২৬০ মার্কিন কূটনীতিককে ওয়াশিংটনে জরুরি তলব

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের জরুরি তলব পেয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ২৬০টি দূতাবাস ও কনস্যুলেটে দায়িত্বরত কূটনীতিকেরা ওয়াশিংটনে জড়ো হয়েছেন। গত সোমবার ১৮০টি দেশে নিযুক্ত মার্কিন এই কূটনীতিকেরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আজ বুধবার আবারও বৈঠক হবে। সেখানে ২৬০ মার্কিন দূতের সবাই হাজির থাকবেন বলে কথা রয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কূটনীতিকদের নিয়ে এ ধরনের বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বৈঠকের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ২০১১ সালের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে হিলারি ক্লিনটন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। লক্ষ্য অর্জনে সবাইকে সতর্ক করা এ বৈঠকের অন্যতম উদ্দেশ্য। বিশ্লেষকেরা বলেছেন, উইকিলিকসের মার্কিন নথি ফাঁস করে দেওয়া, মিসরসহ মধ্যপ্রাচ্যের চলমান অস্থিরতা, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কার্যক্রম এবং পাকিস্তান ও আফগানিস্তান পরিস্থিতি সামাল দেওয়াসহ নানা বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে হিলারি মতবিনিময় করতে চান। এ ছাড়া তাঁদের নানা বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়াও এ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেশির ভাগ কূটনীতিককে পুরো সপ্তাহ ওয়াশিংটনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার যে বৈঠক হবে তাতে মার্কিন কূটনীতিকদের উদ্দেশে হিলারির ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া প্রধান প্রধান দেশে নিযুক্ত মার্কিন কূটনীতিকদের সঙ্গে তিনি মুখোমুখি বৈঠক করবেন বলেও কথা রয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলেছেন, উইকিলিকসের হস্তগত নথি ধীরে ধীরে প্রকাশিত হওয়ায় তথ্য ফাঁসে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতির মাত্রা এখনো নিরূপণ করা যাচ্ছে না। তবে ইতিমধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই বড় ধরনের ক্ষতি স্পষ্ট হয়েছে। কয়েক দিন আগে লিবিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেনে ক্রেৎজ ত্রিপোলি থেকে ওয়াশিংটনে ফিরে এসেছেন। উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্যে লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মোয়াম্মার গাদ্দাফি সম্পর্কে ওই রাষ্ট্রদূত বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন বলে লিবিয়া সরকার অভিযোগ করার পর তাঁকে ওয়াশিংটনে ফিরিয়ে আনা হয়।
মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করছেন বিশ্বের অন্যান্য দেশে নিযুক্ত অনেক মার্কিন কূটনীতিকও এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। এসব বিষয় ওই বৈঠকে গুরুত্ব পেতে পারে।
বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, ইরানে ইসলামি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সে দেশে যে ইসলামি প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, মিসরে ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে যুক্তরাষ্ট্রকে তার জন্য দোষারোপ করা হতে পারে। এ বিষয়টিও মার্কিন প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত সপ্তাহান্তে হিলারি ক্লিনটন এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র মিসরে ‘সত্যিকারের গণতন্ত্র’ দেখতে চায়। সেখানে ছয় মাস বা এক বছরের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আবার স্বৈরশাসন চালু হোক, যুক্তরাষ্ট্র তা চায় না। এ অবস্থায় মিসরে আবার অগণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

No comments

Powered by Blogger.