স্বাধীনতাযুদ্ধের 'বিস্মৃত' কূটনৈতিক মুক্তিযোদ্ধারা by সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী

জ মহান বিজয় দিবস। আজ থেকে ৩৯ বছর আগে বাঙালি জাতি সশস্ত্র যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিল। বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহ্বানে দেশের সব পেশার জনগণ এ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। সেনাবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকরা রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছিলেন। একইভাবে আমাদের শিল্পী, প্রশাসক, শিক্ষক, এমনকি বিদেশে কর্মরত বাঙালি কূটনীতিকরা এ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান। তাঁদের অবদান সারা দেশ, সারা জাতি স্মরণ করবে। সুখের কথা, মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কয়েকজন সম্মানিত হয়েছেন,
পদক পেয়েছেন। কারো কারো নামে সড়ক বা ভবন উৎসর্গিত হয়েছে। তবে একটা দলের বিরাট অবদান সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হয়েছে, তাঁরা হচ্ছেন আমাদের মুক্তিযোদ্ধা কূটনীতিক।
সাধারণত কূটনীতিকরা যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়েন না। 'শীতল যুদ্ধ' বা অধুনা 'বলকান যুদ্ধে'ও নগণ্যসংখ্যক কূটনীতিক 'ডিফেকশন' বা দলত্যাগ করেছেন। কিন্তু হাজার মাইল দূরে বসেও আমাদের স্বল্পসংখ্যক কূটনীতিক পাকিস্তান সরকার ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন ও কূটনৈতিক ফ্রন্টে পাকিস্তানিদের মোকাবিলা করেন। তাঁদের কোনো নিরাপত্তার অভাব বিদেশে ছিল না_তবুও তাঁরা এগিয়ে আসেন ও স্বেচ্ছায় ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধে নামেন। তাঁরা ভালো করেই জানতেন, দখলদার বাহিনী যেকোনো সময় তাদের দেশে থাকা মা-বাবা, ভাইবোনদের ওপর অত্যাচার করতে পারে_মেরেও ফেলতে পারে। তবুও তাঁরা সংকল্পবদ্ধ ছিলেন।
আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে আমাদের কূটনীতিকদের একযোগে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ বিরাট চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে ও সেসব দেশের প্রশাসনের ওপর বিরাট চাপও সৃষ্টি করে। অন্যদিকে তাঁদের এ কৃতী আমাদের যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করে।
এটা ঠিক, বেশির ভাগ বাঙালি কূটনীতিক এ ধরনের সাহসী পদক্ষেপ নেননি। কিন্তু যাঁরা নিয়েছিলেন তাঁরা আমাদের দেশের গৌরব। তাঁদের মূল্যায়ন ও যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করা প্রয়োজন।
একমাত্র ভারত ও তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতারা আমাদের ন্যায্য অধিকার আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন। নিঙ্ন প্রশাসন আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে তাঁদের শীতল যুদ্ধের পরিমণ্ডলে বিচার করেছেন। তখন তাঁরা ইসলামাবাদের সাহায্যে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে ব্যস্ত ছিলেন, যাতে মস্কোকে কোণঠাসা করা যায়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশে যে গণহত্যা চলছিল, তাকে তাঁরা সম্পূর্ণ অবহেলা করেছেন। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর সরকাররা আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকলেও মার্কিনিদের সরাসরি বিরোধিতা করার সাহস দেখাননি। