মিসরে বিক্ষোভ দমনে সেনা অভিযানের হুমকি সরকারের

মিসরে প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভকারীদের দমনে সেনা অভিযান চালানো হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে দেশটির সরকার। সেনাসদস্যরা ইতিমধ্যে বিক্ষোভকারীদের আটক ও নির্যাতন শুরু করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
প্রেসিডেন্ট মোবারকবিরোধী বিক্ষোভ দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। গত বুধবার মিসরের সর্বদক্ষিণের অঞ্চল খাগড়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালান। এতে পাঁচজন নিহত ও ১০০ জন আহত হন। প্রেসিডেন্ট মোবারকের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবারও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল।
এদিকে মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ আবুল ঘেইত বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ বন্ধ না হলে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করবে। তিনি মিসরে শিগগিরই রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানের কঠোর সমালোচনা করেন।
কায়রোর তাহরির স্কয়ারে প্রেসিডেন্ট মোবারকবিরোধী হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে। মোবারকের পদত্যাগ ছাড়া ঘরে না ফেরার দাবিতে অনড় রয়েছে তারা। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট সদস্যদের পদত্যাগের দাবিতে তাহরির স্কয়ার থেকে পার্লামেন্ট ভবন পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করে। সরকারবিরোধীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবকেরা তাহরির স্কয়ারে তাঁবু টানিয়েছেন ও শৌচাগার তৈরি করেছেন, স্থাপন করেছেন মুঠোফোন চার্জার স্টেশনও। গতকালের বিক্ষোভে পোশাকশ্রমিক ও চিকিৎসকেরা যোগ দেন।
যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকার প্রতিবেদনে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও আন্দোলনকারীর বরাত দিয়ে জানানো হয়, সেনাসদস্যরা শত শত বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছেন। তাদের কারও কারও ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে।
ইজিপশিয়ান ইনিশিয়েটিভ ফর পারসোনাল রাইটস ইন কায়রোর পরিচালক হোসসাম বাঘাত অভিযোগ করেন, সেনাসদস্যরা অনেক বিক্ষোভকারীকে আটক করেছেন। কাউকে কোনো কারণে সন্দেহ হলেই তাকে আটক করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীদের এভাবে আটক করা একেবারেই অস্বাভাবিক। আর সেনাসদস্যরা নজিরবিহীন সেই কাজটিই করছেন। নির্যাতিত এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, তিনি প্রেসিডেন্ট মোবারকের সমর্থকদের হামলায় আহতদের জন্য ওষুধসামগ্রী নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সেনাসদস্যরা তাঁকে আটক করে একটি কক্ষে নিয়ে যান। সেনাসদস্যরা তাঁকে লাথি মারতে থাকেন এবং বেয়নেট দিয়ে আঘাত করেন।
আল-আরাবিয়া টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘেইত বলেন, যদি বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে, তাহলে সামরিক বাহিনী হস্তক্ষেপ করবে। তা দেশের জন্য আরও বিপজ্জনক হবে।
জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া ও মিসরে রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানের সমালোচনা করেন ঘেইত। তিনি একে মিসরের ওপর ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়া’ বলে আখ্যা দেন।
এদিকে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিসরের পরিস্থিতি নিয়ে সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, দুই নেতার মধ্যে মিসরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
দ্য টাইমস-এর খবরে বলা হয়েছে, বাদশাহ আবদুল্লাহ প্রেসিডেন্ট ওবামাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র মিসরে সহায়তা কর্মসূচি বন্ধ করে দিলে সৌদি আরব প্রেসিডেন্ট মোবারককে সহায়তা করবে। বাদশাহ আবদুল্লাহ মিসরের প্রেসিডেন্ট মোবারককে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করতেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.