শান্তি মিশনে পুলিশ পাঠাচ্ছে ভুয়া এসপি! by নূরুজ্জামান

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশ পাঠিয়েছে ভুয়া পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে অন্তত তিনজন পুলিশ সদস্য পাঠানোর কথা স্বীকার করেছে সে।
বর্তমানে ওই ভুয়া পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে। শনিবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমীর সামনে থেকে সে গ্রেপ্তার হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ডিএমপি সদর দপ্তরে পিবিআই শাখায় কর্মরত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নাম ভাঙিয়ে ওই প্রতারক বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠানোর কথা বলে তাদের কয়েকজনের কাছ থেকে টাকাও নিয়েছে। এখন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসাদুজ্জামান জানায়, ওয়ান-ইলেভেনের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উপ-সচিবের মাধ্যমে তিনজন কনস্টেবল পাঠিয়েছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে। বিনিময়ে ওই কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের ভাগ নিয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা- ভুয়া এই পুলিশ সুপারের সঙ্গে পুলিশের আসল কর্মকর্তাদের যোগাযোগ থাকতে পারে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তারা। সম্প্রতি একই প্রলোভন দেখিয়ে রাজধানীর কোতোয়ালি থানার একজন এসআই ও একজন এএসআই-এর কাছ থেকে প্রায় তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ছাড়া পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট শাখার কনস্টেবল জাকিরুলের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়েছে। তার কাছে পরিচয় দিয়েছে এডিশনাল এসপি আসাদুজ্জামান বলে। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামানের মোবাইল ফোন নম্বরও সরবরাহ করেছে। পরে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি থানায় মামলা করেছেন। মামলার বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন, গত ৯ই জানুয়ারি শেরেবাংলা নগর থানাধীন বাণিজ্যমেলায় অন্যান্য অফিসারের সঙ্গে ডিউটি করছিলাম। এ সময় জনৈক আসাদুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পরিচয় দেয়। বলে, সে ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত। পুলিশের জাতিসংঘ মিশনে বদলি ও পদোন্নতিতে তার হাত আছে। যে কোন প্রয়োজনে তাকে যেন বলি। এক পর্যায়ে সে তার ব্যবহৃত ব্যক্তিগত ফোন নম্বর দেয়। ওই নম্বরে যোগাযোগ করতে বলে। পরে তার নম্বরে যোগাযোগ করে বিভিন্ন জায়গায় দেখা করি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠানোর প্রস্তাব করলে সে বলে, প্রসেসিং ফি হিসেবে দেড় লাখ টাকা লাগবে। তাকে বিশ্বাস করে গত ১৬ই জানুয়ারি এক লাখ টাকা দিই। পরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে তার স্ত্রীর কাছে বাকি ৫০ হাজার টাকা দিতে বলে। তার কথামতো ২০শে জানুয়ারি শেরেবাংলা নগর বাণিজ্যমেলার ভেতরে তার উপস্থিতিতে তার স্ত্রীর কাছে আরও ৫০ হাজার টাকা দিই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন)-কে টাকা দিতে হবে জানিয়ে আরও এক লাখ টাকা দাবি করে। তখন আমি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সে আমাকে চাকরিচ্যুত ও ঢাকা থেকে বিতাড়িত করার হুমকি দেয়। তখন তার কথা-বার্তায় সন্দেহ হয়। পুলিশের পিবিআই শাখায় তার খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারি সে একজন প্রতারক। সূত্রমতে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশ পাঠানোর জন্য প্রথমেই পুলিশ সদর দপ্তরের ইউএন ডেস্ক থেকে একটি তালিকা পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে অনুমোদনের পর ফের পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। এরপর তাদের নামে জিও লেটার জারি হয়।

No comments

Powered by Blogger.