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন, যার সঙ্গে পাকিস্তানের সুসম্পর্ক স্থাপনের জন্য বাঙালিরাই নেতৃত্ব দেয়, তারাও সমর্থন দেয়নি। তারা তাদের মিত্রদেশ পাকিস্তানের 'ভাঙন' আটকাতে চেয়েছিল। আরব বিশ্ব 'সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র' পাকিস্তানের ভাগ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা মানতে চায়নি, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার ভারত ও ভুটান ছাড়া বাকি রাষ্ট্রগুলোও আমাদের সমর্থন দেয়নি।
এ রকম জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ও কূটনৈতিক ফ্রন্টে যুদ্ধ চালানোর প্রস্তুতি নিতে আমাদের মুজিবনগর সরকারের কিছুটা সময় লাগে। বিদেশে মিশন চালানোর খরচ বহনের জন্য বৈদেশিক অর্থের ব্যবস্থা করতে হয়।
আমাদের কূটনৈতিক অঙ্গনে যুদ্ধ চালানোর লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনকে সঠিকভাবে তুলে ধরা, যাতে বিদেশি রাষ্ট্রনায়করা আমাদের সমর্থনে এগিয়ে আসেন। নব্য স্বাধীন এশিয়ার ও আফ্রিকার দেশগুলো ভাবত, আমাদের সমর্থন করলে তাদের দেশেও বিচ্ছিন্নতা আন্দোলন সচল হবে ও তাদের রাষ্ট্র-সংহতি বিপন্ন হবে। অন্যদিকে যেহেতু পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে রেষারেষি ছিল, অনেকেই ভাবতেন, আমাদের আন্দোলন হয়তোবা এই দ্বিপক্ষীয় স্নায়ুযুদ্ধের ফসল। এ ছাড়া অনেকের দৃঢ় সন্দেহ ছিল, বায়াফ্রা যুদ্ধের মতো আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ব্যর্থ হবে। পাকিস্তানের কিছু সহযোগী বিহারিদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল। মোদ্দা কথা, সহানুভূতি থাকলেও সমর্থনের ব্যাপারে অনেক দ্বিধা ছিল। এসব দেশের সঙ্গে আলাপ করা এবং তাদের বিভিন্ন সন্দেহ ও দ্বিধার সদুত্তর দেওয়া আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল।
দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল, আমাদের জনগণের ওপর যে গণহত্যা চলছিল, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছিল, তা তুলে ধরা এবং পাকিস্তানে সব সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ করা। তৃতীয়ত, যেসব সহানুভূতিশীল দেশ ছিল, তাদের সমর্থন বজায় রাখা ও স্বীকৃতি দিতে উৎসাহী করা।
বাংলাদেশ সরকার গঠনের আগে যে দুজন কূটনীতিক বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য প্রদর্শন করেন, তাঁরা হচ্ছেন নয়াদিলি্লস্থ পাকিস্তানের হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব কে এম সাহাবউদ্দিন ও সহকারী প্রেস অ্যাটাশে আমজাদুল হক। তাঁরা এ ঘোষণা দিলেন এপ্রিল মাসে। নভেম্বরে কাউন্সিলর হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ও তাঁর স্টাফরাও আনুগত্য প্রকাশ করেন। কিন্তু ভারতে আমাদের কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু ছিল কলকাতায়। ১৮ এপ্রিল '৭১ অর্থাৎ সরকার গঠনের এক দিন পর কলকাতাস্থ পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার মোহাম্মদ হোসেন আলী এবং সব বাঙালি কূটনীতিক ও স্টাফ একযোগে বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য জানান। রাতারাতি সেখানে স্থাপিত হলো বাংলাদেশ মিশন। পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা ওঠালেন হোসেন আলী। তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। অন্য কর্মকর্তা যাঁরা তাঁকে সহযোগিতা করেন তাঁরা হলেন_প্রথম সচিব রফিকুল ইসলাম, তৃতীয় সচিবদ্বয় আনোয়ারুল করীম চৌধুরী ও কাজী নজরুল ইসলাম এবং সহকারী প্রেসসচিব মকসুদ আলী।
