নিজ দেশে বৈষম্য ও নির্যাতনে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সমস্যা বন্ধ হলেই শরণার্থীদের সমস্যা মিটে যাবে বলে মনে করে জাতিসংঘ। কারণ, সমস্যার মূল উৎস মিয়ানমারে, সমাধানও সেখানে। নিজেদের দেশে বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হওয়ায় রোহিঙ্গারা বাধ্য হয়ে পাশের দেশ বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ওয়াটকিন্স মঙ্গলবার প্রথম আলো কার্যালয়ে পত্রিকাটির জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এ কথা বলেন। আলোচনা সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে রবার্ট ওয়াটকিন্স বলেন, ‘আমি মনে করি না, এ সমস্যার সমাধান বাংলাদেশে আছে। সমস্যার উৎস মিয়ানমারে, এর সমাধানও মিয়ানমারে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করছে এবং শরণার্থীদের সহায়তায় অনেক কিছু করেছে। মিয়ানমারে সমস্যা থাকায় বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আসা বন্ধ করতে পারে না। তাই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে সে দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করা উচিত।’ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওয়াটকিন্স বলেন, বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলা বিভিন্ন সামাজিক সূচকে পিছিয়ে আছে। তাই সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নে জাতিসংঘ সেখানে কাজ করছে। ওই এলাকায় সংস্থার কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে সেখানে কাজ করার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতায় পড়তে হয়। এ কারণে কাজে ব্যাঘাত ঘটে। দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন কোনো ভূমিকা নেবেন কি না, জানতে চাইলে রবার্ট ওয়াটকিন্স বলেন, এ বছরের শুরুতে রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার পর জাতিসংঘের মহাসচিব সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সমস্যার সমাধান ও সহিংসতা বন্ধে জাতিসংঘের ভূমিকা কী হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে তাদের মত চান। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে আশার সঞ্চার হয়েছিল। এতে করে দলটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আবার ফিরে আসে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের দিন বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। এরপর রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে অনেকটাই অদৃশ্য হয়ে পড়েছে। দলটি এখন নিজেদের মধ্যে সংস্কারের কথা বলছে। রবার্ট ওয়াটকিন্স বলেন, এমন এক পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের ভূমিকারও একধরনের অবসান হয়েছে। কাজেই ভবিষ্যতে সবচেয়ে ভালো একটি নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়া ঠিক করতে দুই দলকে আলোচনায় বসার আগ্রহ দেখাতে হবে। এ মুহূর্তে দুই দল একে অন্যের সঙ্গে কোনো আলোচনায় নেই এবং আলোচনায় বসার কোনো সুযোগও দেখা যাচ্ছে না। জাতিসংঘ মহাসচিব সংকট দূর করার ব্যাপারে এখনো যুক্ত আছেন। তবে সরকারকে আভাস দিতে হবে যে তাকে তারা আরও সক্রিয় ভূমিকায় দেখতে চায়। ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য পুরোপুরি দূর করা এবং বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সামাজিক উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য এসডিজির প্রস্তাব ৩ আগস্ট সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্যদেশ দীর্ঘ তিন বছরের দর-কষাকষি শেষে ১৭টি লক্ষ্য সামনে রেখে এ এজেন্ডা গ্রহণ করেছে। আগামী ২৫ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় টেকসই উন্নয়ন শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ১৫০টি দেশের শীর্ষ নেতারা এই এজেন্ডা চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করবেন। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এই লক্ষ্য পূরণের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওয়াটকিন্স ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) আবাসিক প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। বাংলাদেশে দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি আফগানিস্তান, লেবানন, জর্জিয়া ও জিবুতিতে জাতিসংঘের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। সূত্র: প্রথম আলো।

No comments

Powered by Blogger.