বই পুড়িয়ে ফয়সল হত্যার প্রতিবাদ

শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে লেখক,
কবি ও শিল্পী সমাজ সমাবেশ করে। সেখানে
বক্তব্য​ দেন ফয়সল আরেফিন দীপনের বাবা
আবুল কাসেম ফজলুল হক l প্রথম আলো
প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা এবং এক প্রকাশকসহ তিনজনের ওপর হামলার প্রতিবাদে বই পোড়ালেন কবি-লেখক-শিল্পীরা। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগের আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেটের সামনে আয়োজিত সমাবেশ শেষে তাঁরা নিজেদের বই পুড়িয়ে এই প্রতিবাদ জানান।
‘আমরা কোনো বিচার চাই না, শুভবুদ্ধির উদয় হোক’ স্লোগান সামনে রেখে ‘কবি-লেখক-শিল্পী সমাবেশ’–এর ব্যানারে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশে অংশ নেন ফয়সল আরেফিনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে অশুভবুদ্ধির জয় চলছে। শুভবুদ্ধি নিয়ে সাধারণ মানুষ চলতে চায়। তারা বিড়ম্বিত হয়, অপমানিত হয়, অসহায় বোধ করে।’
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, শুভবুদ্ধির জাগরণের জন্য সংগঠিতভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের চেষ্টা করে যেতে হবে। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসাধারণ মানুষ ছিলেন। নানান ত্রুটি-বিচ্যুতির মধ্যেও তাঁদের রাজনীতিতে অসাধারণ অবদান রয়েছে। কিন্তু কেবল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমরা সবটা পাই না। একজন মাওলানা ভাসানী যখন নৈতিক শক্তির কথা বলেন, তখন রাজনীতি একটা ভিন্ন ডাইমেনশন পায়। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলেছেন, এর সঙ্গে নৈতিকতা যুক্ত হলে এর শক্তি অনেক বড় হয়। ’
অধ্যাপক আবুল কাসেম আরও বলেন, বিভিন্ন সংবাদপত্রে দীপনকে ব্লগার হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেট সম্পর্কে দীপনের গভীর ধারণা ছিল। কিন্তু ব্লগার ছিল না। সেখানে ঢোকেনি। দীপনকে ব্লগার বলে অভিহিত করা সম্পূর্ণ ভুল ও অন্যায়।’
লোক পত্রিকার সম্পাদক শামীমুল হকের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন লেখক ও সম্পাদক আহমদ মাজহার, কবি জাহিদ হায়দার, লেখক রাখাল রাহা, কবি চঞ্চল আশরাফ, আহমেদ স্বপন মাহমুদ, মুজিব মেহেদী, কামরুজ্জামান কামু, গায়ক মাহমুদুজ্জামান বাবু, শিল্পী অরূপ রাহী, প্রাবন্ধিক ফিরোজ আহমেদ, ফারুক ওয়াসিফ প্রমুখ।
এ সময় আগামী শুক্রবার শাহবাগে সব লেখক-প্রকাশকের অংশগ্রহণে প্রতিবাদ সমাবেশের আহ্বান জানানো হয়। সমাবেশে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের ‘বিচারহীনতার এই অন্যায়ের প্রতিবাদ’ হিসেবে তাঁদের পুরস্কার বর্জন করার আহ্বান জানানো হয়। সমাবেশ শেষে লেখক-কবি-প্রকাশক-সাহিত্যিকেরা নিজেদের বইয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। তাঁরা সুবিধাবাদী লেখকদের সামাজিকভাবে প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানান। শতাধিক তরুণ শিল্পী-কবি ও লেখক সমাবেশে অংশ নেন।

No comments

Powered by Blogger.