সালাহ উদ্দিনকে নিয়ে রহস্য কাটছে না by রাহীদ এজাজ

বিএনপির নেতা সালাহ উদ্দিন আহমদকে নিয়ে রহস্যের জট খুলছে না। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ে তিনি কীভাবে প্রবেশ করলেন, তা কেউ বলতে পারছে না। স্থানীয় পুলিশ ও সালাহ উদ্দিনের এক আত্মীয়ের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য বিষয়টিকে আরও ঘোলাটে করেছে। পুলিশের দাবি, গত সোমবার শিলংয়ের গলফ কোর্স এলাকায় উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরির সময় স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। এরপর পুলিশ তাঁকে আটক করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আর আইয়ুব আলী নামে তাঁর এক আত্মীয়ের দাবি, শিলং পৌঁছে পুলিশের দপ্তরে সালাহ উদ্দিন আহমদ নিজেই গেছেন।
বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব ঢাকার উত্তরার বাসা থেকে ‘নিখোঁজ’ হওয়ার দুই মাস পর গত মঙ্গলবার স্ত্রীকে ফোন করে জানান, তিনি বেঁচে আছেন এবং শিলংয়ে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এরপর চার দিন চলে গেছে, শিগগিরই তাঁর দেশে ফেরার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
শিলংয়ের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও আইনজীবীরা মনে করছেন, ইন্টারপোলের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে সালাহ উদ্দিনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতার আশঙ্কা রয়েছে। পাসপোর্ট ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে ‘ফরেনার্স অ্যাক্ট, ১৯৪৬’-এর ১৪ ধারা অনুযায়ী সালাহ উদ্দিন আহমদকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। ওই আইনের ১৪ ধারা অনুযায়ী পাসপোর্ট ছাড়া অনুপ্রবেশের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানার বিধান রয়েছে।
এদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সালাহ উদ্দিন সিঙ্গাপুরে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে দেখা করার পর বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য জানান।
আবদুল লতিফকে সালাহ উদ্দিন আহমদ জানান, বুকের ব্যথার কারণে রাতে তাঁর ভালো ঘুম হচ্ছে না। কিডনিতেও তিনি ব্যথা বোধ করছেন। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি সিঙ্গাপুরে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করছেন। তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমদ শিলংয়ে পৌঁছানোর পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে অনুরোধ জানাবেন। তবে কবে তিনি শিলং আসছেন, এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ভিসা পাননি। ভিসা পেলেই দুই স্বজনকে নিয়ে শিলং যাওয়ার পরিকল্পনা আছে।
গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন আবদুল লতিফ। গত বৃহস্পতিবার তিনি ছাড়াও এক নিকট আত্মীয় আইয়ুব আলী এবং বাংলাদেশের এক ব্যবসায়ী পুলিশি পাহারায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন।
সালাহ উদ্দিনের অনুরোধের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে স্থানীয় এক আইনজীবী দেখা করেছেন। জানা গেছে, মূলত ওই আইনজীবী তাঁর এক জ্যেষ্ঠ সহকর্মীর পক্ষ থেকে সালাহ উদ্দিনের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নেন। তাঁর স্ত্রী শিলং আসার পর আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
পাসপোর্ট ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে সালাহ উদ্দিন আহমদকে আটকের পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। শিলংয়ের পুলিশ সুপার এম খারক্রাং গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্যগত কারণে এখনো তাঁকে সেভাবে জেরা করা হয়নি। তবে কাল পুলিশের বিশেষ শাখার দুই কর্মকর্তা তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে তাঁর কাছ থেকে নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মানবাধিকার আইনজীবী বিশ্বজিৎ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, সালাহ উদ্দিনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা হতে পারে। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশ থেকে মেঘালয়ে অনুপ্রবেশকারীদের মুক্তির জন্য তিনি আদালতে দাঁড়িয়েছেন। এঁদের মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে মো. জিয়াউদ্দিন নামের সুনামগঞ্জের এক তরুণকে মুক্ত করেছেন।
বিশ্বজিৎ বড়ুয়া বলেন, সাধারণত অনুপ্রবেশের মামলা সুরাহা হতে দুই সপ্তাহের বেশি লাগার কথা নয়। তবে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে একাধিক আইনে মামলা হলে বেশি সময় লাগতে পারে। যেহেতু সালাহ উদ্দিন আহমদ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং ইন্টারপোল এ প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে গেছে, তাই বিষয়টির সুরাহা হতে বেশি সময় লাগতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.