জি-৮ সম্মেলনে সিরীয় সংঘাতের কালো ছায়া

উত্তর আয়ারল্যান্ডে জি-৮ সম্মেলনে আগত জোটভুক্ত দেশগুলোর
নেতাদের মুখোশ পরে গতকাল বিক্ষোভে নেমেছেন আইএফ-
ক্যাম্পেইন নামের একটি গ্রুপের কর্মীরা। তাঁদের দাবি,
কর ফাঁকি রোধ করতে হবে
সিরিয়ার সংঘাত এবং তার পরিণতিতে সৃষ্ট মানবিক সংকট সমাধানের বিষয়ে মতবিরোধ শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের ওপর কালো ছায়া ফেলেছে। যুক্তরাজ্যের উত্তর আয়ারল্যান্ডের অবকাশকেন্দ্র লক আর্নে গতকাল সোমবার দুই দিনের এই শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে। স্বাগতিক দেশ যুক্তরাজ্য অবশ্য এবারের শীর্ষ সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে যে তিনটি বিষয় বৈশ্বিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠাকে প্রাধান্য দিচ্ছে, সেগুলো হলো বাণিজ্য, কর ও স্বচ্ছতা। ইংরেজিতে এই বিষয়গুলোর প্রতিটির আদ্যক্ষর ‘টি’ (ট্রেড, ট্যাক্স ও ট্রান্সপারেন্সি) হওয়ায় এই সম্মেলনকে ‘থ্রি টি’র সম্মেলন বলে অভিহিত করা হচ্ছে। বাণিজ্যক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপের অবাধ বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরুর বিষয়টিকে সম্মেলনে সমর্থন দেওয়া হতে পারে। বিভিন্ন বহুজাতিক ও বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর জন্য যেসব কৌশল অনুসরণ করে থাকে, সেগুলো বন্ধে এসব দেশের করনীতির ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধনের বিষয়টিও বিশেষভাবে প্রাধান্য পাচ্ছে। আর স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে মূলত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে দারিদ্র্য দূরীকরণে যেসব উন্নয়ন সহায়তা দেওয়া হয়, সেগুলোতে দুর্নীতি বন্ধে স্বচ্ছতা বাড়ানোর বিষয়ে সমঝোতা প্রতিষ্ঠা। তবে সম্মেলনের প্রাক্কালে লন্ডনের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় বিশ্বনেতাদের ওপর ব্রিটিশ গুপ্তচরবৃত্তির তথ্য ফাঁস হওয়ায় এই শীর্ষ বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একধরনের অস্বস্তির আশঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষকেরা। গতকাল প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চার বছর আগে জি-টোয়েন্টির শীর্ষ সম্মেলনের সময় ব্রিটিশ গোয়েন্দারা বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের টেলিফোন এবং ই-মেইল যোগাযোগে আড়ি পেতেছিলেন। মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে একইভাবে বিশ্বব্যাপী টেলিফোন ও ইন্টারনেটে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নজরদারির তথ্য ফাঁস হয়েছে। এর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অপর কয়েকটি রাষ্ট্র প্রকাশ্যেই তাঁদের অস্বস্তির কথা জানায়। সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় স্থানীয় সময় বিকেল পৌনে চারটায় (বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে নয়টায়)। শীর্ষ সম্মেলনে গতকালের আলোচ্যসূচি ছিল বিশ্ব অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রসঙ্গ। আর আজ আলোচিত হবে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও কর সমন্বয়। জি-৮-এর সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোঁয়া ওলাঁদ, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল, ইতালির প্রধানমন্ত্রী এনরিকো লেটা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। তবে সম্মেলনে যে বিষয়টি সবকিছুকে ছাপিয়ে যেতে পারে, তা হলো সিরিয়ার বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহের প্রশ্ন। প্রেসিডেন্ট ওবামা ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরোধী বিদ্রোহীদের অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহের কথা ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনও আসাদবিরোধীদের অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করার পক্ষে। কিন্তু রোববার প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রকাশ্যেই আসাদবিরোধীদের অস্ত্রসজ্জিত করার বিরোধিতা করেন এবং আসাদ সরকারের প্রতি রাশিয়ার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। উত্তর আয়ারল্যান্ডের কাউন্টি ফারমানার হ্রদবেষ্টিত অবকাশকেন্দ্র লক আর্নে এই সম্মেলনস্থলের চারপাশে প্রায় চার মাইল দূরে নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। সম্ভাব্য বিক্ষোভ ও হাঙ্গামার আশঙ্কায় নিকটস্থ এক পরিত্যক্ত সামরিক ঘাঁটিতে ১৬০টি ঘর বানানো হয়েছে, যেখানে গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের আটকে রাখা যাবে। কাউন্টি ফারমানার ছোট শহর এনিস্কিলেনে হাজার দুয়েক বিক্ষোভকারী বিক্ষোভ করতে পারে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.