যুক্তরাজ্যে আমাদের দেশি লোক সবচেয়ে বেশি বসবাস করত। অত্যন্ত স্বাভাবিক কারণে সেখানে আমাদের প্রবাসীরা স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন। কিন্তু লন্ডনের পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত বাঙালি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাদের সংগ্রামে যোগ দেননি। যিনি নেতৃত্ব দিলেন, তিনি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। জেনেভায় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য হিসেবে মিটিং করার পর লন্ডনে ফিরে এপ্রিল মাসেই ঘোষণা দিলেন। তাঁকে মুজিবনগর সরকার 'অ্যাম্বাসাডর অ্যাট লজ' হিসেবে নিয়োগ দিল। দূতাবাসের প্রথম যে কূটনীতিক বের হয়ে এলেন, তিনি দ্বিতীয় সচিব মহিউদ্দীন আহমেদ। বাংলাদেশ মিশন প্রতিষ্ঠিত হলো ২৭ আগস্ট। আরো তিন কূটনীতিক হাবিবুর রহমান, লুৎফুল মতিন ও ফজলুল হক চৌধুরী বাংলাদেশ মিশনে যোগ দিলেন। পরে সিনিয়র কূটনীতিক কাউন্সিলর রেজাউল করীম মিশনে যোগ দিলেন।
কিন্তু ভারতের বাইরে সবচেয়ে বড় দলবেঁধে 'ডিফেকশন' হয় ওয়াশিংটন ডিসিতে। সেখানে একযোগে ১৪ জন কূটনীতিক ও স্টাফ একসঙ্গে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করলেন ৪ আগস্ট, ১৯৭১। দলের নেতৃত্ব দেন সৈয়দ আনোয়ারুল করীম, জাতিসংঘে পাকিস্তানের উপপ্রধান প্রতিনিধি ও মিনিস্টার। দলে ছিলেন এনায়েত করীম, মিনিস্টার, ওয়াশিংটনস্থ পাকিস্তানের উপ-মিশন প্রধান। কাউন্সিলর শাহ এ এম এস কিবরিয়া, অর্থনৈতিক কাউন্সিলর আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষাবিষয়ক কাউন্সিলর সৈয়দ আবু রশীদ মতীন উদ্দীন, দ্বিতীয় সচিব (হিসাব বিভাগ) আতাউর রহমান চৌধুরী ও তৃতীয় সচিব (রাজনৈতিক) সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। তিনজন স্থানীয়ভিত্তিক কর্মকর্তা শরফুল আলম, শেখ রুস্তম আলী ও আবদুর রাজ্জাক খান।
এনায়েত করীম দ্বিতীয়বার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ছিলেন সিসিইউতে। তাঁকে বারবার বলা হয়, রোগমুক্তির পর যেকোনো সময় আমাদের মিশনে যোগ দিতে পারবেন। কিন্তু তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিলেন, 'মরতে হলে বাঙালি হিসেবে মরব_পাকিস্তানি হিসেবে নয়।' তাঁর পক্ষে তাঁর স্ত্রী হোসনে আরা করীম ওয়াশিংটনে প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন।
ওয়াশিংটনে এত বড় ধরনের 'ডিফেকশন' ইতিপূর্বে এবং পরেও কখনো হয়নি। কাজেই সারা দেশে ও আন্তর্জাতিক মণ্ডলে বিরাট চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলো। নিঙ্ন প্রশাসন পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছিল। আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল সিনেটর ও কংগ্রেসম্যানরা পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য না দেওয়ার সচেষ্ট ভূমিকা নেওয়া শুরু করলেন। হাউসে 'গালাগার অ্যামেন্ডমেন্ট' পাস হলো। একইভাবে সিনেটে 'সেঙ্বি চার্চ অ্যামেন্ডমেন্ট' পাস হলো। দুই কক্ষের পাস করা অ্যামেন্ডমেন্টের একই লক্ষ্য_রাজনৈতিক সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত সামরিক ও বেসামরিক মার্কিন সাহায্য বন্ধ রাখতে হবে।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ মিশন স্থাপন করা হলো। মিশনপ্রধান হিসেবে মুজিবনগর সরকার সংসদ সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিককে পাঠাল।
