মির্জা ফখরুল ফের কারাগারে- স্বাস্থ্যসঙ্কটে পড়লে দায় সরকারের : বিএনপি

ঢাকা সিএমএম আদালত থেকে বের হওয়ার সময়
গতকাল উপস্থিত নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : নয়া দিগন্ত
পল্টন থানায় নাশকতার তিন মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
উচ্চ আদালতের নির্দেশক্রমে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মির্জা ফখরুল ঢাকার সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে। মহানগর হাকিম মো: মারুফ হোসেন উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে মির্জা ফখরুলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সাথে তিনি মির্জা ফখরুল অসুস্থ থাকায় কারা বিধি অনুযায়ী তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দেন ।
জামিন শুনানিকালে মির্জা ফখরুলের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, পল্টন থানার তিন মামলায় মির্জা ফখরুল উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের জামিন লাভ করেছিলেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হলে তিনি জামিন বৃদ্ধি করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেন। আপিল বিভাগ তার জামিনের মেয়াদ বর্ধিত না করে নি¤œ আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশ অনুযায়ী মির্জা ফখরুল আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ, তার ঘাড়ে ব্যথা, হার্টে রিং পরানো আছে। এই অসুস্থতার কারণে তিনি সিঙ্গাপুর, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় চিকিৎসা নিয়েছেন। এ মাসের ২৪ নভেম্বর আবার চিকিৎসা নেয়ার তারিখ ধার্য আছে। সে কারণে মির্জা ফখরুলের জামিন দেয়া প্রয়োজন।
আইনজীবীরা বলেন, জামিন দিলে তিনি পালিয়ে যাবেন না। সময় মতো আদালতে হাজির হবেন। তিনটি মামলায় ৩০-৩৫ জন জামিনে আছেন। সে কারণসহ অন্যান্য কারণে আসামি মির্জা ফখরুল জামিন পেতে পারেন।
আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ঢাকা বারের সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মো: সানাউল্লাহ মিয়া, খোরশেদ আলম, জয়নুল আবেদীন, মো: মহসিন মিয়া, ওমর ফারুক ফারুকী, গোলাম মোস্তফা খান, ইকবাল হোসেন, মোসলেহ উদ্দিন, আবেদ রাজা, হযরত আলী, তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ মো: হাফিজ, মো: এখলাস উদ্দিন ভূঁইয়া, আব্দুল খালেক মিলন, জিয়া উদ্দিন, নুরুজ্জামান, এ কে এম ফজলুল হক, ইলতুৎমিস সওদাগর, সৈয়দা শাহিনারা লাইলী, শাম্মি আক্তার শাম্মিসহ শতাধিক আইনজীবী।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, আসামি পল্টন থানার তিন মামলায় নাশকতার ঘটনার বিষয়ে মদদদাতা, উসকানিদাতা ও প্ররোচনাকারী। তার মদদ ও উসকানিতে গত ৪, ৫ ও ৬ জানুয়ারি পল্টন এলাকার ফকিরাপুল, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম ও রাজউক এভিনিউর সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। আসামির জামিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। উচ্চ আদালত তাকে নি¤œ আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন। জামিন দেয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশন নেই। সে কারণে তিনি জামিন পাবেন না। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত মির্জা ফখরুলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ফখরুল স্বাস্থ্যসঙ্কটে পড়লে দায় সরকারের-বিএনপি
মির্জা ফখরুলকে কারাগারে পাঠানোর পর এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জটিল রোগে আক্রান্ত একজন মানুষ। কারান্তরীণ অবস্থায় তার স্বাস্থ্যঝুঁকি আরো বেড়ে যাবে বলে চিকিৎসকরা অভিমত দিয়েছেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মির্জা ফখরুল স্বাস্থ্যসঙ্কটে পড়ে গেলে সেই অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই দেশবাসী দায়ী করবে। কেননা এর আগেও কারাগারে থাকাকালে মির্জা আলমগীর কয়েক দফা সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং তার শারীরিক ওজন তখন ১৬ কেজি হ্রাস পেয়েছিল।
ড. রিপন বলেন, সরকার বিরোধী দলের সাথে রাজনীতি করবে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায়। কিন্তু কাউকে তিলে তিলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হবে অত্যন্ত অমানবিক।
তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল অনেক দিন ধরেই অসুস্থ। তার হৃদরোগসহ ঘাড়ের ক্যারোটিড আর্টারিতে ব্লক রয়েছে। এ বছর প্রায় ছয় মাস কারাভোগের পর উচ্চ আদালত তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামিন প্রদান করায় তিনি যুক্তরাষ্ট্র এবং সিঙ্গাপুরে কয়েক দফা চিকিৎসা নেন। কিন্তু তার ক্যারোটিড আর্টারিতে ব্লকটির অবস্থান খুবই জটিল হওয়ায় তা শৈল্যচিকিৎসার জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় তার অস্ত্রোপচার সম্ভব হয়নি। ক’দিন আগেও তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার ফলোআপে যান এবং এ মাসের ২৪ তারিখে সিঙ্গাপুরে তার আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য যাওয়ার তারিখ ছিল। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশে একজন আইন মান্যকারী নাগরিক হিসেবে তিনি আজ নিম্ন আদালতে জামিন প্রার্থনা করেছিলেন, কিন্তু আদালত তার আবেদন নাকচ করে এই অসুস্থ মানুষটিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশে আমরা তার স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বিচলিত হয়ে পড়েছি।
রিপন বলেন, আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, নিম্ন আদালত তার স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনা করে তাকে জামিন প্রদান করবেন, যাতে তিনি তার স্বাস্থ্য সুরক্ষা করতে পারেন।
তিনি বলেন, মির্জা আলমগীর বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন সজ্জন, পরিশীলিত ও স্বচ্ছ ইমেজের মানুষ। এমন একজন আদর্শবান রাজনীতিক অসংখ্য মিথ্যা-হয়রানিমূলক মামলায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। একইভাবে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক আবদুল মান্নানও মামলায় জর্জরিত। দলের অন্যতম যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ অবস্থায় কারারুদ্ধ। তিনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কারারুদ্ধ সব নেতার মুক্তি দাবি করেন
কলাবাগান থানার মামলায় চার্জ গঠন ২৪ ফেব্রুয়ারি : ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়া সংক্রান্ত কলাবাগান থানার মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের জন্য আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আলী মাসুদ শেখের আদালতে আসামিপক্ষ সময় চেয়ে আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
ছাত্রদল সভাপতির জামিন নাকচ : অগ্নিসংযোগের অভিযোগে রামপুরা থানার মামলায় ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসানের জামিন নাকচ করে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই শফিকুর রহমান ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসানকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চান। আসামিপক্ষে রিমান্ড বাতিল করে জামিন আবেদন করেন। ঢাকার মহানগর হাকিম ইউসুফ হোসেন শুনানি শেষে জামিন আবেদন নাকচ করে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মালিবাগ মোড়ে প্রচেষ্টা পরিবহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রামপুরা থানা পুলিশ বাদি হয়ে এ মামলাটি করে।

No comments

Powered by Blogger.