কঙ্কালসার ১০০০ উদ্ধার

ওদের এখন বলা হচ্ছে ‘বোট পিপল’। অবৈধ অভিবাসী, শরণার্থী, রাষ্ট্রহীন আর সমুদ্রে ভাসমান মানুষ। এগুলো এখন তাদের পরিচয়। গতকাল ও পরশু এমন ভাগ্যাহত আরও সহস্রাধিক বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু এখনও অনিশ্চয়তা নিয়ে সাগরে ভাসছেন আনুমানিক ৬ থেকে ৮ হাজার। ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে মোট উদ্ধার হয়েছেন ১০৪৩ জন। আপাতত তারা আশ্রয় পেলেও দেশগুলো স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে তাদের মাটিতে স্বাগত নয় শরণার্থীরা। একই বার্তা দিয়েছে মালয়েশিয়া। তীরে ভিড়তে না দিয়ে সাগরে ঠেলে দেয়ার এ নীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। গতকাল ইন্দোনেশিয়ায় উপকূল থেকে তিনটি নৌকায় মোট উদ্ধার হন ৯৩৭ জন বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা। এদিকে বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডের একটি দ্বীপ থেকে আরও ১০৬ জনকে উদ্ধার করা। ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের উপকূলে একটি নৌকা থেকে ৭৯৪ জন বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেন স্থানীয় জেলেরা। এদের মধ্যে ৬১ জন নারী ও ৬১ জন শিশু রয়েছে। খাবার, পানি ছাড়া তারা দিনের পর দিন সাগরে ভাসমান থাকার দরুন প্রত্যেকে ছিলেন দুর্বল ও ক্ষুধার্ত। এ ছাড়া তারা পানিশূন্যতায় ভুগছিলেন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুনারিয়ার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, জেলেরা ডুবতে থাকা নৌকাটি দেখতে পেয়ে তারা উদ্ধার করে ল্যাঙ্কসা গ্রামে নিয়ে আসে। উদ্ধারকৃত কয়েকজন পুলিশকে জানিয়েছেন, তাদেরকে ছেড়ে পালিয়ে যায় পাচারকারীরা। এরপর কয়েকদিন ধরে সাগরে ভাসছেন তারা। মালয়েশিয়ার উপকূলে পৌঁছলে তাদের নৌকাটি ফিরিয়ে দেয়া হয়। এরপর আচেহ উপকূলে ডোবার মুখে নৌকাটি উদ্ধার করে জেলেরা। ল্যাঙ্কসার দক্ষিণে আনুমানিক ২৫ কিলোমিটার দূরে স্থানীয় জেলেরা আরেকটি ছোটি নৌকা উদ্ধার করে। এতে ছিলেন ৪৭ জন রোহিঙ্গা। তাদের শারীরিক অবস্থাও ছিল একই রকম। আচেহ প্রদেশের তামিয়াং জেলার পুলিশ প্রধান ডিকি স্যান্দোনি এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিবেশী উত্তর সুমাত্রা প্রদেশ থেকে সেখানকার জেলেরা তৃতীয় আরেকটি নৌকা উদ্ধার করে। এ নৌকাতে ছিল ৯৬ জন শরণার্থী। ল্যাঙ্কাট জেলার পুলিশের ক্যাপ্টেন সুরোসো জানিয়েছেন তাদেরকে আশ্রয় এবং খাবার দেয়া হয়েছে। এদিকে, থাইল্যান্ডের নৌবাহিনী দেশটির ফ্যাং এনগা প্রদেশের উপকূলবর্তী একটি ছোট দ্বীপ থেকে ১০৬ জনকে উদ্ধার করেছে। এদের মধ্যে ১৫ জন নারী এবং দুই শিশু রয়েছে।
মানবপাচারের ইস্যুতে থাইল্যান্ডের ডাকা সম্মেলনে যোগ দেবে না মিয়ানমার:
গত দু সপ্তাহে মানব পাচার সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ সময়ের ব্যবধানে মিয়ানমারের তরফ থেকে আসা প্রথম আনুষ্ঠানিক মন্তব্যে দেশটি ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে না। আর মানব পাচার ইস্যু নিয়ে থাইল্যান্ড আয়োজিত আঞ্চলিক সম্মেলনের আমন্ত্রণে ‘রোহিঙ্গা’ উল্লেখ থাকলে দেশটি সম্মেলনে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে এক কর্মকর্তা। মিয়ানমারে নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যাত রোহিঙ্গারা কার্যত রাষ্ট্রহীন। দেশটির সরকারের মুখপাত্র ইয়ে হতুত বলেছেন, তাদেরকে শনাক্ত করার আগ পর্যন্ত আমরা বলতে পারবো না যে ওই অভিবাসীরা মিয়ানমারের। তিনি  আরও বলেন, মানব পাচারের শিকার হওয়া বেশিরভাগই দাবি করে তারা মিয়ানমার থেকে গেছেন। এটা তাদের জন্য সহজ আর সুবিধাজনক। ২৯শে মে থাইল্যান্ডের আহ্বানে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনের আমন্ত্রণে ‘রোহিঙ্গা’ উল্লেখ থাকলে অংশ না নেয়ার কথা বলেছেন মেজর জ হ্যতে। বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা নামটাও মিয়ানমারে নিষিদ্ধ। তারা এদেরকে বাঙ্গালী বলে থাকে আর দাবি করে তারা বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসী। অথচ কয়েকপ্রজন্ম ধরে এসব রোহিঙ্গাদের বাস বৌদ্ধ প্রধান এ দেশটিতে।

No comments

Powered by Blogger.