নিউইয়র্কে সৈয়দ আনোয়ারুল করীম ও ভাইস কনসাল মাহমুদ আলীকে নিয়ে মিশন গঠিত হলো। রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে সবচেয়ে প্রথম আনুগত্য স্বীকার করেন বাগদাদস্থ পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আবুল ফাতেহ, পরে ম্যানিলাস্থ রাষ্ট্রদূত খুররম খান পন্নী ও আর্জেন্টিনাস্থ রাষ্ট্রদূত আবদুল মোমেন। তাঁদের বিশেষ অবদান ভোলার নয়। তাঁরা বিভিন্ন দেশ সফর করে আমাদের পক্ষে বিশ্বজনমত সৃষ্টি করেছেন।
অন্য কূটনীতিকদের মধ্যে কায়রোস্থ দ্বিতীয় সচিব ফজলুল করীম, লাগোসস্থ তৃতীয় সচিব মহীউদ্দিন জায়গীরদার, তিউনিসস্থ তৃতীয় সচিব সৈয়দ আমীরুল ইসলাম বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে লন্ডন মিশনে যোগদান করেন।
পরে নেপালস্থ দ্বিতীয় সচিব মুস্তাফিজুর রহমান, জাপানস্থ প্রেস কাউন্সিলর এস এম মাসুদ ও তৃতীয় সচিব কমর রহীম, হংকংস্থ ভারপ্রাপ্ত বাণিজ্য মিশনপ্রধান মহিউদ্দিন আহমেদ ও সুইজারল্যান্ডস্থ ওয়ালিউর রহমান যোগ দেন। তাঁদের নিজ নিজ রাজধানীতে মিশন খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে একটা প্রতিনিধিদল পাঠায়, যার নেতৃত্ব দেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। আমাদের প্রতিনিধিদল বিভিন্ন দেশের দলের সঙ্গে ব্যাপক লবিং করে। যখন ডিসেম্বরের গোড়ায় যুদ্ধ শুরু হলো, বিচারপতি চৌধুরী বিশেষ তৎপরতার সঙ্গে নিউইয়র্কে এলেন ও ভাষণ দেওয়ার অনুমতি চাইলেন। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদ জাতিসংঘের সদস্য না হওয়ায় তাঁকে সেই সুযোগ দিতে পারেনি। নিরাপত্তা পরিষদে পশ্চিমা দেশগুলো যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ও ভারত-পাকিস্তানের সৈন্যদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত নিজ নিজ সীমান্তে ফিরে যাওয়ার জন্য পর পর তিনবার প্রচেষ্টা নেয়। কিন্তু আমাদের পরম হিতৈষী সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের ভেটো দিয়ে বন্ধ করে। কারণ এ প্রস্তাবগুলো আমাদের রাজনৈতিক সমস্যাকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়েছিল।
পাকিস্তানকে 'নতুন জীবন' দিতে ব্যর্থ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সপ্তম বহর আমাদের সমুদ্রসীমায় পাঠায় ও চীনকে উত্তর ভারতে আক্রমণ চালাতে বলে, যাতে ভারতকে ভয় দেখিয়ে নিবৃত্ত করা যায়। সোভিয়েত তাদের নৌতরী পাঠায়।
চরম উত্তেজনাময় মুহূর্তের মধ্য দিয়ে সময় বয়ে যায়। পশ্চিমাদের আশা ছিল যদি যুদ্ধ এক মাস পাকিস্তান চালাতে পারে, তাহলে যুদ্ধবিরতির জন্য আবারও প্রচেষ্টা নেওয়া হবে এবং জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশন সীমান্তে মোতায়েন করা হবে। তাদের ইচ্ছা পূরণ হয়নি, আমাদের মিত্র বাহিনীর আচমকা প্রচণ্ড আঘাতে পাকিস্তানিরা ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে আত্মসমর্পণ করে। বাংলাদেশ মুক্ত হয়। দেশ মুক্ত হওয়ার মাত্র ছয় মাসের মধ্যে বড় বড় দেশ আমাদের স্বীকৃতি দেয় এবং ব্যাপক সাহায্য ও সহযোগিতার জন্য হাত বাড়ায়।
