নেপালের ভূমিকম্প অবশ্যম্ভাবী ছিল by কেনেথ চ্যাং

আজ থেকে ২৫ মিলিয়ন বছর আগে ভারতের ভূখণ্ড এশিয়া মহাদেশে আছড়ে পড়ে, তার আগে ভারত দ্রুত অপ​স্রিয়মান শক্ত ভূখণ্ডের ওপর এক পৃথক দ্বীপ ছিল। এই দুটি ল্যান্ড মাসের মধ্যে এখনো সংঘর্ষ হচ্ছে, বছরে দেড় থেকে দুই ইঞ্চি গতিতে এরা ধাক্কা খাচ্ছে। এই শক্তির কারণেই দুনিয়ার সর্বোচ্চ পর্বতমালা হিমালয়ের জন্ম হয়েছে, ভয়াবহ ভূমিকম্পের সৃষ্টি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা কাঠমান্ডুকে এ বিষয়ে অনেক বছর ধরে সতর্ক করে আসছে। টেকটোনিক ও স্থানীয় ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে শনিবারের এই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব ছিল না। নেপালের ভৌগোলিক অবস্থার কারণে কম্পন তীব্র আকার ধারণ করে, আর ভবনগুলোর দুর্বল নির্মাণ প্রকৌশলের কারণে সেগুলো এই কম্পন সহ্য করতে পারেনি।
অলাভজনক সংগঠন জিওহ্যাজার্ড ইন্টারন্যাশনালের পর্যবেক্ষণ অনুসারে, প্রতি ৭৫ বছরে এ অঞ্চলে একটি বড় ভূমিকম্প হয়। ৮১ বছর আগে ১৯৩৪ সালে পূর্ব নেপালে ৮ দশমিক ১ মাত্রার এক মারাত্মক ভূমিকম্পে ১০ হাজার মানুষ মারা যায়, মাউন্ট এভারেস্টের ছয় মাইল দক্ষিণে। ১৯৮৮ সালে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার আরেকটি ছোট ভূমিকম্পে ১০ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়।
জিওহ্যাজার্ডের সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান টাকার বলেছেন, তাঁদের সংগঠন ১৯৯০ সালে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে ১৯৩৪ সালের ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তি হবে। নগরায়ণের কারণে বিপুলসংখ্যক মানুষ শহরবাসী হওয়ায় এবং ভবনের নির্মাণ প্রকৌশল দুর্বল হওয়ায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষ তাতে মারা যাবে।
এ মাসের হালনাগাদ খবরে জিওহ্যাজার্ড বলেছে, ‘কাঠমান্ডু শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব দুনিয়ায় সর্বোচ্চ, এই শহরের বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এর ফলে এই শহরের ১৫ লাখ মানুষ ভূমিকম্পের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’
শনিবারের ভূমিকম্প কাঠমান্ডুর উত্তর পশ্চিমে তুলনামূলকভাবে মাটির অগভীর অংশে, নয় মাইল গভীরে, সংগঠিত হয়েছে। ফলে কম্পনের তীব্রতা বেশি ছিল। কিন্তু এর মাত্রা ৭ দশমিক ৮ হওয়ায় ১৯৩৪ সালের ভূমিকম্পের চেয়ে কম শক্তি নির্গত হয়েছে।
কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্বের অধ্যাপক রজার বিলহ্যাম দক্ষিণ এশিয়ার ভূমিকম্প নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, কম্পনের স্থায়িত্ব ছিল ১ থেকে ২ মিনিট। এতে চ্যুতিটি কাঠমান্ডুর নিচে অবস্থিত ফাটলের মধ্যে আরও ১০ ফুট সরে গেছে, যে ফাটলের দৈর্ঘ্য ৭৫ মাইল।
নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন

No comments

Powered by Blogger.