শহর এবং উপজেলায় বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী, স্টেকহোল্ডার এবং সম্মানিত করদাতাদের সঙ্গে ‘রাজস্ব সংলাপ’ ও করদাতা উদ্বুদ্ধকরণ সভার আয়োজন করা হচ্ছে। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলার আয়োজনসহ মেলায় সোশ্যাল মিডিয়া সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো ১৯- ২১শে নভেম্বর তিন দিনের শীতকালীন মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) নিয়মিতভাবে সমন্বয়ের জন্য ক্যাপাসিটি বিল্ডিং, কাস্টমস পলিসি, ট্যাক্স পলিসি ও ভ্যাট পলিসি শিরোনামে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। কমিউনিটি রেডিওতে রাজস্ব বিষয়ক প্রচার-প্রচারণা চালানোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। জাতীয় সংসদের অর্থ বিষয়ক সংসদীয় কমিটি, সরকারি হিসাব সংক্রান্ত কমিটি, বিচার বিভাগ, অডিট বিভাগ, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, এফবিসিসিআই, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), এমসিসিআই এবং ঢাকার বাইরের চেম্বারগুলোর সঙ্গে নিয়মিতভাবে পার্টনারশিপ ডায়ালগ এর আয়োজন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অন্য ব্যাংকগুলোর আওতাধীন সব প্রতিষ্ঠানে রাজস্ব (আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট) বিষয়ক মডিউল নেয়া হচ্ছে। ডিও লেটারের শেষে বলা হয়েছে, রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪- এর সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অধীনস্থ সংস্থাগুলোর সহযোগিতা নিয়ে জাতীয় উন্নয়নের জন্য ২০১৫- ১৬ অর্থবছরে এক লাখ ৭৬ হাজার ৩৭১ কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে আমরা সফলকাম হবো ওই ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। এমন অবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়ার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এনবিআর চেয়ারম্যানের এ চিঠি’র ভিত্তিতে কাজ শুরু করেছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

No comments

Powered by Blogger.