ন্যাটোর কাছ থেকে নিরাপত্তার দায়িত্ব নিল আফগানবাহিনী

ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন বাহিনীর কাছ থেকে গতকাল মঙ্গলবার গোটা আফগানিস্তানের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। এর মধ্য দিয়ে ২০১১ সালে শুরু হওয়া দেশটির নিরাপত্তা হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলো।
রাজধানী কাবুলের বাইরে একটি সেনা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে গতকাল ন্যাটো বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির অবশিষ্ট ৯৫টি এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব আফগান বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। অনুষ্ঠানে আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই বলেন, ‘সারা দেশের নিরাপত্তার সব দায়িত্বভার এখন থেকে আমাদের সাহসী বাহিনীর ওপর ন্যস্ত হলো। সব ধরনের অভিযানে আফগান বাহিনী অংশ নেবে ও এখন নেতৃত্ব দেবে। দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আফগান সেনা ও পুলিশ পুরোপুরি প্রস্তুত।’ কারজাই বলেন, তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসতে ২০১০ সালে গঠিত শান্তি উদ্যোগ-বিষয়ক পরিষদ শিগগিরই কাতারে যাবে। তিনি বলেন, ‘এ প্রক্রিয়া দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আশা করি, আমার তালেবান ভাইয়েরা বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবেন।’ অনুষ্ঠানে ন্যাটোর প্রধান অ্যান্ডার্স রাসমুসেন বলেন, ‘২০১১ সালে শুরু হওয়া পাঁচ দফায় নিরাপত্তার দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া আজ (গতকাল) সম্পন্ন হলো। ১০ বছর আগে আফগানিস্তানে জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী বলে কিছু ছিল না। কিন্তু এখন সাড়ে তিন লাখ আফগান সেনা ও পুলিশ রয়েছে। আজ থেকে আমরা আর কোনো অভিযানের পরিকল্পনা কিংবা নেতৃত্ব দেব না।’ ন্যাটোর প্রধান বলেন, ২০১৪ সালের শেষ দিকে আফগানিস্তানে সব বিদেশি সেনা প্রত্যাহার করা হবে। এ সময়ের মধ্যে প্রয়োজনে আফগান বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া হবে। ন্যাটোর প্রায় এক লাখ সেনা আফগান বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে যাবে বলে জানা গেছে। ২০০১ সালের ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আফগানিস্তানে অভিযান চালিয়ে কট্টরপন্থী তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এর পর থেকে তালেবান হারানো ক্ষমতা ফিরে পেতে লড়াই চালিয়ে আসছে। আর তাদের প্রতিহত করতে লড়ছিল ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন বাহিনী। আফগানিস্তানে ২০১১ সালে ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহায়তা বাহিনীর (ইসাফ) সবচেয়ে বেশিসংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হয়। তখন তাদের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে এক লাখ এক হাজারই মার্কিন সেনা। দেশটিতে বর্তমানে ইসাফের ৯৭ হাজার সেনা রয়েছে। নিরাপত্তা হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আগে কাবুলে এক আত্মঘাতী হামলায় তিনজন নিহত হয়। সংখ্যালঘু হাজারা সম্প্রদায়ের নেতা ও সাংসদ মোহাম্মদ মোহাকিকের গাড়িবহর লক্ষ্য করে ওই হামলা চালানো হয়। হামলায় তিনি সামান্য আহত হয়েছেন। কাবুলের তদন্ত পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ জহির বলেন, ওই হামলায় তিনজন বেসামরিক লোক নিহত ও  সাংসদের নিরাপত্তারক্ষীসহ অন্তত ২৪ জন আহত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে কাবুলে জঙ্গি হামলা বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে কাবুলে সুপ্রিম কোর্টের বাইরে গাড়িবোমা হামলায় ১৫ জন আফগান নিহত হয়। ন্যাটো বাহিনী চলে যাওয়ার পর আফগান বাহিনী তালেবানের হামলা কতটা প্রতিহত করতে পারবে, এ নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে। গত শুক্রবার ন্যাটো বাহিনীর মার্কিন কমান্ডার জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ড বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘গত ১২ বছরে যে সাফল্য আমরা লাভ করেছি, ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার পর আন্তর্জাতিক সহায়তা বন্ধ করে দিলে তা বিনষ্ট হবে।’ বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.