এই দশার বর্ণনাও কঠিন: খুলনা বিসিক শিল্পনগরের সড়ক by উত্তম মণ্ডল

পিচ বা খোয়ার কোনো অস্তিত্ব নেই। সর্বত্র কাদাপানির মাখামাখি।
তবু এটি সড়ক। চলছে গাড়িও। খুলনা বিসিক শিল্পনগরের
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সারের
ডিপোর সামনে থেকে গত রোববার তোলা ছবিl -প্রথম আলো
বৃষ্টির পানি জমে সড়কজুড়ে ছোট-বড় ‘পুকুরের’ সৃষ্টি হয়েছে। পিচ নেই। খোয়া নেই। জায়গায় জায়গায় ছোট-বড় গর্ত। গাড়ি তো দূরের কথা, হেঁটে চলাই দায়। তবু চলছে গাড়ি। এই অবস্থা চার দশকেরও বেশি সময় ধরে চললেও কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই। খুলনা নগরের খানজাহান আলী থানার বিসিক শিল্পনগরের সড়কগুলোর চিত্র এটি। এমন দিন নেই, গর্তে গাড়ি আটকায় না। হেলেদুলে চলতে গিয়ে এক্সেল ভাঙে যাত্রী বা পণ্যবাহী যানের।
বিসিক শিল্পনগরের বাদামতলা থেকে কেব্ল ঘাট, শিরোমণি থেকে গাফফার ফুড এবং গাফফার ফুড থেকে কেব্ল শিল্পের মোড় পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার দূরত্ব। সড়কগুলোর দুই পাশে রয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয়, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) আবাসিক এলাকা, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কেন্দ্রীয় পণ্যাগার, মোহসেন জুট মিল, চরকা কোম্পানি, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সারের ডিপো এবং কেব্ল, সিমেন্ট, লবণ, রড, আটা, ময়দাসহ ৩২টি ছোট-বড় সরকারি-বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া আছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের মাল বোঝাই ও খালাসের জন্য প্রতিদিন এ সড়কগুলো দিয়ে শতাধিক ট্রাক চলাচল করে। তা ছাড়া ভৈরব নদ পার হয়ে দিঘলিয়া উপজেলার মানুষের জন্য এ সড়কগুলো হচ্ছে যাতায়াতের প্রধান পথ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কগুলো এখন কাদা-পানিতে একাকার। পিচ ও খোয়ার কোনো অস্তিত্ব নেই। সড়কজুড়েই খানাখন্দ। ট্রাক আটকে যাচ্ছে গর্তে।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কেন্দ্রীয় পণ্যাগারের উপপরিচালক বিশ্বনাথ শিকদার বলেন, দেশের পল্লী বিদ্যুৎ সরঞ্জামের ৪৫ ভাগ এখান থেকে যায়। বছরে শতকোটি টাকা রাজস্ব দেওয়া হয় এখান থেকে। কিন্তু এ সড়কের জন্যই পোহাতে হয় অবর্ণনীয় কষ্ট।
এই সড়কে বহু বছর ধরে ট্রাক চালান খোকন গাজী। তিনি বলেন, ‘১৫-২০ বছর ধরে একইভাবে চলছে। রাস্তাটায় সব সময় সিডরের ঝাঁকুনি লেগেই থাকে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমরা ট্রাক নিয়ে যাই। কিন্তু এত খারাপ রাস্তা চোখে পড়ে না।’ কেডিএ সূত্র জানায়, ১৯৬৬-৬৭ সালে শিরোমণি এলাকায় ৫৪০ একর জমি অধিগ্রহণ করে কেডিএ। এরপর ওই এলাকায় এ সড়কগুলো তৈরি করা হয়। চার দশক সংস্কারবিহীন থাকার পর ২০০৭ ও ২০১১ সালে কিছু কাজ করা হয়। এরপর ২০১২ সালে ‘শিরোমণি শিল্প এলাকার প্রধান সড়কগুলো পুনর্নির্মাণ’ নামে ২২ কোটি ৯ লাখ টাকার একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। ২০১৫ সালের ২৬ মে সেটির অনুমোদন মিলেছে।
এ বিষয়ে কেডিএর সহকারী প্রকৌশলী ও প্রকল্পটির পরিচালক মোরতোজা আল মামুন বলেন, গত অর্থবছরের শেষ দিকে প্রকল্পটি অনুমোদিত হওয়ায় অর্থ ছাড় করা যায়নি। অর্থ ছাড়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা।
দীর্ঘ সময়েও সড়কগুলোর সংস্কার না হওয়ার বিষয়ে মোরতোজা আল মামুন বলেন, কেডিএ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে কেসিসির কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু এলাকাটি কেসিসির আওতার বাইরে থাকায় সেটা করা সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া কেডিএ সংস্কারকাজ করতে পারে না, সওজ ও এলজিইডিও কাজটি করতে চায়নি।
গৃহীত প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে কেডিএর প্রধান প্রকৌশলী এ টি এম ওয়াহিদ আজহার বলেন, ঠিকাদারদের প্রাকযোগ্যতা নির্ধারণ ও টেন্ডারের প্রক্রিয়া চলছে। অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে কবে নাগাদ বরাদ্দ পাওয়া যাবে, তা বলা যাচ্ছে না।

No comments

Powered by Blogger.