কূটনীতিক মুক্তিযোদ্ধারা সবাই অবসর নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে যে সিনিয়র কূটনীতিকরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁদের অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু তাঁদের অসামান্য কৃতিত্ব ও অবদান স্মরণ করে সম্মান দেখানো হয়নি। একমাত্র তদানীন্তন পররাষ্ট্রসচিব কিবরিয়ার তৎপরতার কারণে এনায়েত করীমকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয় ১৯৮০ সালে। গত চার দশকে আমাদের কোনো মুক্তিযোদ্ধা কূটনীতিককে কোনো সম্মান দেখানো বা পদকে ভূষিত করা হয়নি। এ ব্যাপারে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। যদি আমরা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা কূটনীতিকদের সম্মান না দিই, তবে আজকের নবীন কূটনীতিকদের কিভাবে দেশপ্রেমী হতে উদ্বুদ্ধ করতে পারব। কিভাবে তাদের অনুপ্রাণিত করব? সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে হলে অতীতকে জানতে হবে।
=====================
আতঙ্কে শেয়ারবাজার বন্ধঃ বিক্ষোভ  আতঙ্কের রাজত্ব কায়েম হয়েছে  মানবকল্যাণ আমাদের মন্ত্র  ট্রানজিট নিয়ে সবে গবেষণা শুরু  ভারতের একতরফা সেচ প্রকল্পঃ বাংলাদেশের আপত্তিতে বিশ্বব্যাংকের সাড়া  আমলাদের যাচ্ছেতাই বিদেশ সফর  সরকারের ব্যর্থতায় হতাশাঃ বিরোধী দলের ব্যর্থতায় বিকল্পের অনুপস্থিতি  ক্ষমতা ও গণতন্ত্র  পানি সংকট পানি বাণিজ্য  ২০১০ সালের অর্থনীতি কেমন গেল  গণতান্ত্রিক বিকাশের পথে বাধা অনেক  কপাটে তালা দিয়ে কেন এই মৃতু্যর আয়োজন  বিজয়ের অর্থনীতি ও সম্ভাবনা  মুক্তিযুদ্ধের বিজয়লক্ষ্মীর মুখোমুখি  একেই কি বলে আমলাতন্ত্র?  আত্মসমর্পণের সেই বিকেল  আমরা তাঁদের ভুলতে পারি না  সংবিধানের অনেক বক্তব্য পারস্পরিক সংঘাতমূলক  পরাশক্তির বিরুদ্ধে এক ‘ভবঘুরের’ স্পর্ধা  আবু সাঈদ চৌধুরীর ভাষণ দেওয়া হলো না  শুভ নববর্ষ ২০১১- দিনে দিনে বর্ষ হলো গত  এরশাদের বিচারে দুই দলেরই আগ্রহ কম  কিশোরদের সাদামাটা ফল  জিপিএ-৫ পেয়েছে আট হাজার ৫২ জন  এরশাদের বিচার হওয়া উচিত  ছোটদের বড় সাফল্য  প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাঃ পাস ৯২%, প্রথম বিভাগ বেশি  বাংলাদেশের বন্ধুঃ জুলিয়ান ফ্রান্সিস  নিষ্ফল উদ্ধার অভিযানঃ দখলচক্রে ২৭ খাল  জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  ভ টিজিং : জরুরি ভিত্তিতে যা করণীয়  প্রতিশ্রুতির দিন  শোকের মাস, বিজয়ের মাস  চীনা প্রধানমন্ত্রীর পাক-ভারত সফর  দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীন মন্তব্য  নতুন প্রজন্ম ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা  খিলক্ষেতে আগুনঃ কয়েলের গুদামে রাতে কাজ হতো ঝুঁকিপূর্ণভাবে  ভারতে বিহার রাজ্যের নির্বাচন  স্বপ্ন সত্যি হওয়ার পথে  আমাদের আকাশ থেকে নক্ষত্র কেড়ে নিয়েছিল যারা...


দৈনিক কালের কন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও মুক্তিযোদ্ধা কূটনীতিক

এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.